অভিরূপ দাস: ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর চিলচিৎকার নেই। হাত-পা ছুঁড়ে কাঁদছে না নবজাতক। এই অদ্ভুত ঘটনায় ভেঙে পড়েছিলেন মা-বাবা। তাজ্জব বনে গিয়েছিলেন চিকিৎসকরাও। আসলে শিশুর (New Born Baby) শারীরিক অবস্থাই যে জটিল। এরকম শারীরিক সমস্যা সচরাচর দেখাও যায় না। শ্বাসনালিকে ঢেকে রেখেছিল পেল্লায় এক মাংসপিণ্ড। যাকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলে ‘কনজেনিটাল ল্যারিঞ্জিয়াল সিস্ট’। প্রতি ১ লক্ষে মাত্র দু’জন শিশুর এমনটা দেখা যায়।
এমনিতেই করোনা আবহ। তারপর জন্মের পর থেকেই শ্বাসকষ্ট। আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন মা-বাবা। পৃথিবীতে এসেছে সবে কয়েকঘণ্টা। তার মধ্যেই শিশুটির অক্সিজেন স্যাচুরেশন ছিল তলানিতে। হাঁপড়ের মতো ওঠা নামা করছিল বুক। জটিল অস্ত্রোপচার নিতে পারবে দুধের শরীর? প্রশ্ন ঘুরছিল মা-বাবার মনে। সূক্ষ্ম ক্যামেরায় চোখ রেখে, বাইরে থেকে কোনও কাঁটাছেড়া না করে জটিল অস্ত্রোপচারে (Operation) শিশুর প্রাণ বাঁচাল ইএনটি সার্জন চিকিৎসক শান্তনু পাঁজা। মাত্র ১১ দিন বয়সের শিশুর শরীরে দু’ঘণ্টার অস্ত্রোপচার! শহরেও বিরল। জানুয়ারির ১০ তারিখের ঘটনা। রাজারহাটের তেঘড়িয়ার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে জন্ম হয়েছিল বিজয় কুমার আর জি মাধুরীর কন্যার।
[আরও পড়ুন : সেনা গোয়েন্দাদের তৎপরতা, কলকাতায় কৌটো বোমা পাচারের আগেই গ্রেপ্তার যুবক]
তেঘড়িয়ার বাসিন্দা বিজয় কুমারের কথায়, “জন্মের পর থেকেই কাঁদছিল না আমার মেয়ে। অদ্ভুত একটা আওয়াজ বেরোচ্ছিল মুখ দিয়ে। তেঘড়িয়ার ওই নার্সিংহোমের চিকিৎসকরা প্রথমে ধরতেই পারেননি অসুখ।” নবজাতকের মা-বাবাকে তাঁরা জানান, “এটা এমন কিছু নয়। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কম রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে শিশুটির এক্স-রে করা হয়। তাতে দেখা যায় দিব্যি রয়েছে ফুসফুস। অসুখ ধরতে পারছিলেন না কেউ।” উন্নত চিকিৎসার জন্য তেঘড়িয়ার ওই নার্সিংহোম থেকে মেয়েকে দমদমের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসেন দম্পতি। তাতেও লাভ হয়নি। অবশেষে উপশম মিলল বাইপাসের অ্যাপোলো হাসপাতালে। অসুস্থ শিশুটিকে নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভরতি করা হয়। সাধারণত জন্মের পর একমাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের চিকিৎসা চলে যেখানে।
হাসপাতালের ইএনটি সার্জন ডা. শান্তনু পাঁজার কথায়, শিশু জন্মের পর থেকে কাঁদবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই শিশুটি নীরব ছিল। আসলে চিৎকার করে কাঁদতে গেলে যেটুকু দমের দরকার হয় তা নিতে পারছিল না শিশুটি। এখানে শারীরিক পরীক্ষা করে আমরা দেখতে পাই শ্বাসনালিতে ২ সেন্টিমিটার লম্বা একটি মাংস পিণ্ড! যার জন্য স্তন্যপানও করতে পারছিল না শিশুটি। শ্বাসনালির এহেন টিউমার যে কোনও মুহূর্তে মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। দ্রুত তা অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন ছিল। এদিকে অত ছোট শিশু মুখ হাঁ করতে পারছিল না। এন্ডোস্কোপিক প্রক্রিয়ায় ক্যামেরা দিয়ে দেখে মাংসপিণ্ডটা বাদ দেওয়া হয়। জটিল এ অস্ত্রোপচারে সময় লাগে প্রায় ২ ঘণ্টা। শিশুটির প্রাণ ফিরিয়ে দিতে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অলকানন্দা দাসদত্তর অবদানও কম নয়।