সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ডহারবার: গলা থেকে মুখ পর্যন্ত মোটা করে সেলোটেপ আটকে এক ব্যক্তিকে পিছমোড়া করে বেঁধে কম্বল ঢেকে ঘরে ফেলে রাখার অভিযোগে তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলেকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। রবিবারই আদালতে তোলা হয় তাদের। অভিযুক্তদের ১৪ দিন জেল হেফাজতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার (South 24 Parganas) ডায়মন্ড হারবারের ভগবানপুরে। হাসপাতালে ভরতি নির্যাতিত ওই ব্যক্তি।
শনিবার ঘর থেকে গোঙানির আওয়াজ পেতেই সন্দেহ হয়েছিল পড়শি ভাড়াটিয়ার। বাড়ির মালিককে সেকথা জানাতেই তিনি ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে যান। অভিযোগ, ঘরের ভিতর তাঁকে ঢুকতে বাধা দেয় তাঁর ভাড়াটিয়া সন্ধ্যা হালদার এবং তাঁর দুই ছেলে ভিকি ও বিলাস। বাড়ির মালকিন পম্পাদেবী জানান, জোর করে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে তিনি দেখেন সন্ধ্যার স্বামী সুভাষকে নাইলনের দড়ি দিয়ে দু’হাত-দু’পা বেঁধে কাঠের আসবাবের সঙ্গে তাঁর দেহ পিছমোড়া করে বেঁধে রাখা হয়েছে। গলা থেকে মুখ পর্যন্ত একের পর এক জড়ানো সেলোটেপ! স্থানীয়রাই উদ্ধার করে ওই ব্যক্তিকে। এরপর রবিবার সুভাষবাবুর স্ত্রী সন্ধ্যা ও তাঁর দুই ছেলেকে গ্রেপ্তার করে ডায়মন্ড হারবার এসিজেএম আদালতে পাঠানো হয়। দীর্ঘক্ষণ ওই অবস্থায় পড়ে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে পেশায় ইলেকট্রিকের মিস্ত্রি সুভাষবাবুকে। তিনি আদতে লক্ষ্মীকান্তপুরের বাসিন্দা। কাজের সুবাদে থাকেন কলকাতার কসবা কুমোরপাড়ায়।
[আরও পড়ুন: মুর্শিদাবাদে ‘বাংলা আবাস যোজনা’য় দুর্নীতির অভিযোগ, সাসপেন্ড সরকারি কর্মী]
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় বছর দুয়েক আগে দুই ছেলেকে নিয়ে ডায়মন্ড হারবারের নাইয়াপাড়ায় বাপেরবাড়ি চলে আসেন সন্ধ্যা। ছ’মাস আগেই দুই ছেলেকে নিয়ে বাপেরবাড়ি থেকে ডায়মন্ডহারবার পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভগবানপুরের ভাড়াবাড়িতে ওঠেন তিনি। পুজোর সময় স্ত্রী ও ছেলেদের সঙ্গে ডায়মন্ড হারবারেই কাটিয়ে সুভাষ ফিরে গিয়েছিলেন কসবার বাড়িতে। দিনকয়েক আগে ফের তিনি এসেছিলেন ডায়মন্ড হারবারে, স্ত্রী ও ছেলেদের কাছে।অসুস্থ সুভাষবাবু জানান, সম্ভবত শুক্রবার রাতের
খাবারের (ভাত-ডাল-সবজি)সঙ্গে কিছু মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তা খেয়ে তিনি শুয়ে পড়েন। তাঁকে বাঁধা বা মুখে সেলোটেপ আটকানো কোনওকিছুই টের পাননি তিনি। তাঁর ধারণা, স্ত্রী ও ছেলেরা মিলে তাঁকে খুন করতেই চেয়েছিল। কিন্তু কেন? সুভাষবাবুর বেশ কিছু জমানো টাকা রয়েছে। সেই টাকা হাতাতেই খুনের পরিকল্পনা বলে অনুমান তাঁর। তবে এই ঘটনায় সাহায্যকারী হিসেবে স্ত্রীর পরিচিত এক ব্যক্তিরও যোগ থাকতে পারে বলে পুলিশকে জানিয়েছেন তিনি। তবে কী পরকীয়া রয়েছে এই ঘটনার নেপথ্যে? উঠছে প্রশ্ন।