সুব্রত বিশ্বাস: একশো, পাঁচশো বা হাজার নয়, রেলের টাইম টেবিল বিক্রির হিসাবে প্রায় চার কোটি টাকার গরমিল! শিয়ালদহ (Sealdah)ডিভিশনে প্রাথমিক নিরীক্ষায় ধরা পড়া এই অনিয়মে চক্ষু চড়কগাছ রেলকর্তাদের। যাবতীয় নথিপত্র সমেত তলব করা হয়েছে। কেন এই গরমিল, তা জানতে চেয়ে কমার্শিয়াল বিভাগকে চিঠি দিয়েছে অ্যাকাউন্টস বিভাগ। নভেম্বরের প্রথম দিকে এই চিঠি দিলেও কোনও উত্তর দেয়নি কমার্শিয়াল বিভাগ, এমনই অভিযোগ তুলেছে অ্যাকাউন্টস বিভাগ।
এই নিয়ে দুই বিভাগের চাপান-উতোর চললেও প্রকৃত বিষয়টি আড়ালেই রয়ে গিয়েছে। বছরের শেষ দিনে শিয়ালদহের ডিআরএম এস পি সিং বিষয়টি তাঁর অজানা বলে জানালেও পরে সেই বিষয়েই ভুলক্রমে চার হাজারের জায়গায় চার কোটি হয়েছে বলে জানান। পুরো বিষয়টি সদর দপ্তরে পাঠিয়ে সঠিক সংখ্যা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: বর্ষশেষের পার্টিতে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, পর্ণশ্রীতে ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু যুবকের]
গত নভেম্বরে শিয়ালদহের ডেপুটি স্টেশন সুপার (কমার্শিয়াল)কে লিখিতভাবে অ্যাকাউন্টস বিভাগ জানায়, টাইম টেবিল বিক্রিতে দু’ ধরনের ব্যালান্স শিটে দু’ধরনের টাকার অঙ্ক দেখানো হয়েছে। যাতে বিস্তর গরমিল। সাড়ে চার কোটি টাকার ফারাক। অনলাইন ব্যালান্স শিটে টাইম টেবিল বিক্রির হিসাব দেখানো হয় ৪,০০,৪৭, ৪৭১.৮০ টাকা। এরপর অ্যাকচুয়াল আউটস্ট্যান্ডিং টাইম টেবিল থেকে আয় দেখানো হয় ৪,৫০০ টাকা। একই বিষয়ে আয়ের রিপোর্টে এই বিস্তর ফারাকে চোখ কপালে উঠে যায় অ্যাকাউন্টস বিভাগের। তড়িঘড়ি বিষয়টি জানতে চেয়ে ওই বিভাগের ট্রাভেলিং ইন্সপেক্টর ডেপুটি স্টেশন সুপারকে (কমার্শিয়াল) প্রকৃত তথ্য দিতে বলেন। দেড় মাসের বেশি সময় কেটে গেলেও উত্তর না পেয়ে বিমর্ষ বোধ করছেন অ্যাকাউন্টস বিভাগের আধিকারিকরা।
বছর খানেক ধরে রেলে দু’ধরনের ব্যালান্স শিট জমা দেওয়া হয়। প্রথমে অনলাইন, পরে অ্যাকচুয়াল ব্যালান্স শিট জমা পড়ে। দু’টির মধ্যে সামান্য ব্যবধান হতে পারে। কিন্তু সাড়ে চার কোটির ব্যবধানে যথেষ্ট সন্দিহান হয়ে পড়ে অ্যাকাউন্টস বিভাগ। ডিআরএম এই বিস্তর ফারাককে ‘ভুল’ বলে জানালেও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার কথা বলেছেন একাধিক বিভাগীয় আধিকারিক। তাঁদের কথায়, টাইম টেবিল স্টক আইটেম। কাউন্টারে জোগান দেন ডেপুটি স্টেশন সুপার। অন্য স্টেশনে চাহিদা অনুযায়ী পার্সেলের মাধ্যমে পাঠান স্টক বিভাগের বুকিং সুপারভাইজার।
[আরও পড়ুন: বিপদ বাড়িয়েছে করোনার নতুন স্ট্রেন, লন্ডন ফেরত যাত্রীদের বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা শুরু পুরসভার]
তাঁরা জানাচ্ছেন, ২০১৮ সালে প্রচুর ‘অ্যাট এ গ্ল্যান্স’-এর হিসাব ছিল না। পরবর্তী সময়ে হিসাব মেলানো যায়নি। যার ফলে ডেবিট-ক্রেডিটও মেলানো যাচ্ছে না। রিটার্ন সেকশন সূত্রে জানা গিয়েছে, এটিভিএম ও কেটিভিএম-এর প্রকৃত হিসাব ব্যালান্স শিটে ঢুকছে না। ফলে প্রকৃত আয়ের তথ্য নজরে আসছে না। যদিও ডিআরএম বলেন, প্রতিটি বিষয় খতিয়ে দেখা হয় হেড কোয়ার্টার্স থেকে। ডিভিশন ভুল করে সরে যেতে পারবে না। পাশাপাশি তিনি বলেন, ”ভুল হতেই পারে, খতিয়ে দেখা হবে সবটাই।”