স্টাফ রিপোর্টার: নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে গৃহশিক্ষকতায় যুক্ত স্কুল শিক্ষকদের নিয়ে কড়া অবস্থান জারি রাখল রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর (Department of Education)। তদন্তের নির্দেশ দিল গৃহশিক্ষকতা করার অভিযোগে অভিযুক্ত ৪৩টি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের স্কুলের প্রায় দু’শো শিক্ষকের বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলির নাম তো বটেই, গৃহশিক্ষকতায় যুক্ত প্রত্যেক শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শিক্ষা দপ্তরের তরফে। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে গৃহশিক্ষকতা করার অভিযোগ খতিয়ে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষকদেরই।
অবৈধভাবে স্কুল শিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতা বন্ধ করতে বহুদিন ধরেই আন্দোলন করছে সর্বভারতীয় গৃহশিক্ষক সংগঠন। স্কুল শিক্ষা দপ্তর, সমগ্র শিক্ষা মিশন, জেলাগুলির বিদ্যালয় পরিদর্শকের দপ্তরে গৃহশিক্ষকতা করা স্কুল শিক্ষকদের নামের তালিকাও জমা দিয়েছে এই সংগঠন। জুলাই মাসে এরকমই একটি তালিকা বারাকপুরের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে জমা করেছিল গৃহশিক্ষকদের এই সংগঠন। তার ভিত্তিতেই দমদম, বিরাটি, নিমতা, সোদপুর, বারাকপুর, বরানগর, বেলঘরিয়া, সিঁথি, হালিশহর, দক্ষিণেশ্বর-সহ বিভিন্ন জায়গার ৪৩টি স্কুলের ১৯৫ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক। সর্বভারতীয় গৃহশিক্ষক সংগঠনের অভিযোগের ভিত্তিতেই যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তার স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে নির্দেশিকায়। গত বৃহস্পতিবার উত্তর দিনাজপুরের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকদের তরফেও জেলার সব সার্কেল ইন্সপেক্টরের কাছে গৃহশিক্ষকতা (Private Tutor) করার অভিযোগ ওঠা শিক্ষকদের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে। ওই সকল শিক্ষক গৃহশিক্ষকতা বন্ধের নির্দেশ লঙ্ঘন করে গৃহশিক্ষকতা চালিয়ে গেলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের তরফে।
[আরও পড়ুন: ‘তদন্তে অসহযোগিতা করিনি’, যাদবপুরের ফ্ল্যাটের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাবি মানিকের]
এই প্রথম নয়। চলতি বছর জুন মাস থেকেই শিক্ষার অধিকার আইন ও রাজ্য সরকারের নির্দেশিকাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গৃহশিক্ষকতা করা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান গ্রহণ করে শিক্ষা দপ্তর। স্কুল শিক্ষকরা গৃহশিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। জুনেই এই মর্মে নির্দেশিকা জারি করেছিল শিক্ষা দপ্তর। ওই মাসেই গৃহশিক্ষকতা করার অভিযোগে অভিযুক্ত ৫ জেলার ৬১ জন প্রাথমিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল বিকাশ ভবন। এবার তদন্তের আওতায় এলেন আরও প্রায় দু’শো শিক্ষক।
[আরও পড়ুন: মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন নিয়োগে ‘দুর্নীতি’, ফরেনসিককে দিয়ে উত্তরপত্র পরীক্ষার নির্দেশ হাই কোর্টের]
শিক্ষা দপ্ত্রের এই পদক্ষেপে খুশি সর্বভারতীয় গৃহশিক্ষক সংগঠনও। সংগঠনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সোহম ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘যেহেতু গৃহশিক্ষকতা পেশাটা গৃহশিক্ষকদের, তাই ওঁরা যেন আমাদের পেশায় অনুপ্রবেশ না করেন। তা নিশ্চিত করতে গৃহশিক্ষকতার অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিক শিক্ষা দপ্তর। আমরা এটাই চাই। যাতে আমরা আমাদের জীবিকাটা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারি।’’ সোহমবাবু জানাচ্ছেন, তাঁরা বিকাশ ভবনে সারা রাজ্যের ৬৩৮ জন শিক্ষকের নামের তালিকা জমা করেছেন। রাজ্যজুড়েই এই বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশাবাদী তিনি। স্কুল শিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতার বিরুদ্ধে শিক্ষা দপ্তরের কড়া অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী সমিতির প্রধান উপদেষ্টা মনোজ চক্রবর্তী।