অর্ণব আইচ: ভুয়া সংস্থা বানিয়ে সারা দেশজুড়ে ১৩ কোটি টাকার জালিয়াতির অভিযোগ। এর পর কলকাতার একটি ঋণ প্রদানকারী সংস্থা থেকে ২৫ লাখ টাকা হাতানোর পর পুলিশের জালে ধরা পড়লেন বাবা ও ছেলে। গত আড়াই মাসে এক সঙ্গীর সঙ্গে ৮৭০ বার ফোনে বাবা ও ছেলে কথা বলেছিলেন। সেই সূত্র ধরেই ফাঁদ পেতে নয়ডা থেকে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করলেন কলকাতার বউবাজার থানার আধিকারিকরা।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত বাবার নাম নরেন্দ্র বনশাল ও তাঁর ছেলে ঋষভ বনশাল। ২০১১ সাল থেকে তাঁরা এই ব্যাঙ্ক জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত। দেশের বিভিন্ন রাজ্য ও শহরের ব্যাঙ্কগুলিকে টার্গেট করতেন ছেলে ঋষভ। এর জন্য দু’জন মিলে প্রচুর ভুয়া সংস্থা তৈরি করেন। একেকটি সংস্থার নাম নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের ব্যাঙ্ক ও ঋণ প্রদানকারী সংস্থায় গিয়ে ভুয়া প্রকল্প তুলে ধরেন। সেই প্রকল্পের ভিত্তিতে ঋণ নেন। আবার কখনও বা ব্যবসার উন্নতির নাম করেও ঋণ নিতেন বাবা ও ছেলে। পুলিশের দাবি, এভাবে গত ২০১১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত টানা দশ বছর ধরে ৩১টি ব্যাঙ্ক ও ঋণ প্রদানকারী সংস্থা থেকে ১৩ কোটি ১৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা ঋণ নেন নরেন্দ্র ও তাঁর ছেলে ঋষভ। মূলত ঋষভই ঋণ নিতেন। তাঁর বাবা হতেন গ্যারান্টার। কিন্তু ঋণ নিয়ে কয়েকটি কিস্তি মেটানোর পর তাঁরা উধাও হয়ে যেতেন। ভুয়া সংস্থা দেখে তাঁদের সন্ধানও মিলত না। দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের হয়।
[আরও পড়ুন: বৃষ্টিতে ছাদ চুঁইয়ে জল, টর্চ জ্বেলে রামলালার আরতি! বেহাল দশায় রামমন্দির বন্ধ হওয়ার জোগাড়]
২০২১ সালে একই পদ্ধতিতে নরেন্দ্র ও ঋষভ ব্যবসার কারণ দেখিয়ে মধ্য কলকাতার বউবাজারের একটি সংস্থা থেকে ২৫ লাখ টাকা ঋণ নেন। পাঁচটি কিস্তি মেটানোর পরই উধাও হয়ে যান তাঁরা। সংস্থার পক্ষে তাঁদের সন্ধান না মেলায় বউবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। ঘন ঘন সিমকার্ড পাল্টাতে থাকেন অভিযুক্তরা। ক্রমাগত তদন্ত চালিয়ে ঋষভের একটি মোবাইল নম্বরের সন্ধান পান পুলিশ আধিকারিকরা। জানতে পারেন, ওই সিমকার্ড থেকে প্রবীণ কুমার নামে এক পরিচিতর সঙ্গে আড়াই মাসে ৮৭০ বার কথা বলেছেন ঋষভ।
সেই সূত্র ধরে পুলিশ দিল্লিতে গিয়ে ওই ব্যক্তির সন্ধান পান। ওই ব্যক্তি যে নয়ডায় ঋষভদের বাড়ি চেনেন ও সেখানে যে তাঁর যাতায়াত রয়েছে, পুলিশ তা জানতে পারে। পুলিশ ওই ব্যক্তির পিছু নেন। গত শনিবার তিনি ঋষভদের বাড়িতে যান। ঋষভকে বাড়ি থেকে বের হতে দেখেন দূরে ছদ্মবেশে থাকা পুলিশ আধিকারিকরা। এর পর হাতেনাতে ঋষভকে ধরে ফেলা হয়। তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে মোবাইল ও ২৪টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথি উদ্ধার করে পুলিশ। বাড়ি থেকে ঋষভ ও তাঁর বাবা নরেন্দ্রকে গ্রেপ্তার করে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ধৃতদের জেরা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।