সুপর্ণা মজুমদার: সৃষ্টির প্রতি স্রষ্টার অপত্য স্নেহ স্বাভাবিক। তবে সেই স্নেহ যদি নতুনত্বের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে একটু ভাবা প্রয়োজন। বিশেষ করে পরিচালনার মহার্ঘ দায়িত্ব কাঁধে নিলে। অতীতের মায়াজাল থেকে বের হতে না পারলে তাঁর ফল ভুগতে হয় ভবিষ্যতকে। ঠিক এমনটাই হয়েছে প্রকাশ ঝা (Prakash Jha) পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘আশ্রম চ্যাপ্টার ২’র (Aashram Chapter 2) ক্ষেত্রে।
নিজের প্রথম ওয়েব সিরিজে চেনা পরিচিত গণ্ডিতেই খেলেছেন প্রকাশ। প্রিয় ক্রাইম ও ড্রামা নিয়ে গল্প ফেঁদেছেন স্বাঘোষিত কাশীপুরওয়ালে বাবা নিরালাকে (ববি দেওল) কেন্দ্র করে। সিরিজের প্রথমভাগে বাবা নিরালার আসল চেহারা দেখানোর আভাস দিয়েছিলেন পরিচালক। যেখানে ভক্ত সত্তির (তুষার পাণ্ডে) স্ত্রী ববিতাকে (ত্রিধা চৌধুরী) নেশায় আচ্ছন্ন করে ধর্ষণ করছে নিরালা ওরফে মন্টি। মন্টির এই যাবতীয় অপরাধের সঙ্গী ভোপে (চন্দন রায় সান্যাল)। যে নাটকীয়তায় প্রথমভাগ শেষ হয়েছিল, তার অনেকটাই নিস্তেজ দ্বিতীয়ভাগে।
‘চ্যাপ্টার ২’তে গল্পের গতি খুবই স্লথ। চিত্রনাট্যে ধরা পড়ে একঘেয়েমি। ববি দেওলের (Bobby Deol) প্রত্যেক সংলাপে রয়েছে বিশ্বাসের অভাব। দুর্নীতগ্রস্ত, ক্ষমতালোভী, কামাতুর ভণ্ড বাবার চরিত্রের জন্য যে হিংস্রতা প্রয়োজন, তা ক্যামেরার সামনে ফুটিয়ে তুলতে ধর্মেন্দ্রপুত্র অপারগ। চন্দন রায় সান্যালের (Chandan Roy Sanyal) মতো অভিনেতা শুধুমাত্র পার্শ্ব চরিত্র হয়ে রয়ে গিয়েছেন। আর ত্রিধা চৌধুরী (Tridha Choudhury) পরিস্থিতির দাবি মেনে কেবল বাবা নিরালার শয্যাসঙ্গী।
[আরও পড়ুন: ‘ক্রাউড ফান্ডিং’-এর সদ্ব্যবহার করতে পারল কি ‘দুধ পিঠের গাছ’? পড়ুন রিভিউ]
প্রথমপর্বে উজাগর সিংয়ের চরিত্রের মাধ্যমে যে ক্ষিপ্রতা দর্শন কুমার (Darshan Kumar) দেখিয়েছিলেন, তা এই পর্বে একেবারেই নেই। নতাশা (অনুপ্রিয়া গোয়েঙ্কা), সাধু (বিক্রম কোচর) এবং আক্কির (রাজীব সিদ্ধার্থ) সঙ্গে মিলে উজাগর এবার শুধু আন্ডার কভার মিশনই চালিয়ে গিয়েছেন। তাতে লাভের লাভ কিছু হয়েছে বলে তো মনে হয় না। টিঙ্কা সিংয়ের চরিত্রে অধ্যয়ন সুমন (Adhyayan Suman) শুধুমাত্র স্টেজে গিটার হাতে লম্ফঝম্প করে গিয়েছেন। আর এখানেই বলা প্রয়োজন। বলিউড সিনেমা ও ওয়েব সিরিজের মধ্যে তফাত রয়েছে। দুই মাধ্যমের ক্ষেত্রে দর্শকদের চাহিদা ভিন্ন। এই চাহিদা বুঝতে গেলে প্রকাশ ঝার অতীতের ‘গঙ্গাজল’ কিংবা ‘চক্রবূহ্য’ ছেড়ে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। প্রয়োজন নতুন করে ভাবার। গল্পে গতি আনার।
দ্বিতীয় পর্বে নজর যদি কেউ কেড়ে থাকেন তিনি হচ্ছে অদিতি পোহাঙ্কর (Aaditi Pohankar)। ‘পহেলবান’ পম্মির চরিত্রে তাঁর হার না মানার মানসিকতাও ফুটে উঠেছে। একদিকে যেমন ধর্ষণের যন্ত্রণা ফুটিয়ে তুলেছেন, অন্যদিকে প্রতিশোধের আগুনও চোখে প্রতিফলিত হয়েছে। এই আগুন তৃতীয় পর্বে কতটা বজায় থাকবে? সেই উত্তরের আশায় রইলাম।