সুলয়া সিংহ: একুশের নির্বাচনের আগে ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারেন রুদ্রনীল ঘোষ (Rudranil Ghosh)! সব ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নিজের পরবর্তী পদক্ষেপ স্পষ্ট করবেন অভিনেতা। আপাতত তিনি রাজ্য রাজনীতির একজন দক্ষ পর্যবেক্ষকের ভূমিকায়। একসঙ্গে একটা বড় সংখ্যার মানুষের উপকার করার জন্য রাজনীতিই যে সেরা মঞ্চ, সেটা ভালমতোই উপলব্ধি করতে পেরেছেন রুদ্রনীল। আর সম্ভবত সেকারণেই একুশের নির্বাচনের আগেই তিনি নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে ‘সিদ্ধান্ত’ নিতে চান।
প্রসঙ্গত, রুদ্রনীল শুরু থেকেই রাজনীতি সচেতন মানুষ। ছাত্রজীবনেও যুক্ত ছিলেন বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে। তবে, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বের পর তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সঙ্গে সখ্য তৈরি হয় তাঁর৷ মুখ্যমন্ত্রীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে কয়েক বছর আগে তৃণমূলে (TMC) যোগ দেন তিনি৷ রাজ্যের বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সংসদের সভাপতি হন৷ হাওড়ার একটি কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতির পদেও বসানো হয়েছিল তাঁকে। ২০১৪ ও ২০১৬’র নির্বাচনে ছিলেন শাসকদলের স্টার ক্যাম্পেনার৷ কিন্তু ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সুর কাটে। দূরত্ব তৈরি হয় তৃণমূলের সঙ্গে। সেবছর একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে ছিলেন না রুদ্র। রাজ্যে কাটমানির চল থেকে শুরু করে সিন্ডিকেট রাজ- একাধিক ইস্যুতে শাসকদলের বিরুদ্ধে রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটান টলি অভিনেতা৷ একে একে সমস্ত সরকারি পদ থেকে সরতে হয় তাঁকে। তারপর প্রায় বছর দেড়েক সক্রিয় রাজনীতিতে দেখা যায়নি রুদ্রনীলকে। তবে, করোনা (Coronavirus) মহামারী হোক, বা আমফানের দুর্যোগ, অকৃপণভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে ‘ভিঞ্চি দা’কে। সেই সঙ্গে রাজ্য রাজনীতির গতিপ্রকৃতি খুব ভালভাবে পর্যবেক্ষণে করেছেন তিনি। রুদ্রনীল যে একুশের নির্বাচনের আগে ফের সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরছেন, তা একপ্রকার নিশ্চিতই বলা যায়। নিজের মুখেই তিনি বলেছেন, “আমি কেন, যে কোনও মানুষই যখন বহু মানুষের উপকার করতে চাইবেন, তখনই তাঁকে রাজনীতির পথে গিয়ে সরকার গড়ার জায়গায় পৌঁছতে হবে।”
[আরও পড়ুন: কৃষক বিক্ষোভের মধ্যে বিদেশে ঘুরছেন কেন? কঙ্গনার প্রশ্নের মোক্ষম জবাব দিলেন দিলজিৎ]
এখন প্রশ্ন হল, রাজনীতিতে তো ফিরবেন, তাহলে কোন দলে যাবেন রুদ্রনীল? কৌশলী তারকা এ বিষয়ে এখনও ‘স্পিকটি নট’। আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন, রাজ্য রাজনীতির উত্থান-পতনের কোনও ট্রেন্ডই তাঁর নজর এড়ায়নি। তবে, আপাতত কিছুটা সময় তিনি পরিস্থিতি বুঝে নিতে চাইছেন। আবার, শাসকদলের একাংশের কার্যকলাপে যে তিনি বিশেষ খুশি নন, সে ইঙ্গিতও তাঁর কথায় স্পষ্টই মিলেছে। টলিউডের ‘চ্যাপলিন’ বলছেন, “আমি ৭ বছর ধরে প্রশাসনিক পদে থেকে অনেক দায়িত্ব সামলেছি। আমি দেখেছি কোনটা ভুল, আমি দেখেছি কোনটা আরও ভাল হলে মানুষের উপকার হত। আমি দেখেছি আমলাতন্ত্রের ফাঁস কাকে বলে। আমি দেখেছি রাজনৈতিক দলের অ্যাজেন্ডার জন্য কত কাজ থমকে গিয়েছে।” অনেকটা বিরোধী শিবিরের সুরেই অভিনেতাকে বলতে শোনা গেল, “আসলে এখন যেটা চলছে, সেটা অনেকটা তরজার মতো। কিছু প্রতিশ্রুতি, যা আসলে মাস ছ’য়েক পরে আর বাস্তব হবে না, সেই ধরনেরও বেশ কিছু প্রকল্পও চলছে।”
দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক কর্মীদের উদ্দেশেও স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন রুদ্রনীল। তাঁর সাফ কথা, “এমন নেতা কেউই দেখতে চায় না, যারা সামান্য কিছুদিন রাজনীতি করেই লোকনাথের মাদুলি থেকে সোনার চেন গলায় দিয়ে ঘুরছেন।” প্রশ্ন উঠছে, এক্ষেত্রে কি শাসকদলের নিচুতলার কর্মীদের নিশানা করলেন অভিনেতা? আর সেটা যদি হয়ে থাকে, তাহলে তো এই বার্তার মধ্যেই তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ইঙ্গিত লুকিয়ে আছে। ইঙ্গিতপূর্ণভাবে বর্তমান রাজ্য রাজনীতিতে দলবদলের যে চল শুরু হয়েছে, সেই চলকেও ঘুরিয়ে সমর্থন করেছেন তিনি।