সতেরোর এজলাসে ছিল রায়ের ঘনঘটা। রায়ের অভিপ্রায়ে কাঠগড়ায় কেউ পেয়েছেন বিচার, কেউ মুক্তি, কারওবা কপালে জুটেছে শুধুই সাজা। বিচারের কিছু বাণী আবার ঠাঁই পেয়েছে ইতিহাসের পাতায়। বাছাই করা সেরকমই কিছু রায়ের কথা রাখা রইলো বিদায়বেলার খেরোর খাতায়। সৌজন্যে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল।
গোধরা কাণ্ডে বেকসুর খালাস ২৮ অভিযুক্ত এবং ১১ দোষীর মৃত্যুদণ্ড রদ গুজরাট হাই কোর্টে
২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গোধরা স্টেশনে সবরমতি এক্সপ্রেসে আগুন জ্বালিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান ৫৯ জন করসেবক। তার জেরে সমস্ত গুজরাটে ছড়িয়ে পরে হিংসা। ঠিক তার পরের দিন গান্ধীনগরের পালিয়াদ গ্রামে জ্বলে ওঠে সাম্প্রদায়িক হিংসার আগুন। আক্রান্ত হয় বহু সংখ্যালঘু পরিবার। সেই গুলবার্গ সোসাইটি মামলার শুনানি হয় ৩১ জানুয়ারি। তবে পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে গোধরা কাণ্ডের ২৮ জন অভিযুক্তকে বেকসুর খালাসের নির্দেশ দেন গান্ধীনগর কোর্টের বিচারপতি বিডি প্যাটেল। এরপর অক্টোবর মাসে গোধরা কাণ্ডের অপর একটি মামলায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা রদ করে যাবজ্জীবনের রায় ঘোষণা করে আদালত। যদিও বাকি ২০ জন দোষীর সাজা বহাল রাখা হয়। এছাড়াও নিহতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশও দেয় হাই কোর্ট। বিচারপতি এ এস দাভে ও বিচারপতি জি আর উধওয়ানির ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দেয়। উল্লেখ্য, গোধরা মামলার শুনানি শেষ হয়েছিল দু’বছর আগেই। ২০১১ সালে ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত ৬৩ জনকে নির্দোষ ঘোষণা করে বিশেষ সিট আদালত। দোষী সাব্যস্ত করা হয় ৩১ জনকে।
নারদ কাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে গেল তদন্তভার
মার্চ মাসের ১৭ তারিখে নারদ কাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ রায় দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। ওদিনই নারদ কাণ্ডের তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। কলকাতা হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশিথা মাত্রে এবং তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দেয়। রায় ঘোষণার সময় ভারপ্রাপ্ত বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ মন্তব্য করে, সমাজের পক্ষে বড়ধরনের ক্ষতি এই দুর্নীতি। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ক্ষুব্ধ আদালত জানায়, পুলিশ সঠিক কাজ করেনি এই মামলায়। সেই সঙ্গে ডিভিশন বেঞ্চ আরও জানায়, সেন্ট্রাল ফরেনসিক ল্যাবের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভিডিও ফুটেজ বিকৃত করা হয়নি। ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে রাজ্যের শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের। সুতরাং নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে নারদ কাণ্ডের তদন্ত করা উচিত। এর পাশাপাশি অভিযুক্ত পুলিশকর্তা এসএম মির্জার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের সুপারিশ করেছে বেঞ্চ। সিবিআইকে নির্দেশ দেওয়া হয়, প্রাথমিক তদন্তের পর প্রয়োজনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করতে পারে সিবিআই। এরপরই তদন্ত শুরু করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। বেশ কয়েকজনকে ডেকে জেরাও করেন সিবিআইয়ের আধিকারিকরা।
