সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা শুধু একটি ধর্মীয় গ্রন্থ নয়। এটি জীবন ও কর্মের এক গভীর যোগ দর্শন। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, আমাদের জন্ম তারিখ, নক্ষত্র এবং রাশি যে কারও ব্যক্তিত্ব ও ভাগ্যের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করে। এই কারণে জ্যোতিষীরা মনে করেন, প্রতিটি মানুষের মানসিক চাহিদা এবং কর্মের প্রকৃতি আলাদা। জন্মছকের এই বিশেষত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গীতার নির্দিষ্ট কিছু অধ্যায় পাঠ করলে জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। একই সঙ্গে জীবন সুখের হয়। এই পাঠ শুধু আধ্যাত্মিক নয়, মনস্তাত্ত্বিক উন্নতির জন্যও খুব কার্যকরী।
জন্মছকের ১২টি ভাব (বা ঘর) জীবনের বিভিন্ন দিক (যেমন—সম্পর্ক, স্বাস্থ্য, কর্ম, অর্থ প্রভৃতি) নিয়ন্ত্রণ করে। যদি কোনও ভাবে দুর্বল গ্রহের অবস্থান থাকে বা কোনও সমস্যার সৃষ্টি হয়, তখন সেই ভাবের সঙ্গে সম্পর্কিত গীতার অধ্যায় পাঠ করলে সেই দুর্বলতা দূর হয়। গীতার ১৮টি অধ্যায়কে মোট তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম ষটকে কর্মযোগ। কর্মের প্রতি আসক্তি দূর করা, মানসিক স্থায়িত্ব আনা। তম ও রজ গুণের ভারসাম্য রক্ষা করা। শনি ও মঙ্গল গ্রহের দুর্বলতা দূর করতে সহায়ক এই পর্ব। দ্বিতীয় ষটকে ভক্তিযোগ। ঈশ্বর বা পরমাত্মার প্রতি বিশ্বাস ও নির্ভরতা বাড়ানো। মনকে শান্ত করা। চন্দ্র ও বৃহস্পতির শক্তি বৃদ্ধি করা এই পর্বের মূল উদ্দেশ্য। তৃতীয় ষটকে জ্ঞানযোগ। আত্মজ্ঞান লাভ ও মোক্ষ প্রাপ্তি। অহংকার দূর করা। সূর্য ও বুধ গ্রহের ইতিবাচক প্রভাব বাড়াতে সহায়ক এই পর্ব।
অনেকের মতে, জন্ম নক্ষত্রের দেবতা এবং তার প্রকৃতি অনুযায়ী গীতার অধ্যায় নির্বাচন করা হয়। যেমন—মৃগশিরা নক্ষত্রের জাতকরা জ্ঞান ও অনুসন্ধানের দিকে বেশি ঝোঁকেন, তাই তাঁদের জ্ঞানযোগের অংশ (অধ্যায় ১৩-১৮) পাঠ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। আপনার জন্ম লগ্ন ও তার অধিপতি গ্রহের শক্তি বাড়াতে তার সঙ্গে সম্পর্কিত অধ্যায় বা শ্লোক নিয়মিত পাঠ করতে হবে।
জন্ম তারিখ, সময় ও স্থান দিয়ে সম্পূর্ণ জন্ম ছক তৈরি হয়। জন্মকালীন গ্রহের অবস্থান, কোন ভাব দুর্বল বা কোন গ্রহের কারণে সমস্যা রয়েছে, তা নির্ধারণ করা জরুরি। গীতার কোন অংশটি আপনি পড়বেন তা কিন্তু আপনার জন্ম তারিখ মিলিয়ে একমাত্র জ্যোতিষী সঠিক ভাবে নির্ধারণ করে দেবেন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে নিষ্ঠার সঙ্গে গীতার সেই বিশেষ অধ্যায় বা শ্লোকগুলি পাঠ করতে হবে। মনে রাখবেন, কেবল পাঠ করাই যথেষ্ট নয়। সেই উপদেশগুলিকে জীবনে প্রয়োগ করাই আসল উদ্দেশ্য। এই পাঠের ফলে মন শান্ত হয়, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ে এবং জীবনের পথে সঠিক দিশা খুঁজে পাওয়া সম্ভব। গীতার এই পাঠ আপনার জীবনকে সমস্ত বাধা বিপত্তি থেকে মুক্তি দিয়ে এক নতুন পথের সন্ধান দেবে।
