shono
Advertisement

বাধ্য হয়ে থাকুন, লালুকে নোটিস জেলে

সপ্তাহে তিনজনের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ ৩৩৫১ নম্বর কয়েদির।
Posted: 10:46 AM Dec 28, 2017Updated: 05:43 AM Dec 28, 2017

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘সপ্তাহে তিনজনের বেশি সাক্ষাৎপ্রার্থীর সঙ্গে দেখা করা যাবে না’– লাল কালিতে দাগিয়ে দেওয়া লেখাটা পড়তে পড়তে কান গরম হয়ে গেল ঝাড়খণ্ড জেলের কয়েদি নম্বর তিনহাজার তিনশো একান্নর। সবে তিনদিন হল নতুন ঠিকানায় এসেছেন। সেই ইস্তক তাঁকে দেখার জন্য লাইন পড়েছে জেলের বাইরে। কারও হাতে পছন্দের স্ন্যাকস, কেউবা আসছেন ফল-মূল, বাড়ির খাবার নিয়ে। স্বাভাবিক। তিনি লালুপ্রসাদ যাদব যে। আরজেডি সুপ্রিমো। ভেট না নিয়ে কি তাঁর সাক্ষাৎ পাওয়া যায়! তবু, সুখের দিনে ইতি পড়ল। ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই। বুধবার সকাল হতে না হতেই লালুর হাতে ধরিয়ে দেওয়া হল জেলের আচরণ বিধি। জানিয়ে দেওয়া হল, এ সপ্তাহে আর কোনও সাক্ষাৎপ্রার্থীকে ঘেঁষতে দেওয়া হবে না তাঁর কাছে।

Advertisement

সোমবার সকালেই জেলের নিয়মমাফিক সাক্ষাৎপ্রার্থীর সংখ্যা অতিক্রম করেছেন লালু, তাই জেলকর্তৃপক্ষের সাফ কথা-আর কারও সঙ্গে তিনি দেখা করতে পারবেন না। সোজা কথায়, এখন থেকে জেলের আচরণবিধিই অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে তাঁকে। সে তিনি যে-ই হোন না কেন। আর সেই মতো সপ্তাহে তিনজনের বেশি সাক্ষাৎপ্রার্থীর সঙ্গে দেখা করা চলবে না। এমন নির্দেশিকায় সতি্য বলতে কী বিস্মিতই হয়েছেন লালু প্রসাদ। এর আগে সাতবার জেল খেটেছেন তিনি। দু’বার রাঁচিতে পাঁচবার পাটনায়। এ অভিজ্ঞতা জীবনে হয়নি তাঁর। সাত সকালে জেলর এসে তাঁর হাতে জেলের আচরণবিধির কাগজ ধরিয়ে যাবে এমন সাহস তো দূর, ভাবনাটুকুও মনে আনতে চারবার ভাবতে হত বছর কয়েক আগেও।

এই তো সেদিনের কথা। শেষবার (২০১৩ সালে) লালুর জন্য ঝাড়খণ্ড গেস্ট হাউসটাকেই ‘স্পেশ্যাল সেল’ বানিয়ে দিয়েছিল ঝাড়খণ্ড সরকার। আদালতের নিষেধকে পাত্তাও দেয়নি। উল্টে নিয়ম করে দিনে একবার করে লালুর সাক্ষাৎপ্রার্থী হতেন তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। তখন ঝাড়খণ্ড সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার আরজেডি। আর আজ সেই ঝাড়খণ্ডেই লালু স্রেফ কয়েদি নম্বর ৩৩৫১। তাঁর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা তো দূর অস্ত্‌, তিনি যে একজন জনপ্রিয় নেতা, তাঁর যে অজস্র সাক্ষাৎপ্রার্থী থাকতে পারে, সেটুকুও মানতে নারাজ জেল কর্তৃপক্ষ।

বুধবারের ওই নোটিসের খবর বাইরে আসতে দেরি হয়নি। শুনেই লালুভক্তরা আরজেডি রাজ্য সচিব অন্নপূর্ণা দেবীকে সঙ্গে করে হাজির হয়েছিলেন ঝাড়খণ্ডের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাসের কাছে। কিন্তু, তিনি লালুকে কোনওরকম বিশেষ ব্যবস্থা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেননি। সাক্ষাৎপ্রার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে তো নয়ই। বাধ্য হয়েই লালুর সঙ্গে দেখা করার জন্য খাতার ব্যবস্থা করেছে ঝাড়খণ্ডের রাষ্ট্রীয় জনতা দল। কে কবে লালুর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন, তা লেখা থাকবে ওই খাতায়। যাতে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাতের সময় সমস্যা না দেখা দেয়।

আপাতত পশু খাদ্য কেলেঙ্কারির দেওঘর ট্রেজারি মামলায় ঝাড়খণ্ডের জেলের আপার ডিভিশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে লালুকে। সেখানে খবরের কাগজ আর টিভি ছাড়া নিজের জন্য একজন অতিরিক্ত রাঁধুনির সুবিধা রয়েছে লালুর। তবে চাইলেই তার কাছেও ইচ্ছামতো খাবার পাবেন না লালু। হার্টের রোগী লালুর খাওয়াদাওয়ায় প্রচুর বিধিনিষেধ রয়েছে। সেই সঙ্গে রক্তে শর্করার সমস্যা থাকায় নিয়মমাফিক খাওয়া দাওয়া করতে হয় লালুকে। সেই হিসাব মেনেই জেলে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে লালুর ডায়েট চার্ট। সেই নিয়ম মেনেই খাবার দেওয়া হচ্ছে লালুকে। আগামী ৩ জানুয়ারি শাস্তি ঘোষণা লালুর। শেষপর্যন্ত তাঁকে ঠিক কতদিন বাধ্য ছেলে হয়ে থাকতে হবে, তা জানা যাবে সেদিনই। আপাতত মোঘলের সাথেই খানা খাওয়া ছাড়া গতি নেই তাঁর।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup রাজধানী এক্সপ্রেস toolbarvideo ISL10 toolbarshorts রোববার