বিলকিস বানো হত্যা মামলায় দোষী ১১ জনের যাবজ্জীবন বহাল রাখল আদালত
৪ মার্চ ২০১৭, ফের একটি বড় রায় দিল আদালত। বিলকিস বানো গণধর্ষণ মামলায় ১১ জনের যাবজ্জীবনই বহাল রাখল বম্বে হাই কোর্ট৷ বিলকিস গণধর্ষণ কাণ্ডে কাউকে মৃত্যুদণ্ড দিতে রাজি হয়নি বিচারপতি ভি কে তাহিলরামানি ও মৃদুলা ভাস্করের ডিভিশন বেঞ্চ৷ অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে গণধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে ২০০৮ সালে ১২ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল বিশেষ আদালত৷ যার মধ্যে একজনের ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে৷ তাদের যাবজ্জীবনের সাজা শোনানো হয়েছিল। তবে এই অপরাধকে বিরলতম আখ্যা দিয়ে তিন জনের ফাঁসি চেয়ে উচ্চতর আদালতে আরজি জানায় সিবিআই৷ তবে সেই আবেদন মঞ্জুর না বম্বে হাই কোর্ট৷ ‘দাঙ্গা’ শব্দের মানে বিলকিস বানোর থেকে ভাল বোধহয় কেউ জানেন না৷ কারণ তাঁকেই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হয়েছে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গায়৷ ৩ মার্চ হঠাৎ করে ঢুকে পড়েছিল দুষ্কৃতীরা৷ চোখের নিমেষে শেষ করে দিয়েছিল তাঁর গোটা পরিবারকে৷ ১৯ বছরের বিলকিস তখন ছিলেন ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা৷ তাতেও মন গলেনি দুষ্কৃতীদের৷ সেই অবস্থাতেই তাঁকে করা হয় গণধর্ষণ৷ পুলিশের কথায়, চোখের সামনে কোল থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল তাঁর তিন বছরের কন্যা সন্তানকে৷ পাথরে থেতলে মেরে ফেলা হয়েছিল একরত্তি শিশুকে৷ শুধু তাই নয়, বিলকিসের পরিবারের ১৪ জন এবং আরও ১৭ জন গ্রামবাসীকে এভাবেই হত্যা করা হয়েছিল৷
নির্ভয়াকাণ্ডে রায় ঘোষণা করল সুপ্রিম কোর্ট
৫ মে ২০১৭। দিনটি হয়ত মনে রাখবেন প্রত্যেক ভারতবাসী। কারণ ওই দিন নির্ভয়া কাণ্ডে চূড়ান্ত রায়ে চার অভিযুক্তের ফাঁসির সাজা বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট অফ ইন্ডিয়া। ফাঁসির সাজা বহাল থেকে যায় দোষী অক্ষয় ঠাকুর, পবন গুপ্তা, বিনয় শর্মা ও মুকেশ সিংয়ের বিরুদ্ধে। সর্বোচ্চ আদালতের তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দেয়। ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে এক বন্ধুর সঙ্গে বাসে করে বাড়ি ফিরছিলেন দিল্লির ২৩ বছরের তরুণী ফিজিওথেরাপিস্ট৷ মর্মান্তিকভাবে তাঁকে ধর্ষণ করে এবং তাঁর বন্ধুকে মারধর করে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়৷ ঘটনার ১৩ দিনের মাথায় মৃত্যু হয় তরুণীর৷ প্রতিবাদে সরব হয় গোটা দেশ৷ দিল্লি হাই কোর্টে ছয় জন দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল নির্ভয়ার ধর্ষণ কাণ্ডে৷ এর মধ্যে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়৷ তবে ২০১৩ সালের মার্চ মাসে তিহার জেলেই আত্মহত্যা করে মৃত্যুদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি রাম সিং৷ সাজাপ্রাপ্ত আরও এক নাবালক তিন বছর জুভেনাইল হোমে কাটিয়ে গত বছর মুক্তি পেয়ে গিয়েছে সে৷ কিন্তু মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে আবেদন জানিয়েছিল অক্ষয়, পবন, বিনয় ও মুকেশরা৷ যদিও সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে সর্বোচ্চ আদালত মৃত্যুদণ্ডের সাজাই বহাল রাখল৷
আরুষি হত্যা মামলায় বেকসুর খালাস তলোয়ার দম্পতি
