শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: এবার আর কনকনে ঠান্ডায় নয়। এবার ঘোর বর্ষায় বাঘের দেখা মিলল নেওড়ায়। সমতল থেকে এগারো হাজার ফুট উচুতে পাহাড়ি জঙ্গল পথে রাজকীয় মেজাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। ২০১৭ সাল থেকে একাধিক বার ক্যামেরায় বাঘ বন্দী হলেও এই প্রথম বার বর্ষার পাহাড়ি জঙ্গলে দেখা মিলল দক্ষিণরায়ের। গত মে,জুন ও জুলাই মাসে পাহাড়ের ৮ থেকে ৯ হাজার ফুট উঁচুতে একবার দুবার নয়! একাধিক ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়েছে বাঘের ছবি।
গত মে মাসে সিকিমের প্যাঙ্গোলাখা অভয়ারণ্যে বনবিভাগের ট্রাপ ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল রয়্যাল বেঙ্গলের ছবি। নেওড়ার জঙ্গলের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে সিকিম ও ভুটানের জঙ্গলের। এই বাঘ সেই বাঘ কিনা খতিয়ে দেখতে সিকিম বনবিভাগের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। বয়স,গায়ের ছাপ পরীক্ষা করে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। দুর্গম নেওড়ার জঙ্গলের নিরাপত্তাও আরও বাড়ানো হয়েছে বলে গরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের বনাধিকারিক দ্বিজপ্রতীম সেন জানিয়েছেন।
১৯৯৮ সালে প্রথম বাঘের অস্তিত্বের প্রমাণ মেলে নেওড়ায়।বাঘের পায়ের ছাপ। খাবারের উচ্ছিষ্ট। নখের দাগ সহ একাধিক প্রমাণ মিললেও সমতল থেকে ১১ হাজার ফুট উচুতে, ১৫৯.৮৯ বর্গ কিলোমিটার পাহাড়ি জঙ্গলে চাক্ষুস দেখা মেলেনি তার।উনিশ বছর পর ২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারি ভোরে লাভা থেকে সামান্য দূরে পেদং যাবার রাস্তায় নিজের মোবাইল ক্যামেরায় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ছবি বন্দি করে বনমহলে চাঞ্চল্য ফেলে দেন আনমোল ছেত্রী নামে স্থানীয় এক যুবক।
[আরও পড়ুন: ‘বলেছিলাম স্মোক করলে ব্ল্যাক কফি খেও না’, বন্ধু বুদ্ধর স্মৃতিচারণায় বিমান বসু]
আরও বাঘের অস্তিত্ব খুঁজে পেতে এরপর এলাকায় ট্র্যাপ ক্যামেরা বসায় বনদপ্তর। তাতে ওই বছর ২৩ জানুয়ারি প্রথম সরকারি খাতায় নজরবন্দি হয় বাঘ। এর পর ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ৫ জানুয়ারি ২০১৮ এরপর ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি বাঘ বন্দি হয় ক্যামেরায়। মাঝে এক বছর দেখা না দিলেও ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর এবং গত বছর ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ক্যামেরাবন্দি হয় বাঘের ছবি।
এই বছর বর্ষার মরশুমে দেখা মিলল একের পর এক বাঘ। একটি ছবির সঙ্গে আর একটি ছবির মিল নেই। স্বাভাবিকভাবেই একাধিক বাঘের উপস্থিতির সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না বনদপ্তর।বনাধিকারিক দ্বিজপ্রতীম সেন জানান, অনেকটা এলাকা নিয়ে বাঘেরা ঘোরাফেরা করতে ভালোবাসে। ভুটান এবং সিকিমের জঙ্গলের সঙ্গে এই জঙ্গলের যোগ রয়েছে। সম্প্রতি সিকিমেও বাঘ দেখা গিয়েছে। সেই কারণে সিকিম বনবিভাগের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। তারাও তাদের ওখানে ক্যামেরাবন্দি বাঘের সঙ্গে এই বাঘের ছবির মিল রয়েছে কিনা পরীক্ষা করে দেখছেন। নেওড়ার জঙ্গলের নিরাপত্তা আরও আঁটসাঁট করা হয়েছে বলে বনাধিকারিক জানিয়েছেন।