নিরুফা খাতুন: হাতে গোনা মাত্র ক’টা দিন বাকি। ১ অক্টোবর থেকে পুজো শুরু। নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই তৌফিক-শাকিলদের। এখন ৭৪এ এজেসি বোস রোডের ফুটপাথের উপর জোরকদমে মণ্ডপ তৈরির কাজ চলছে। তদারকি করছেন তৌফিক-শাকিলরা। ওয়াসিম, আব্দুর রহমান একমাস আগে কুমোরটুলি গিয়ে প্রতিমার বায়না দিয়ে এসেছে। পুজোর ক’টাদিন এলাকায় খাওয়াদাওয়া হবে। কোনদিন কী কী মেনু হবে? ভোগের দিন কী কী থাকবে জয়ন্ত-শর্মিলাদের নিয়ে তালিকা তৈরিতে ব্যস্ত মুন্না। উদ্যোগের অভাবে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় পুজো বন্ধ হয়েছিল আট বছর আগে। সংখ্যালঘুদের উদ্যোগে গত বছর থেকে ফের পুজো শুরু হয়েছে। এবছর আরও ধুমধাম করে পুজোর আয়োজন করছেন তৌফিক-শাকিল-ওয়াসিমরা।
কলকাতা পুরসভার ৬২ নম্বর ওয়ার্ডে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সংখ্যালঘু এলাকা। মূলত অবাঙালি মুসলিমদের বাস। এখানে হাতেগোনা কয়েক ঘর বাঙালি হিন্দু পরিবার রয়েছে। তাঁদেরই উদ্যোগে প্রথমে এখানে ছোট করে পুজো হত। আর্থিক কারণে পুজো বন্ধ হয়ে যায় ২০১৩ সালে। গত বছর থেকে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের পুজো ফের চালু করার উদ্যোগ নেন স্থানীয় সংখ্যালঘুরা। খুঁটিপুজো থেকে শুরু, মণ্ডপ সাজানো, প্রতিমা নিয়ে আসা, সব দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন শাকিল-তৌফিকরা। ইদের শামিয়ানা যেখানে টাঙানো হত, সেখানে উঠছে মণ্ডপ।
[আরও পড়ুন: সল্টলেকে বিজেপির দুর্গাপুজোয় মহিলা পুরোহিত, আসতে পারেন নাড্ডা-শাহ]
পুজো উদ্যোক্তা মহম্মদ তৌফিক রহমান বলেন, ‘‘উৎসবের কোনও রং হয় না। আর্থিক কারণে পুজো বন্ধ হয়েছিল। এলাকায় সংখ্যালঘুদের উদ্যোগে ফের পুজো শুরু হয়। পুজোর জন্য কোনও চাঁদা নেওয়া হয় না। পুরো খরচ এলাকার সংখ্যালঘুরাই বহন করেন। ইদের মতো এখন পুজোতেও সবাই মিলে আনন্দ করি। একসঙ্গে ভোগ খাই। গত বছর পুজোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই এবার আগে থেকেই পুজোর তোড়জোড় শুরু করে দেন তৌফিকরা। নিয়ম মেনে খুঁটিপুজো হয়েছে। গত বছর প্রতিমা একটু ছোট ছিল। এবার একটু বড় প্রতিমা নিয়ে আসা হচ্ছে। ১ অক্টোবর থেকে পুজো মণ্ডপ খুলে দেওয়া হবে।
পুজো আয়োজকরা জানান, পুরোহিত দিয়ে সন্ধিপুজো, কলা বউ স্নান, অঞ্জলি, ভোগ, সবই পুঙ্খানুপুঙ্খ নিয়ম মেনে করা হয়। ব্রাহ্মণ এনে ভোগ রান্না হয়। বিসর্জনেও আমরা সকলে যাই। সম্প্রীতির পাশাপাশি সমাজসেবাতেও রয়েছে এই সংখ্যালঘু পুজো কমিটি। এবার পুজোয় বাজেট থেকে দুস্থ চার বাচ্চাকে স্কলারশিপ দেওয়া হচ্ছে। মণ্ডপে থাকছে ফ্রিজের ব্যবস্থা। সেখানে বিনামূল্যে ঠান্ডা পানীয়, জুস, লস্যি দর্শকদের জন্য রাখা থাকছে।