কৃষ্ণকুমার দাস,ঢাকা: ষড়যন্ত্র ছিল, ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। এসব ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সবাইকেই সতর্ক থাকতে হবে। সকল সদস্যকে ঐক্যবদ্ধ থেকে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। আর তা হলেই কোনও ষড়যন্ত্রই সফল হবে না। সংসদীয় নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর বুধবার ঢাকার শের ই বাংলা নগরের সংসদভবনে দলীয় সাংসদদের সতর্ক করে এই রকমই বললেন আওয়ামি লিগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশের বেশি গরিষ্ঠতা পেয়েছে আওয়ামি লিগ। যা নিয়ে এদিন আত্মবিশ্বাসী হাসিনা বলেন, ‘‘গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে, জনগণের বিজয় হয়েছে। আর জনগণ সঙ্গে থাকলে বিশ্বের কোনও ষড়যন্ত্রকারী বাংলাদেশের কোনও ক্ষতি করতে পারবে না।’’উল্লেখ্য, নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশের পর মঙ্গলবারই আমেরিকা ও ইংল্যান্ড এবারে বাংলাদেশে নির্বাচন ‘সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়নি’ বলে মন্তব্য করেছিল। আর বুধবার ওই দুই রাষ্ট্রের ‘বন্ধু’ অস্ট্রেলিয়ার বিদেশমন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘‘বাংলাদেশে এমন এক পরিবেশে নির্বাচন হয়েছে, যেখানে সব পক্ষ অর্থপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্যভাবে অংশ নিতে পারেনি– তা দুঃখজনক।’’ ভারত, চিন, রাশিয়া-সহ প্রায় ৫০টি দেশ বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও আমেরিকা-সহ তিন শক্তিধর রাষ্ট্রের আপত্তিকর মন্তব্য শেখ হাসিনা যে আদৌ ভালো চোখে দেখছেন না তা সাংসদদের দেওয়ায় সতর্কবার্তায় স্পষ্ট।
বুধবার সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হয়েই প্রথমে ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাবর্দি ময়দানে গিয়ে জনসভায় ভাষণ দিয়ে দেশবাসীকে ভোটে তাঁকে সমর্থন করায় ‘ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা’ জানান হাসিনা। বাধা উপেক্ষা করে ভোট দেওয়ায় জনগণের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে মুজিবকন্যা বলেন, ‘‘আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া নিয়ে অনেকের অনেকরকম স্বপ্ন ছিল। অনেকে নির্বাচন ব্যর্থ করতে চেয়েছিল, কিন্তু তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। মানুষ যেন ভোট দিতে না পারে সেই চেষ্টা করা হয়েছিল।’’
[আরও পড়ুন: ‘ধারাবাহিক সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ’, মোদিকে কৃতজ্ঞতা জানালেন হাসিনা]
এর পরই নাম না করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে হাসিনা বলেন, ‘‘আমার অবাক লাগে সামরিক একনায়করা যখন ভোট কারচুপি করে ক্ষমতায় আসে সেই নির্বাচন নিয়ে কেউ কথা বলত না। যখন নির্বাচন মানে ছিল ১০টা হোন্ডা ২০টা গোণ্ডা নির্বাচন ঠান্ডা। আমরা যখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি তখনই আমাদের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন।’’ পরে জনসভা থেকেই সটান বঙ্গভবনে পৌঁছে রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিনের কাছে সরকার গঠনের দাবি জানান। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে নতুন সরকার গঠনের জন্য অনুমতি দেন রাষ্ট্রপতি। নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠানের পর আওয়ামি লিগের সংসদীয় দলের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। আওয়ামি লিগের সংসদ সদস্যরা দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বেলা ১০টার পর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছ থেকে শপথ নেন। পরে সংসদ ভবনেই আওয়ামি লিগের সংসদীয় দলের সদস্যদের বৈঠক বসে। আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৈঠকে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন সংসদ নেতা হিসাবে।
একাদশ সংসদের চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী লিটন তাতে সমর্থন জানান। পরে তা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়। বৈঠকে সংসদের ডেপুটি লিডার নির্বাচন করা হয় বেগম মতিয়া চৌধুরীকে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বর্তমান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে নতুন সংসদেও স্পিকারের দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব করবে আওয়ামি লিগ। আগের মত শামসুল হক টুকুই ডেপুটি স্পিকার হিসাবে থাকবেন। একাদশ সংসদের চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী দ্বাদশেও একই দায়িত্ব সামলাবেন।