সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: স্বাস্থ্যসাথী কার্ড (Swasthya Sathi Card) থাকা সত্বেও বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ উঠল দুর্গাপুর। পরিবারের দাবি, ৫ হাসপাতালে ১৪ ঘণ্টা ধরে ঘুরেও চিকিৎসা পাননি দুর্ঘটনায় জখম ব্যক্তি। শনিবার রাতের এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ মৃতের পরিবার এবং স্থানীয় বাসিন্দারা পথ অবরোধ করেন। পরে পুলিশ ও জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের আশ্বাসে এদিন সকাল ৮টা নাগাদ অবরোধ ওঠে।
দুর্গাপুরের (Durgapur) ১ নম্বর ওয়ার্ডের জব্বরপল্লির বাসিন্দা নির্মল মণ্ডল (৬২) দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। পরিবার সূত্রে খবর, শনিবার দুপুর ১টা নাগাদ দোকান বন্ধ করে সাইকেলে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন নির্মলবাবু। সেই সময় ইস্পাতনগরী থেকে লালবাগগামী একটি বাইক দ্রুতবেগে এসে তাঁকে ধাক্কা মারে। ছিটকে পড়েন নির্মলবাবু। গুরুতর চোট লাগে মাথায়। এর পরই তড়িঘড়ি তাঁকে দুর্গাপুর সাব ডিভিশন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। পরিবারের দাবি, সাব ডিভিশন হাসপাতাল জানায় চোট গুরুতর। তাই সেখানে চিকিৎসা সম্ভব নয়। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
[আরও পড়ুন: মেলা থেকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে নাবালিকাকে গণধর্ষণ! ফের নৃশংস ঘটনার সাক্ষী মালদহ]
মৃতের ছেলে রণজয় মণ্ডল জানান, জখম অবস্থায় দুর্গাপুর সাব ডিভিশন হাসপাতাল থেকে নির্মলবাবুকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও চিকিৎসা করা হয়নি বলে দাবি মৃতের পরিবার। চোট গুরুতর হওয়ায় তাঁকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু নির্মলবাবুর পরিবার কলকাতায় যায়নি। বদলে তাঁকে বর্ধমানেরই অনাময় হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে খালি হাতে ফিরতে হয় তাঁদের। রক্তাক্ত নির্মল মণ্ডলকে দুর্গাপুর ফিরিয়ে আনার সময় কাঁকসার দু’টি মেডিক্যাল কলেজে-গৌরীদেবী ও সনকা যান তাঁরা। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেখান। অভিযোগ, সেখানে বেড না থাকায় জখমকে ভরতি নেয়নি হাসপাতাল। মেলেনি চিকিৎসা। এই টানাপোড়েনের মাঝে রাত তিনটে নাগাদ রাস্তাতেই মৃত্যু হয় নির্মলবাবুর।
তার পরই দুর্ঘটনাস্থলে এসে রাস্তা অবরোধ করে মৃতের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে চলে অবরোধ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে দুর্গাপুর, দুর্গাপুর-ফরিদপুর থানার পুলিশ। অবরোধ তুলতে আসেন তৃণমূলের (TMC) ব্লক সভাপতি সুজিত মুখোপাধ্যায়। পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেন। সুজিতবাবু জানিয়েছেন, “স্বাস্থ্যসাথী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্প। রাজ্য সরকারের প্রকল্প। এই কার্ড যারা ফিরিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা অন্যায় করেছেন। জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানাব।” জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক মহম্মদ ইউনিস জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে কথাও বলবেন। আশ্বাস পেয়ে সকালে সাড়ে আটটা নাগাদ অবরোধ তুলে নেন স্থানীয়রা।