সব্যসাচী বাগচী: ভারতীয় ফুটবল (Indian Football) মহলে তিনি ‘মিজো স্নাইপার’ নামে খ্যাত। ইস্টবেঙ্গল (East Bengal), মোহনবাগান (Mohun Bagan) দুই প্রধান খেলা এহেন জেজে লালপেখলুয়া (Jeje Lalpekhlua) অনেকটা সময় জাতীয় দলে দাপটের সঙ্গে খেলেছেন। তবে এবার তাঁর লড়াই আরও কঠিন। কারণ ৯০ মিনিটের যুদ্ধকে বিদায় জানানো জেজে এবার রাজনীতির মাঠে নেমে পড়েছেন। এবং প্রথম সুযোগেই করেছেন বাজিমাত। প্রথমবার ভোটে লড়েই বিধায়ক। তাও বিধানসভা নির্বাচনে। মিজোরামের সাউথ টুইপুই (South Tuipui) বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জোরাম পিপলস পার্টির (ZPM) টিকিটে ভোটে জিতেছেন। জয়ের পর সংবাদ প্রতিদিন.ইন-কে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন জেজে।
প্রশ্ন) ভোটে জেতার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর কেমন অনুভূতি হচ্ছে?
জেজে) চিন্তামুক্ত হলাম। ভীষণ টেনশনে ছিলাম। ফুটবল আর রাজনীতিতে কোনও তফাৎ নেই। ওখানেও ম্যাচের আগে একটা টেনশন হত। তবে মাঠে নামার সময় সেই টেনশন ভুলে যেতাম। এখানেও একটা টেনশন কাজ করছিল। মানুষ ভরসা রেখেছে। তাই মানুষের ভরসার দাম দিতে চাই। মিজোরামে অনেক সমস্যা। কতটা সমাধান করতে পারব জানা নেই। তবে চেষ্টার ত্রুটি রাখব না। এতটা গ্যারান্টি দিতে পারি বিরোধীরাও আমার কাজের প্রশংসা করবে।
প্রশ্ন) রাজনীতিকেই কেন বেছে নিলেন? পরিবারের কেউ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত?
জেজে) রাজনীতিতে আসার আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিল না। পরিবারের কেউ কোনওদিন রাজনীতিতে পা রাখেনি। কয়েক বছর আগে গ্রামে একবার একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখি কত মানুষ অভুক্ত। একদিন কাজ না করলে তাদের খাবার জোটে না। ওদের দেখেই রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত নিই। ওই অভুক্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমাদের দল জোরাম পিপলস মুভমেন্ট বেকারত্ব ঘোচাতে চায়। সাধারণ মানুষের জন্য লড়তে চায়। তাদের জন্য কাজ করতে চাই। সবাই নিজেদের দল নিয়ে ভাবে। কিন্তু জেপিএম মানুষের কথা ভাবে।
প্রশ্ন) রাজনীতির মঞ্চে আপনার ‘আইডল’ কে?
জেজে) লালডুহোমা। একটা সময় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলানো প্রাক্তন আইপিএস লালডুহোমা হতে চলেছেন মিজোরামের নতুন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায় উদ্বুদ্ধ হয়েই রাজনীতিতে এসেছি। যখন ফুটবলার ছিলাম, তখন থেকে মাঝেমধ্যে কথা হত। উৎসাহ দিতেন বরাবর। ওঁর ব্যক্তিত্বে বরাবরই মুগ্ধ হই। দীর্ঘদিন ধরে মিজোরামের মানুষের কথা ভাবছেন লোকটি। তাই অবসর নেওয়ার পর যখন নিজেদের লোকের জন্য কাজ করতে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ডাক উনি দিলেন, তা আর ফেলতে পারিনি। এই মুহূর্তে মিজোরামের মানুষের ওঁর মতোই কোনও নেতার দরকার।
প্রশ্ন) ফুটবলে গোল মিস করলে সমালোচনা হয়। যদিও সেটা ক্ষণস্থায়ী। তবে রাজনীতিতে কিন্তু আপনাকে সবসময় বিপক্ষের গোলাগুলি হজম করতে হবে। আপনি প্রস্তুত?