আরুষি হত্যা মামলায় বেনিফিট অফ ডাউট। ১২ অক্টোবর সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের রায় খারিজ করে দেয় এলাহাবাদ হাই কোর্ট। বেকসুর খালাস হন চিকিৎসক দম্পতি রাজেশ ও নুপূর তলোয়ার। এলাহাবাদ হাই কোর্ট জানায়, আরুষি ও হেমরাজকে যে ওই চিকিৎসক দম্পতি খুন করেছেন, তার কোনও অকাট্য প্রমাণ দিতে পারেনি সিবিআই। ২০০৮ সালের ১৬ মে। নয়ডায় তলোয়ার দম্পতির বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় তাঁদের একমাত্র মেয়ে ১৪ বছরের আরুষির গলাকাটা দেহ। প্রাথমিকভাবে বাড়ির কাছ লোক হেমরাজই আরুষিকে খুন করেছে বলে সন্দেহ করেছিল পুলিশ। কিন্তু, পরের দিনই তলোয়ার দম্পতির বাড়ির বারান্দা থেকে উদ্ধার হয় হেমরাজের দেহ। গোটা ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়। অভিযোগের তির ঘুরে যায় তলোয়ার দম্পতির দিকে। নানান চাপানউতোরের শেষে ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় উত্তরপ্রদেশ সরকার। সম্মানরক্ষায় খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় রাজেশ ও নূপূর তলোয়ারকে। পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তলোয়ার দম্পতির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিবিআই। ২০১৩ সালে নিজের মেয়ে ও বাড়ির পরিচারিকাকে খুন করার অভিযোগে তলোয়ার দম্পতিকে দোষী সাব্যস্ত করে সিবিআই আদালত। যাবজ্জীবন সাজা হয় তাঁদের। সিবিআইয়ের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এলাহাবাদ হাই কোর্টে আবেদন করেছিলেন রাজেশ ও নুপূর তলোয়ার। শেষপর্যন্ত সেই আবেদনই মঞ্জুর করল আদালত।
আদালতের নির্দেশে ফেডারেশন সভাপতির পদ গেল প্রফুল্ল প্যাটেলের
সফলভাবে যুব বিশ্বকাপ আয়োজন করার পরেও পদ খোয়াতে হয়েছে এআইএফএফ সভাপতি প্রফুল্ল প্যাটেলকে। ন্যাশনাল স্পোর্টস কোডের নিয়ম মেনে নির্বাচন না হওয়ায় দিল্লি হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁকে খোয়াতে হয়েছে পদ। আদালত সাফ জানিয়ে দেয়, আগামী পাঁচমাসের মধ্যে নতুন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। আর পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত এআইএফএফ-এর প্রশাসনিক প্রধানের দায়িত্বে দেওয়া হয়েছে প্রাক্তন প্রধান নির্বাচনী কমিশনার এসওয়াই কুরেশি। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ফেডারেশনের বার্ষিক সাধারণ সভায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃতীয়বারের জন্য সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রফুল্ল প্যাটেল। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর ২০০৮ থেকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন তিনি। ২০০৯-এর অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদে বসেন। তবে এবার আদালতের নির্দেশে বিপাকে পড়তে হল তাঁকে। রাহুল মেহরা নামের এক ক্রীড়াপ্রেমী নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নিয়মভঙ্গের অভিযোগ তুলে হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন। তারই ভিত্তিতে এই রায় দিয়েছিল বিচারক এস রবীন্দ্র ভাট এবং বিচারক নাজমি ওয়াজিরির একটি বেঞ্চ।
রানাঘাটের সন্ন্যাসিনী ধর্ষণ মামলায় সাজা ঘোষণা
