সুকুমার সরকার, ঢাকা: দিন তিনেক আগেই ডাকাতি করতে গিয়ে গ্রামবাসীদের মারে মৃত্যু হয়েছিল ৪ জনের। ঢাকা থেকে খানিক দূরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের বাঘরী গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছিল। এই কদিন পরিচয় জানা যায়নি মৃতদের। এবার প্রকাশ্যে এসেছে তাঁদের পরিচয়। যাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন শের আলি। জানা গিয়েছে, ৩৩ বছরের জীবনে ১৪ বছর গারদের পিছনে কাটিয়েছিলেন তিনি। গত বৃহস্পতিবারই কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন শের আলি। আর শেষে ডাকাত সন্দেহেই গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
পুলিশ সূত্রে খবর, ছয় বছর আগে একটি অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার মর্দাসাদী গ্রামের বাসিন্দা শের আলি। ডাকাতি-সহ অন্তত আটটি মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন তিনি। জমি বিক্রির টাকায় জামিন নিয়ে গত বৃহস্পতিবার জেল থেকে বের হয়েছিলেন। তার পরই ফের ছক কষেছিলেন ডাকাতির। পরিকল্পনা মতো বাঘরী বিলের কাছে রবিবার মাঝরাতে চলে গিয়েছিলেন সঙ্গীদের নিয়ে। সেখানেই গ্রামবাসীদের মারে প্রাণ হারান তিনি।
[আরও পড়ুন: প্রেমের ফাঁদ পাতা… বিএনপি নেতার মেয়ের সঙ্গে পালালেন ছাত্রলিগ নেতা!]
জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিহত ব্যক্তিদের দেহ আসেন পরিবারের লোকজন। সেখানে শের আলির দেহ শনাক্ত করেন আত্মীয়রা। তাঁর ভাইপো জুয়েল রানা নামের এক যুবক সংবাদমাধ্যমে বলেন, শের আলির মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই। দুটি বিয়ে করলেও তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছিল না। তাঁর ১২ বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে দাদুর বাড়িতে থাকে। কাছের লোক বলতে শের আলির দুই ভাই ও দুই বোন।
এদিন দেহ নেওয়া নিয়ে বাধা দেন শের আলির গ্রামের লোকজন। এনিয়ে জুয়েল বলেন, “ওনার কারণে বারবার গ্রামের বদনাম হয়েছে। এই কারণেই গ্রামবাসীরা দেহ নিতে বাধা দিয়েছে। তিনি জীবনে প্রথমবার তিন বছর জেল খাটেন। জেল থেকে বের হওয়ার তিন মাস পর আবার আরেক মামলায় পাঁচ বছরের জেলের সাজা হয়। এক মাস পর আরেক অস্ত্র মামলায় ছয় বছর তিন মাস জেল খাটেন। কথা দিয়েছিলেন এবার জেল থেকে বের হয়ে ভালো হয়ে যাবেন। সে কারণে আত্মীয়রা তাঁর মালিকানার জমি বিক্রি করে জামিনের ব্যবস্থা করেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি বাড়িতে এসেছিলেন। রবিবার সকালে পাশের গ্রামে মেয়ের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে বের হয়েছিলেন। বিকেল থেকে তাঁর মোবাইল বন্ধ আসছিল। এর পর আমরা গোটা ঘটনা জানতে পারি।”
উল্লেখ্য, গত রবিবার সোনারগাঁওয়ের উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়নের বাঘরী গ্রামে রাত একটার দিকে বাগরী বিলে কয়েকজন অপরিচিত ব্যক্তিকে ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছিল। তাঁদের গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় সেখানকার মসজিদের মাইকে ‘ডাকাত পড়েছে’বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। এর পরই হুলস্থূল পড়ে গিয়েছিল এলাকায়। গ্রামবাসীরা তখন চারদিক থেকে ওই ব্যক্তিদের ঘিরে ফেলেছিলেন। তাঁরা পালানোর জন্য বিলের জলে ঝাঁপও দিয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয় লোকজন কয়েকজনকে আটক করে মারধর শুরু করেন। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। সেখান থেকে দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। পরে হাসপাতালে আরও একজনের মৃত্যু হয়। পুলিশের জেরায় আহত একজন ডাকাত দলের সদস্য বলে স্বীকার করেছিলেন।