জেজে) হ্যাঁ সব জেনেই তো আমি এই রাজনীতির মাঠে নেমেছি। এখানে পার্সোনাল অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে। সবকিছুর জন্য আমি তৈরি। ফুটবলেও তো অনেক চাপ নিয়েছি। এবারও চাপের মধ্যেই কাজ করতে হবে। আমি জানি আমার গ্রামের জন্য, জেলার জন্য কোন কোন কাজ আগে করতে হবে।
প্রশ্ন) মিজোরামে বেকারত্ব, দারিদ্রের সমস্যা রয়েছে। সঙ্গে খাবার, জলের অভাব। এই সমস্যাগুলো কি কোনওভাবে রাজনীতির প্রতি আপনার আগ্রহ বাড়িয়েছিল?
জেজে) আমাদের রাজ্যে বেকারত্ব একটা সমস্যা। এরমধ্যে প্রায় ৬০% মানুষ কৃষক। তাই মিজোরামের উন্নতির জন্য সবার আগে কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে হবে। না হলে আমাদের রাজ্যের উন্নতি কোনওদিন সম্ভব নয়।
[আরও পড়ুন: ‘মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ’, মিজোরাম নির্বাচনে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে হারালেন প্রাক্তন মোহনবাগানি জেজে]
প্রশ্ন) মিজোরামের সবচেয়ে বড় সমস্যা কোনটা?
জেজে) সবচেয়ে বড় সমস্যা হল দুর্নীতি। আমাদের সমাজের প্রতিটা স্তরে দুর্নীতি ছেয়ে গিয়েছে। এই দুর্নীতি দূর করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রশ্ন) রাজনীতি-ফুটবলের মধ্যে তফাৎ কতটা? বিধায়ক হিসেবে কী লক্ষ্য?
জেজে) একেবারে নতুন রকম চ্যালেঞ্জের সামনে। দুটো ক্ষেত্র পুরো আলাদা। তবে মানুষ আমার প্রতি আস্থা রেখেছেন, সমাজ ও বাসিন্দাদের কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই ভোটে লড়তে নেমেছিলাম। ফুটবলার হিসেবেও যাত্রা শুরু এখানেই, এবার কিছু ফিরিয়ে দিতে চাই। আমার মানুষদের জন্য, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কিছু করতে চাই। সত্যি বলতে আমার মতে ফুটবল আর রাজনীতিতে খুব একটা তফাৎ নেই। রাজনীতিতে চাপ নিয়ে কাজ করতে হয়। ফুটবলেও তো দারুণ চাপ নিয়েই মাঠে নামতাম। দেশ হোক বা ক্লাব, মাঠে নামলে প্রত্যাশার চাপ থাকতই, গোল করতে না পারলে তো সমালোচনা শুনতেই হত। রাজনীতির ক্ষেত্রেও কি খুব তফাৎ রয়েছে ? এখানেও তো মানুষের প্রত্যাশাপূরণ করার কাজেই নামব। সবটা দিয়েই যে কাজটা করতে চাই।
প্রশ্ন) বাইচুং ভুটিয়া, ইউজেনসন লিংডো, সোমাতাই সাইজা। এমনকি এআইএফএফ-এর বর্তমান সভাপতি কল্যাণ চৌবে, দীপেন্দু বিশ্বাস, রহিম নবির পর ফুটবলার হিসাবে আপনার নামও জুড়ে গেল। কেমন অনুভূতি হচ্ছে?
জেজে) আলাদা ভালোলাগা তো আছেই। আমরা ফুটবলাররা মানসিকভাবে খুবই শক্তিশালী। সেই মানসিকতা এবার রাজনীতিতেও কাজে লাগাতে চাই। বাইচুং ভাই, ইউজেনসনরা নিজেদের মতো কাজ করেছে। আমাকেও এই মঞ্চে নিজের সেরা পারফরম্যান্স করতে হবে।
প্রশ্ন) মন্ত্রীত্বর ব্যাপারে আপনার সঙ্গে হাই কমান্ডের মধ্যে আলোচনা হয়েছে?
জেজে) আমার সঙ্গে এই মন্ত্রীত্ব নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। আর তাছাড়া মন্ত্রীত্ব না পেলেও আমার কিছু যায় আসে না। সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে হলে মন্ত্রীত্বের দরকার পড়ে না।
প্রশ্ন) ফুটবল অ্যাকাডেমি কি চালিয়ে যাবেন?
জেজে) অবশ্যই। ফুটবল ছেড়ে দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। ফুটবলের জন্যই তো জেজে-কে গোটা দেশ চেনে। এই খেলার জন্যই মিজোরামের সাধারণ মানুষ ভোটে আমাকে জিতিয়েছে।