অভিরূপ দাস: শরীরে সুগারের মাত্রা মারাত্মক? প্রদাহের কারণে বেড়ে গিয়েছে রক্তে ফেরিটিনের মাত্রা? এমতাবস্থায় ভুলেও ছোঁবেন না বাসি খাবার। মুখে তুলবেন না নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়া পাঁউরুটি। সম্প্রতি মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস (Black Fungus) নিয়ে সম্প্রতি এমনই সব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্র। দেশের তাবড় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সেই গবেষণায় অংশ নিয়েছিল কলকাতার ইন্সটিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাইগোমাইসিটস শ্রেণির নিরীহ সিনকেফেলাসট্রাম ছত্রাকই মারাত্মক আকার ধারণ করছে শরীরে ঢুকে। দ্রুত বাড়িয়ে তুলছে মিউকরমাইকোসিস সংক্রমণ।
এতদিন সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল, কালো ছত্রাক শুধুমাত্র ত্বকের বিভিন্ন অংশে সংক্রমণ করে। প্রকাশিত গবেষণাপত্রে দেখা গেল, তা পুরোটা ঠিক নয়। গবেষণার অন্যতম সদস্য এসএসকেএমের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নূপুর পাল জানিয়েছেন, ”খালি চোখে দেখা যায় না এই ছত্রাক। আমাদের আশপাশের পরিমণ্ডলে তার উপস্থিতি প্রবল। এমনিতে ক্ষতি নেই। কিন্তু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলেই গন্ডগোল।” মিউকরমাইকোসিস (Mucormycosis) নিয়ে নয়া গবেষণাপত্র ‘ক্লিনিক্যাল ইনফেকশন ইন প্র্যাকটিস’ প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক এক জার্নালে। চন্ডীগড়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের মাইকোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. অরুণালোক চক্রবর্তী এই গবেষণার অন্যতম সদস্য। ফি বছর মিউকরমাইকোসিস নিয়ে পিজিআই চন্ডীগড়ে একাধিক রোগী আসেন। ডা. অরুণালোক চক্রবর্তী জানিয়েছেন, প্রতি বছর ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী এই প্রতিষ্ঠানে আসেন। এ বছর শুধুমাত্র মে মাসেই সেই সংখ্যাটা ১৪৪।
[আরও পড়ুন: কোভ্যাক্সিনের তুলনায় বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি করছে কোভিশিল্ড, দাবি নয়া গবেষণায়]
কোভিড (COVID-19) পরিস্থিতিতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের আকস্মিক বাড়াবাড়ি অনেকেই একে করোনার দোসর বলছেন। কিন্তু এ কথা পুরোপুরি সত্যি নয়। এমন অনেক রোগীই রয়েছেন, যাঁরা কখনও করোনায় আক্রান্ত হননি। অতিরিক্ত সুগারের কারণেই শরীরের রোগ ক্ষমতা কমে গিয়ে ছত্রাকের খপ্পরে পড়েছেন তাঁরা। গবেষণার আরেক সদস্য চন্ডীগড়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের ছত্রাক বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী অনুপ ঘোষ জানিয়েছেন, এই সিনকেফেলাসট্রামের দুটি প্রকারভেদ আছে। তার মধ্যে একটা সিনকেফেলাসট্রাম রেসিমোসাম। তা নিয়ে অতীতে নাড়াচাড়া হলেও সিনকেফেলাসট্রাম মনোস্ফোরাম নিয়ে গবেষণা হয়নি। আর ২০২১-এ এই নতুন প্রকারই মাথাচাড়া দিচ্ছে। দেখা গিয়েছে, পুরনো চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করে এঁদের বিরুদ্ধে লড়া যাবে না। গবেষণাপত্রে তাই গবেষকরা নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি ঠিক করে দিয়েছেন। সে কারণেই বলা হচ্ছে, নতুন এই গবেষণা সাধারণ মানুষের জন্য নয়। চিকিৎসকদের জন্য। গবেষকদের দাবি, এই গবেষণা পত্র দেখেই দ্রুত মিউকর মাইকসিস নির্ণয় করা যাবে।
[আরও পড়ুন: করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ৫ গুণ কম অ্যান্টিবডি তৈরি করে ফাইজারে টিকা!]
মাইক্রোবায়োলজিস্ট নুপূর পালের কথায়, ”১০০ জনের শরীরে ছত্রাক প্রবেশ করলে তাঁর মধ্যে শতকরা পঞ্চাশ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। তাই দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতেই হবে।” মিউকরমাইকোসিসের ওষুধ টারবিনাফিন নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। আপাতত এমফোটেরিসিন বি ইঞ্জেকশনকেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের মোক্ষম অস্ত্র বলছেন গবেষকরা। এই ইঞ্জেকশনই রোগীকে মৃত্যুমুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে। আচমকা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া এই ছত্রাক সংক্রমণের কারণ বলে একে মিউকর মাইকোসিসকে অপারচুনিস্টিক ইনফেকশন বা সুবিধাবাদী সংক্রমণ বলছেন গবেষকরা।