শুভঙ্কর বসু: হিউ হেফনার থেকে কবীর বেদী। ক্লিন্ট ইস্টউড থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প। কারও পরিণয় ছিয়াশিতে, তো কারও আবার সত্তরে। কিন্তু তাঁদের বেলায় ‘কোনও প্রশ্ন ওঠেনি।’ যত ঝঞ্ঝাট কিনা এ বঙ্গের ‘বৃদ্ধ’ অধ্যাপকের! যার জের সামলাতে আদালতকেই শেষপর্যন্ত বলতে হল, বিয়ের কি কোনও বয়স হয়?
ফকিরচাঁদ কলেজের অধ্যাপক ড. দেবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সামান্যই একটা ‘অপরাধ’ করেছিলেন মাত্র ৭৪ বছর বয়সে। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর ‘বিয়ে’ করে বসেছিলেন। কিন্তু বৃদ্ধস্য ভার্যার স্বীকৃতি মেলেনি সরকারিভাবে। স্ত্রী হিসাবে শাঁখা-সিঁদুরের অধিকার মিললেও অধ্যাপকের স্ত্রী হিসাবে অবসরকালীন সুবিধা তাঁকে দিতে নারাজ কর্তৃপক্ষ। আর গোলমালের শুরু সেখান থেকেই। কেবলমাত্র সরকারি কর্মীরাই অবসরগ্রহণের পর বিয়ে করলে তাঁর অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা পান স্ত্রী। কিন্তু সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কোনও প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সেই সুবিধা নেই। মানে, বিয়ে করলে করতে হবে অবসর নেওয়ার আগেই! এখানেই সটান প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাই কোর্ট।
[নতুন বছরে মমতার উপহার, ৫ লক্ষ মানুষকে বাড়ি]
রাজ্য অর্থ দপ্তরের যে নির্দেশিকার বলে এই নিয়ম চালু ছিল তা খারিজ করে আদালত জানিয়ে দিল, এমন নির্দেশিকা পক্ষপাতদুষ্ট ও অন্যায্য। অর্থাৎ, মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত যে কোনও বয়সেই যাওয়া যেতে পারে ছাঁদনাতলায়। এবং সেই স্ত্রীও পাবেন স্বামীর অবসরকালীন ন্যায্য সব সুবিধা।
২০০১ সালে অবসরগ্রহণের পর ২০১৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর দেবপ্রসাদবাবু রেজিস্ট্রি করেন সাথী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। এরপর অবসরকালীন ভাতা পেনশন পেমেন্ট অর্ডারে(পিপিও) সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর নাম নথিভুক্ত করতে ডাইরেক্টর অফ পাবলিক ইনস্ট্রাকশনের(ডিপিআই) কাছে আবেদন করেন। কিন্তু আবেদনটি খারিজ হয়ে যায় অর্থ দপ্তরের এক নির্দেশিকার (১৮৮৬—এফ পেন) বলে। যেখানে বলা আছে শুধুমাত্র সরকারি কর্মীরাই ওই সুবিধা পাবেন। বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে দেবপ্রসাদবাবুর আইনজীবী পঙ্কজ হালদার দাবি করেন, ওই নির্দেশিকা সংবিধানের ১৪, ১৬ ও ২১ নম্বর ধারার পরিপন্থী। যেখানে ধর্ম, জাতি এবং লিঙ্গ সাম্যের সমানাধিকারের কথা বলা হয়েছে। বিচারপতি জানান, আইন করে একটি অংশের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়া যায় না। নির্দেশিকা খারিজ করে অবিলম্বে দেবপ্রসাদবাবুর স্ত্রী সাথী মুখোপাধ্যায়কে সমস্ত সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
[নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ২০১৮ বার ঠান্ডা জলে ডুব যুবকের]
কিন্তু আদালতের এমন নির্দেশের পরও বিয়ে করে অবসরকালীন সুবিধা পাচ্ছেন না সদ্য বিবাহিতরা। ২০০১ সালে স্ত্রীর মৃত্যুর পর ২০০৬ সালে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন অবসরপ্রাপ্ত আরেক শিক্ষক ফণিভূষণ হালদার। তিনিও বঞ্চিত হয়েছেন। আদালতের নির্দেশের পর কেন এমনটা হচ্ছে? মঙ্গলবার ডিপিআই-এর কাছে তার জবাব চেয়েছেন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী।
[লটারিতে কোটিপতি দুই বন্ধু, টিকিট বিক্রেতাও লাখপতি]
The post ‘বিয়ের কোনও বয়স হয় না’, ৭৪ বছরের বৃদ্ধের স্ত্রীকে স্বীকৃতি হাই কোর্টের appeared first on Sangbad Pratidin.