স্টাফ রিপোর্টার: বাংলার মেহুলির পর আইজলের ভারোত্তোলক জেরেমি লালরিননুঙ্গা। রুপোর পর সোনা। না চমকের এখানেই শেষ নয়। যুব ওলিম্পিকে শুটিং এল ইভেন্টেও সোনা। সোনার পদকপ্রাপ্তি হরিয়ানার মানু ভাকেরের।
বুয়েনস আইরেসে যুব অলিম্পিকের আসরে মেহুলির রুপো জয়ের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সাফল্যের ছবিটা যায় বদলে। বিশ্বকে চমকে দিয়ে ১৫ বছরেই ইতিহাসে নাম তুলল জেরেমি লালরিননঙ্গা ও ১৬ বছরের মানু ভাকের। অলিম্পিকের আসরে ভারতীয় অ্যাথলিটরা এর আগে সোনা জেতেননি। সে যুব বা সিনিয়র, যে স্তরেই হোক না কেন। জেরেমি নিজের ইভেন্টে ৬২ কেজি বিভাগে ২৭৪ কেজি ওজন তুলতেই সোনা জয় নিশ্চিত করে। তার সঙ্গে লড়াই ছিল তুরস্কের তোপতাস ক্যানেরের। প্রথম জার্কে তোলে ১২৪ কেজি। পরেরটায় ১৫০ কেজি। মোট ২৭৪ কেজি। অন্যদিকে তোপতাস তোলে ২৬৩ কেজি। আর শুটার মানু ভাকের সোনা নিশ্চিত করে ২৩৬.৫ পয়েন্ট করে। এই সোনা জয়ের সঙ্গে চলতি যুব অলিম্পিকে পাঁচটি পদক জিতল ভারত। এর আগে তুষার মানে, মেহুলি ঘোষ, থাংজাম তাবাইদেবীও পদক জিতেছেন।
[আই লিগে পঞ্চম বিদেশি চূড়ান্ত, মোহনবাগানে আসছেন সালাহর দেশের ফুটবলার]
আইজলের জেরেমি ২৬ অক্টোবর ১৬ বছরে পা দেবে। তার আগেই এক অনন্য নজির তার পকেটে। কিন্তু বয়স কম হলে কী হবে, তিনি বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলে দিয়েছে। এবারের যুব ও জুনিয়র এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে জিতেছে রুপো ও ব্রোঞ্জ। জাতীয় রেকর্ডও ভেঙেছে। তাই জেরেমিকে নিয়ে ভারতীয় ভারোত্তোলনের কর্তারা স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন। তারই প্রতিফলন আর্জেন্টিনার মাটিতে। ইতিহাস সৃষ্টিকারী জেরেমির মেন্টর বা প্রথম কোচ বাবা লালমাইথুয়াবা। লালরিন সোনা জয়ের পর বলছিল, “আমার বাবা ভাল বক্সার ছিলেন। কিন্তু তাড়াতাড়ি সংসারে জড়িয়ে পড়ায় বেশি দূর যেতে পারেননি। তবে বাবা আমাকে এবং আমার ভাইদের বরাবর বক্সিংয়ে উৎসাহ দিয়েছেন।” তবে ভারোত্তোলনে আসার পর আর বক্সিং তাকে টানেনি। লালরিন জানাল, “আমার বয়স যখন ছয়, তখন ভারোত্তোলনে আগ্রহ জন্মায়।” তবে পুণের আর্মি স্পোটর্স ইনস্টিটিউটে যাওয়ার আগে প্রথাগত ভারোত্তোলন শিক্ষা পায়নি জেরেমি। আসলে সিনিয়র লালরিন ১৯৯২ থেকে ‘৯৫ পর্যন্ত জাতীয় বক্সিংয়ে টানা সোনা জিতেছেন। তাই বাবা চেয়েছিলেন, তাঁর পাঁচ ছেলে যেন তাঁর মতোই জাতীয় পর্যায়ে লড়াইয়ে নামে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তৃতীয় সন্তান জেরেমি বাদে কেউ খেলাধুলোর জগতে আসেনি। লালরিনের সোনা জয়ে উচ্ছ্বসিত কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী রাজ্যবর্ধন সিং রাঠোর জানিয়েছেন, অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছে লালরিননুঙ্গা।
[যুব অলিম্পিকে ইতিহাস, সোনা জিতল ১৫ বছরের মিজো কিশোর]
তবে লালরিননুঙ্গার মতো নয় মানু ভাকের। ভারতীয় ক্রীড়াক্ষেত্রে পরিচিত নাম। যুব অলিম্পিকের আগে ওয়ার্ল্ড কাপ ও কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জিতেছিল। এবার যুব অলিম্পিকের ১০ মিটার পিস্তল ইভেন্টে দেশকে প্রথম সোনা এনে দিল সে। যুব ওলিম্পিকের আগে ইন্দোনেশিয়ায় এশিয়ান গেমস ও ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে ভাল কিছু করে দেখাতে পারেনি মানু। তাই এই মঞ্চে কী করেন তা দেখার অপেক্ষায় ছিল প্রত্যেকে। এই প্রতিযোগিতায় মানু শুরু থেকেই ছন্দে ছিল। যোগ্যতা অর্জন পর্ব সহজেই পার করে। একটা সময় রাশিয়ার এনিনার সঙ্গে তাঁর লড়াই জমে উঠেছিল। পরিস্থিতি এমন একটা জায়গায় পৌঁছায়, যেখান থেকে যে কেউ চ্যাম্পিয়ন হতে পারতেন। মানু সুযোগ হাতছাড়া করেনি। মেয়ের সাফল্যে খুশি বাবা। তবে তিনি উচ্ছ্বসিত নন। রামকিশান ভাকের বলছিলেন, “এশিয়াড ও ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে ও খারাপ করেনি। কিন্তু সাফল্য আসছিল না। দিল্লিতে ও চুটিয়ে অনুশীলন করত। অনেক কিছু ত্যাগ করেছে। বাড়িতে আসতে পারত না। শেষমেশ ও সাফল্য পেয়েছে। এটা ওর আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।”
The post যুব অলিম্পিকে জোড়া সোনা, জেরেমির পর ইতিহাস গড়লেন মানু appeared first on Sangbad Pratidin.