সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অঙ্কের হিসেবে এক বছর চার মাস পনেরো দিন৷ টানা এতটা সময় কারাগারের অন্ধকারে থাকার পর মুক্তি পেলেন মায়ানমারে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার দুই সাংবাদিক৷ দেশে রোহিঙ্গা সংকটের সময় মায়ানমার প্রশাসনের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করায় তাদের গ্রেপ্তার করে জেল পুরে দেওয়া হয়৷ আদালত তাঁদের ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল৷ কিন্তু উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাঁদের হয়ে জোরদার সওয়াল করায়, শেষমেশ আইনি লড়াইয়ে জিতে মুক্তি পেয়েছেন ২ তরুণ সাংবাদিক৷
[আরও পড়ুন : জ্বালানির ট্যাঙ্কে আগুন, রুশ বিমান দুর্ঘটনার নেপথ্যে বজ্রাঘাত]
সালটা ২০১৭৷ মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সেনাবাহিনীর অত্যাচারে জর্জরিত সেখানকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়৷ চলছে নৃশংস হত্যালীলা৷ এর পিছনে সংখ্যাগুরু বৌদ্ধদের ইন্ধন থাকার অভিযোগে সরব হয় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলি৷ রাখাইন থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিতাড়ন পর্ব শুরু৷ দেশের একটা অঞ্চলের এমন পরিস্থিতি, যেখানে কাঠগড়ায় সেনাবাহিনী, সেখানে প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ না নিয়ে হাত গুটিয়ে বসে ছিল৷ এই অভিযোগ ওঠায় প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত দেশের প্রেসিডেন্ট সু কি পরিচালিত সরকার৷
[আরও পড়ুন : ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞার জের, ভারতকে সস্তায় তেল দিতে নারাজ আমেরিকা]
এমনই এক সংকটের মুহূর্তে তদন্তমূলক সাংবাদিকতার কাজে নেমেছিলেন বছর তেত্রিশের ওয়া লোন এবং ২৯ বছরের কাইয়া সোই ও৷ তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন, তা আন্তর্জাতিক স্তরে বহুল প্রশংসিত হয়েছিল৷ দু’জনকে সাংবাদিকতা বিভাগে পুলিৎজার পুরস্কার দেওয়া হয়৷ আর এসবের জেরেই তাদের কারারুদ্ধ করা হয়৷ টানা ৫০০দিন এভাবেই ছিলেন ওয়া লোন, কাইয়া সোই ও৷ এর মাঝে তাঁদের মুক্তির দাবিতে সরব হয় বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন৷ তদন্তমূলক, সত্যান্বেষী সংবাদ পরিবেশন করে তাঁরা কোনও অপরাধ করেননি, এই যুক্তিতে কারামুক্তির দাবি ওঠে৷ লড়াইয়ে নামে দু’জনের পরিবারও৷ স্বামীরা অপরাধ করেননি, এই সত্যে বিশ্বাস রেখেও প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠি লিখে ক্ষমা প্রার্থনা করেন দুজনের স্ত্রী৷ দুই সাংবাদিককে ছেড়ে দেওয়ার আরজি জানানো হয়৷
আইনি যুদ্ধে দফায় দফায় দুই সাংবাদিকের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয় ইয়াঙ্গন হাই কোর্ট৷ চলতি বছরের জানুয়ারি, এপ্রিলেও খারিজ হয়ে যায় আবেদন৷ কিন্তু দু’জনের বিরুদ্ধে অপরাধের যথাযথ প্রমাণ জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে৷ শেষপর্যন্ত সেই প্রমাণের অভাবেই মুক্তি পান ওয়া লোন, কাইয়া সোই ও৷ তবে এই ঘটনাই প্রমাণ,সংবাদমাধ্যমের পায়ে বেড়ি পরানোর চেষ্টা থেকে মোটেই পিছিয়ে নেই মায়ানমার৷
The post রোহিঙ্গা নিধন নিয়ে অন্তর্তদন্ত, ৫০০দিন পর কারামুক্ত ২ সাংবাদিক appeared first on Sangbad Pratidin.