ইন্ডাস্ট্রির নেপোটিজম, ফেবারিটিজম, মাফিয়ারাজ একাধিক বিতর্কের মাঝেই মুক্তি পেল ‘সড়ক ২’। হাজারো বিতর্কের মুখে ঝামা ঘষে আদৌ কি ফিনিক্স পাখির মতো ডানা ঝাপটে উড়তে পারলেন মহেশ ভাট? বছর ২০ পর পরিচালকের হটসিটে তাঁর কামব্যাকই বা কেমন হল? নাকি হাইওয়েতে পিছলে গেল ‘সড়ক’ সিক্যুয়েলের চাকা? লিখছেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ।
পরিচালক-মহেশ ভাট
অভিনয়ে- সঞ্জয় দত্ত, আলিয়া ভাট, আদিত্য রায় কাপুর, যিশু সেনগুপ্ত, মকরকন্দ দেশপাণ্ডে
সিক্যুয়েলের শুরুয়াৎ
নয়ের দশকের স্ক্রিন কাঁপানো সেই হিট জুটি- সঞ্জয় দত্ত (Sanjay Dutt) এবং পূজা ভাটের (Puja Bhatt) রোম্যান্স, আবেগের রেশ ধরেই সিক্যুয়েলের শুরুয়াৎ। মাঝবয়সি ‘দেবদাস’, জীবন নিয়ে উদাসীন সঞ্জয়ের জীবনে একরাশ খোলা হাওয়ার মতো প্রবেশ করে আর্যা। এক প্রাণবন্ত, উচ্ছ্বল মেয়ে। যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন আলিয়া ভাট (Alia Bhatt)। অন্যদিকে আর্যার প্রেমিকের চরিত্রে রয়েছেন আদিত্য রায় কাপুর (Aditya Roy Kapoor)। বাবার ভূমিকায় যিশু সেনগুপ্ত। আর্যাকে খুন করার ছক কষে এক গুরুজি, যে চরিত্রে দেখা গেল মকরকন্দ দেশপাণ্ডেকে। রহস্য-রোমাঞ্চে মোড়া ট্রেলার ঠিক যতটাই আশা জাগিয়েছিল, সিনেমা দেখতে দেখতে প্লট এবং স্তরভেদের মাঝখানে কেমন যেন সেই কৌতূহল উত্তেজনা সবটাই দমে গেল!
বাস্তব বিবর্জিত গল্প
যাবতীয় বিতর্ক সরিয়ে রেখে শুধু সিনেমার কথা বললে, তাতেও ব্যর্থ পরিচালক। কারণ, পরিচালক হিসেবে বছর কুড়ি পর ফিরে মহেশ ভাট বোধহয় কোথাও গিয়ে দর্শকদের নাড়ি মাপতেই ভুলে গিয়েছেন। ভুলে গিয়েছেন যে, এখনকার দর্শকরা বেশ স্মার্ট! পয়সার খেলা, সম্পত্তি, অন্ধবিশ্বাস, তন্ত্রমন্ত্রকে হাতিয়ার করে সিনেমার প্লট বাঁধলেও বাস্তব বিবর্জিত গল্প মাথা ধরিয়ে দেওয়ার জোগাড়! এই সিনেমা দেখতে বসে কী, কেন, কোথায়, কীভাবে… যাবতীয় প্রশ্নবোধক চিহ্নগুলিকে শিকেয় তুলে রাখলেই ভাল। অযথা সিনেমার দৈর্ঘ্য বাড়ানো হয়েছে। এই গল্প পরিবেশনের জন্য ২ঘণ্টা ১৪ মিনিটের কোনও প্রয়োজনই পড়ে না!
[আরও পড়ুন: ‘ক্লাস অফ 83’ ফিল্ম রিভিউ: আন্ডারওয়ার্ল্ডের সব বারুদ মজুত থাকলেও আগুন জ্বালাতে ব্যর্থ ববি]
পাঁকে পদ্ম সঞ্জয় দত্ত ও যিশু সেনগুপ্ত
তবে পাঁকে পদ্ম ফোটার মতো সিনেমার ২ চরিত্রের কথা উল্লেখ করতেই হয়। প্রথমত সঞ্জয় দত্ত। তাঁর অভিনয় নিয়ে আলাদা করে বলার জন্যে ‘সড়ক ২’র (Sadak 2) প্রয়োজন হয় না! তিনি সবরকম চরিত্রেই সাবলীল। এই ছবিতেও তার অন্যথা হয়নি। দ্বিতীয়ত, যিশু সেনগুপ্ত। যিনি গল্পে আলিয়ার বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ধূসর চরিত্রে যিশুর অভিনয় মনে রাখার মতো। সিনেমা শেষ হওয়ার পরও যার রেশ থেকে যায়। এযাবৎকাল বলিউডে যেসব সিনেমায় যিশু অভিনয় করেছেন, সেগুলিতে স্ক্রিন প্রেজেন্সের দৈর্ঘ্য সেরকম না হলেও নজর কেড়েছেন। তবে ‘সড়ক ২’ এক নতুন যিশুকে আবিষ্কার করল বললেও অত্যুক্তি হয় না! ভগবানের নাম করে ভয়ের ব্যবসা খুলে বসা ‘আধ্যাত্মিক’ গুরুজির চরিত্রে মকরকন্দ দেশপাণ্ডের অভিনয়ও বিশেষভাবে উল্লেখ্য।
প্লাস পয়েন্ট বলতে
প্রতিশোধস্পৃহ মেয়ের চরিত্র থেকে সরে এসে কখন যে প্রেমিকার চরিত্রে জুতো গলিয়ে ফেললেন আলিয়া ভাট, বোঝা দায়! অভিনেত্রী হিসেবে ভাল হলেও এই ছবিতে তাঁর পারফরম্যান্স মন্দের ভাল। পরিচালকের বাধ্য ছাত্রীর মতোই চরিত্র চিত্রায়ণ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন! আদিত্য রায় কাপুরের এক্সপ্রেশন আরও খুরোধার হলে চরিত্র প্রাণ পেত। প্লাস পয়েন্ট বলতে ‘সড়ক ২’ সিনেমার প্রত্যেকটি গান এবং সিনেম্যাটোগ্রাফি। সব উপকরণ মজুত থাকলেও দীর্ঘদিন খুন্তি নাড়ার অভ্যেস না থাকায় রান্নায় বেমালুম ‘অতি-মশলা’ দিয়ে ফেলেছেন পরিচালক! কারণ, অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে সমাজকে বার্তা দিতে চাইলে এই ছবিকে ভিন্নভাবেও তুলে ধরা যেত। তবে সঞ্জয় দত্ত আর যিশু সেনগুপ্তের পারফরম্যান্সের খাতিরে এই ছবির জন্য একবার হটস্টারে ঢুঁ মারতেই পারেন।
[আরও পড়ুন: ‘খুদা হাফিজ’ রিভিউ: রসদ মজুত থাকলেও ঠিক জমল না]
The post সড়ক ২’ রিভিউ: গাঁজাখুরি প্লটে সিনেমার ভরাডুবি appeared first on Sangbad Pratidin.