আড়াই বছরের অপেক্ষার পর ৭ নভেম্বর রানাঘাটে সন্ন্যাসিনী ধর্ষণ মামলার রায় ঘোষণা করে নগর দায়রা আদালত। পরদিন এই মামলায় সাজা ঘোষণা করা হয়। মূল অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম ওরফে নজুকে ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত করে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা শোনায় আদালত। পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়। বাকি চারজনের ১০ বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়। অন্যদিকে, দোষীদের আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে গোপাল সরকারকে সাত বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল আদালত। নগর দায়রা আদালতের বিচারক কুমকুম সিনহা এই ঘটনাকে নক্ক্যারজনক বলে ব্যাখ্যা করেন। জানান, নিবেদিতা, মাদার টেরেজার দেশে একজন সন্ন্যাসিনীর ধর্ষণ লজ্জাজনক। বিকৃত ও বেপরোয়া মানসিকতার ফল। এবং সে কারণে এই ঘটনা অন্য ঘটনার থেকে ভিন্ন। তবে এ ঘটনা গণধর্ষণের নয়। কেননা ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে একজনই। তাই গণধর্ষণ থেকে একে ধর্ষণের আখ্যা দেয় আদালত। তবে অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
খাদিম কর্তা অপহরণ মামলায় দোষীদের সাজা ঘোষণা
দীর্ঘ ১৬ বছর ধরা চলা মামলার অবশেষে নিষ্পত্তি ঘটেছে চলতি বছরে। খাদিমকর্তা পার্থ রায়বর্মনকে অপহরণের অভিযোগ দোষী আটজনকেই যাবজ্জীবনের সাজা শুনিয়েছে আলিপুর বিশেষ আদালত। গত ১১ ডিসেম্বর এই ল্যান্ডমার্ক মামলার রায় ঘোষণা হয়। বাংলায় খাদিমকর্তা অপহরণের বিচার এক বিশেষ মামলা। দীর্ঘ ষোল বছর ধরে চলছিল বিচারপ্রক্রিয়া। দুই পর্যায়ে এই মামলা চলেছিল। শেষপর্যন্ত দ্বিতীয় দফার বিচার শেষে অপরাধীদের সাজা শোনায় আদালত। এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর আট অপরাধীকেই দোষী বলে সাব্যস্ত করা হয়েছিল। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আফতাব আনসারি ছাড়াও দোষী সাব্যস্ত আদালত দোষী সাব্যস্ত করে নইম ওরফে তারিক মেহমুদ, আরশাদ ওরফে আসলাম, দিলসাদ, শাহবাজ, উমর জালাল, মোজ্জামেল শেখ ও আখতারকে। এর মধ্যে আরশাদ, নইম ও দিলসাদ পাক নাগরিক।
২জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি মামলায় ছাড় পেলেন এ রাজা এবং কানিমোঝি
অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ সিবিআই। তাই 2G মামলায় বেকসুর খালাস পেলেন প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী এ রাজা ও ডিএমকে নেত্রী কানিমোঝি। গত ২১ ডিসেম্বর দেশের অন্যতম বৃহত্তম কেলেঙ্কারি মামলায় রায় দেয় দিল্লির পাটিয়ালা হাউস কোর্টের বিশেষ সিবিআই আদালত। উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে দুই অভিযুক্তকেই নির্দোষ বলে রায় দেন বিচারপতি ওপি সাইনি। প্রায় ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকার এই কেলেঙ্কারি ইউপিএ আমলে দেশ জুড়ে প্রবল শোরগোল ফেলে দেয়। দুর্নীতিতে নাম জড়ায় একের পর এক রাজনীতির রাঘব বোয়ালদের। তবে এই রায়ে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই ও ইডি। তৎকালীন মনমোহন সিং সরকারের আমলে ঘটা এই দুর্নীতি নিয়ে ২০১১ সালে মামলা শুরু হয়। রাজা ও কানিমোঝি-সহ একাধিক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট ফাইল করে সিবিআই। আদালত তিনটে মামলায় ১৬ অভিযুক্তকেই বেকসুর খালাস করে। আদালত সাফ জানিয়ে দেয় 2G স্পেকট্রাম বণ্টনে কোনও দুর্নীতি হয়নি।
আদর্শ আবাসন মামলায় ছাড় পেলেন মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক চবন
