সুকুমার সরকার, ঢাকা: শেয়ারে ধস নামার পর ভারতের শিল্পগোষ্ঠী আদানির বিদ্যুৎ বাংলাদেশে (Bangladesh) রপ্তানি নিয়ে ওপার বাংলায় ব্যাপক আলোচনা চলছে। বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য ভারতের ঝাড়খণ্ডে আদানি গ্রুপ নির্মাণ করেছে ১৬০০ মেগাওয়াটের দুই ইউনিটের বিদ্যুৎকেন্দ্র। সকল জল্পনা-কল্পনার মুখে ছাই দিয়ে ঢাকায় (Dhaka)বিদ্যুৎমন্ত্রী বলেছেন, ”আদানির বিদ্যুৎ নিয়ে যেসব কথা বলা হচ্ছে, তার কোনও ভিত্তি নেই। আমরা প্রতিযোগিতামূলক বাজারদরেই বিদ্যুৎ পাব। এ নিয়ে কোনও সংশয়ের সুযোগ নেই। বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য ঝাড়খণ্ড কেন্দ্রটির একটি ইউনিট থেকে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুও হয়েছে।”
ঢাকায় বাংলাদেশের (Bangladesh) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, আগামী মাসেই বাংলাদেশে আসছে আদানির বিদ্যুৎ। এই বিদ্যুতের দাম নিয়ে কোনও সমস্যা নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, মার্চ মাস থেকেই আদানি বিদ্যুৎ (Electricity) কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ বাংলাদেশের গ্রিডে (Grid) আসছে। এর দাম পায়রা কেন্দ্রের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে বেশি হবে না।
আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের কমিশনিং হবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। এই তথ্য জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ”বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানি নিয়ে কোনও শঙ্কা নেই। আদানির বিদ্যুৎ নিয়ে যেসব কথা হচ্ছে তার কোনও ভিত্তি নেই। আমরা প্রতিযোগিতামূলক বাজারদরেই বিদ্যুৎ পাব।” তিনি আরও তথ্য দিয়েছেন, আগামী এপ্রিলে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও বিদ্যুৎ পাবে বাংলাদেশ। মার্চে প্রথম ইউনিট থেকে আসবে ৭৫০ মেগাওয়াট। দ্বিতীয় ইউনিট থেকে আরও ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে এপ্রিল মাসে। বেশ কিছু কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। রামপাল এসেছে, এসএস পাওয়ার আসবে, বরিশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র আসবে। সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেচ মরশুম নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
[আরও পড়ুন: ‘শাস্ত্রের নামে অনেক পণ্ডিত যা বলেন, তা আসলে মিথ্যা’, বিস্ফোরক মন্তব্য মোহন ভাগবতের]
এদিকে আদানির প্রথম ইউনিটের ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের পুরোটাই বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল জেলাগুলিতে সরবরাহ করা হবে। এতে ওই অঞ্চলে দীর্ঘদিনের বিদ্যুৎসংকট কেটে যাবে। আদানির বিদ্যুৎ দেশের উত্তরাঞ্চলে সরবরাহের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং বগুড়ায় দুটি ৪০০ কেভির গ্রিড সাবস্টেশন নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। পিজিসিবি সূত্রে জানা যায়, আদানির বিদ্যুৎ দেশে আমদানির জন্য এরই মধ্যে ভারত সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের মনাকষা থেকে রহনপুর পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার ৪০০KV সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এই সঞ্চালন লাইন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২২৬ কোটি টাকা।
[আরও পড়ুন: আস্তাকুঁড় থেকে কানাডায়, ‘বাবা-মা’ খুঁজে পেল ঝাড়গ্রামের পিঁপড়েয় খুবলে খাওয়া খুদে]
বর্তমানে ভারত (India) থেকে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বিপিডিবি। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় আসছে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং ত্রিপুরা দিয়ে কুমিল্লায় আসছে ১৬০ মেগাওয়াট। আদানির প্রথম ইউনিটের ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত করা গেলে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ দাঁড়াবে এক হাজার ৯৬০ মেগাওয়াটে। আর বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুরো সক্ষমতা (এক হাজার ৪৯৫ মেগাওয়াট) গ্রিডে সরবরাহ হলে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে দুই হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াটে, যা দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ১০ শতাংশ। বিদ্যুৎ বিভাগ ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।