সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে রেশন দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে মাথা ফেটেছিল ইডি আধিকারিকের। কয়েক মিনিটের মধ্যে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়ে তদন্তকারীদের উপর চড়াও হয়। তার পরেও ৫৫ দিন ধরে দিব্যি ঘুরে বেরিয়েছেন সন্দেশখালির ‘বাঘ’ শাহজাহান। অন্তরালে থেকে মাঝে মাঝেই দিয়েছেন বার্তা। ধর্ষণ, গণধর্ষণ, চাযের জমি দখল করে ভেড়ি বানানোর মতো অভিযোগ সত্বেও শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীরা ‘পাশে’ দাঁড়িয়েছেন সন্দেশখালির ‘বাহুবলী’র। তাৎপর্যপূর্ণভাবে নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুরের পর মহিলাদের নেতৃত্বে বেনজির গণবিক্ষোভ দেখছে রাজ্য। অথচ প্রায় দুমাস ধরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। শাহজাহানকে গ্রেপ্তারিতে এত অনীহা কেন, বার বার প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। শেষপর্যন্ত গ্রেপ্তারিতে দেরি নিয়ে আদালতকেই ‘কাঠগড়া’য় তুললেন দক্ষিণবঙ্গের এডিজি সুপ্রতিম সরকার।
বৃহস্পতিবার সকালে মিনাখাঁ থানায় সাংবাদিক বৈঠক করে দক্ষিণবঙ্গের এডিজি বললেন, “ইডি আধিকারিকের উপর হামলার ঘটনায় ন্যাজাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন ইডির ডেপুটি ডিরেক্টর। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়। কিন্তু এর কিছুদিনের মধ্যে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে তদন্তে স্থগিতাদেশ চায় ইডি। সেই আর্জি মঞ্জুর করে তদন্তে স্থগিতাদেশ দেয় আদালত। ফলে সেই মামলার তদন্ত, গ্রেপ্তারি বা অন্যান্য আইনি পদক্ষেপের ক্ষেত্রে আমাদের কিছু আইনি বাধা ছিল।” সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরেও তিনি সাফ বলেন, “আমি তো বলেইছি, আইনি বাধায় শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।”
[আরও পড়ুন: বনগাঁর খুনের মামলায় শাহজাহান ঘনিষ্ঠ উত্তম সর্দারের জেল হেফাজত]
সুপ্রতিম সরকার আরও জানান, ৫ জানুয়ারি ইডি আধিকারিকরা আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও ফেব্রুয়ারি মাসে শাহজাহানের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ জমা পড়ে। কিন্তু সেই সমস্ত অভিযোগ দুই থেকে তিন বছর পুরনো। তাঁর কথায়, “পুরনো অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এই সমস্ত অভিযোগের স্বপক্ষে তথ্যপ্রমাণ জোগার করতে ও তদন্ত করতে কিছুটা সময় লাগে।” তাঁর আরও সংযোজন, “যে মামলায় আমরা পদক্ষেপ করতে পারতাম, তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতে পারতাম সেই মামলায় আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল, তাই গ্রেপ্তার করা যায়নি।”
তৃণমূল সরকারের দেড় দশকের রাজত্বে মহিলাদের নেতৃত্বে এহেন বিক্ষোভ কার্যত নজিরবিহীন। তার পরেও একাধিক সভা থেকে শাহজাহানের পাশে দাঁড়িয়েছেন শাসকদলের নেতা-নেত্রীরা। সভা থেকে ইডিকে নিশানা করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপধ্যায়। শান্তিবজায় রাখার আর্জি জানিয়েছেন। তবু শান্তি ফেরেনি। দফায়-দফায় বিক্ষোভ হয়েছে। শেষপর্যন্ত শাহজাহানকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। কিন্তু মহিলাদের ধর্ষণ, গণধর্ষণ, যৌন হেনস্তার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সন্দেশখালির ‘বেতাজ বাদশা’র বিরুদ্ধে এই ধারায় মামলা রুজু হয়নি। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে রাজনৈতিক মহল।