টুজির পর আদর্শ আবাসন মামলা। চলতি বছরের ডিসেম্বরে পরপর দু’টি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জোড়া স্বস্তি পায় কংগ্রেস শিবিরে। পাশাপাশি আইনি লড়াইয়ে বেশ খানিকটা ধাক্কা খেল বিজেপি। ২২ ডিসেম্বর বম্বে হাইকোর্ট জানিয়ে দিল আবাসন মামলায় অশোক চবনের বিরুদ্ধে তদন্তের প্রয়োজন নেই। মূলত এই মামলার জন্য তাঁকে মহারাষ্ট্রর মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হয়েছিল। মুম্বইয়ের অন্যতম ধনী এলাকা কোলাবায় আদর্শ আবাসন তৈরি হয়েছিল। মূলত শহিদ জওয়ানদের স্ত্রীদের ওই ফ্ল্যাটে ঘর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই আবাসনে অশোকের পরিবার তিনটি ফ্ল্যাট পায় বলে অভিযোগ। যখন এই ঘটনা তখন মহারাষ্ট্রের রাজস্বমন্ত্রী ছিলেন অশোক চবন। সরকারি প্রভাব খাটিয়ে ঘনিষ্ঠদের ফ্ল্যাট অশোক বিলিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। ২০১০ সালে এর জন্য তাঁকে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হয়। এরপর অশোককে কোণঠাসা করতে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলায় তদন্ত শুরুর দাবি জানায় বিজেপি। সেই সময় মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ছিলেন কে শঙ্করনারায়ণন। তিনি অবশ্য অশোক চবনের বিরুদ্ধে তদন্তের অনুমতি দেননি। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালে মহারাষ্ট্রে ক্ষমতায় আসে বিজেপি-শিবসেনা জোট। এরপর অশোকের উপর চাপ বাড়তে থাকে। জোট সরকার আদর্শ কেলেঙ্কারির তদন্তের ফাইল নতুন করে খোলে। পরিস্থিতি বদলে যাওয়ায় ২০১৬ সালে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল সি বিদ্যাসাগর রাও শেষপর্যন্ত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্তের অনুমতি দিয়ে দেন। সেই অনুমতি শুক্রবার খারিজ করে দিল বম্বে হাই কোর্ট।
পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব
টুজি, আদর্শ আবাসন মামলার পর পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতেও এ বছরেই রায়দান হয়েছে। সাজা ঘোষণা না হলেও দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব। গত ২৩ ডিসেম্বর পর্যাপ্ত প্রমাণ পেয়েই রায় দেন রাঁচির বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক।তবে রেহাই পেয়েছেন বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্র। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে আরজেডি প্রধানের বিরুদ্ধে মোট ছয়টি মামলা দায়ের হয়। এই মামলাটি ছিল দ্বিতীয়। এই মামলায় অভিযোগ ছিল, ১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের নেতৃত্বে পশুখাদ্য কেনার নাম করে জাল নথির মাধ্যমে দেওঘর ট্রেজারি থেকে ৯০ লক্ষ টাকা তোলা হয়। এর আগে পশুখাদ্য সংক্রান্ত অন্য একটি মামলায় লালুপ্রসাদ যাদবকে পাঁচ বছরের কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছিল CBI আদালত। সেই মামলায় ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট থেকে অবশ্য তিনি জামিন পান। এর আগে চলতি বছরের মে মাসে প্রায় ১০০০ কোটি টাকার পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে লালুর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এছাড়াও ওই কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত প্রত্যেকটি মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আলাদা করে মামলা চালানোর আদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত। অভিযোগ, ১৯৯০ থেকে ১৯৯৭ সালের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের নেতৃত্বে পশুখাদ্য কেনার নাম করে জাল নথির মাধ্যমে কয়েকবারে প্রায় ১০০০ কোটি টাকা কোষাগার থেকে তোলা হয়।
The post ফিরে দেখা ২০১৭: সতেরোর এজলাসে বিচারের হাল-হকিকত appeared first on Sangbad Pratidin.