অর্ণব আইচ: আমেরিকার নামী শেয়ার সংস্থার নাম করে পৌনে দু’কোটি টাকার সাইবার জালিয়াতি (Cyber Crime)। বিপুল টাকা লগ্নি করতে গিয়ে জালিয়াতদের ফাঁদে পা দিয়েছিলেন দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাটের এক ব্যবসায়ী। তার পর আচমকাই অনলাইনে (Online) যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় ওইসব সংস্থা। মধ্যপ্রদেশের ভোপাল থেকে গ্রেপ্তার হল সাইবার জালিয়াতি চক্রের দুই পান্ডা। এই চক্রের জাল রয়েছে দিল্লি, হরিয়ানা-সহ অন্যান্য রাজ্যে। চক্রের মাথারা এর আগেও গ্রেপ্তার হয়েছে দিল্লি পুলিশের হাতে।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত দুই যুবকের নাম অঙ্কিত পরাশর ও অঙ্কিত জৈন। কয়েকমাস আগে গড়িয়াহাটের (Gariahat) ওই ব্যবসায়ীর কাছে একটি মেল আসে। একটি নামী মার্কিন শেয়ার সংস্থার নাম করে তাঁকে মেলটি পাঠানো হয়। সংস্থাটির লোগো ও আরও কিছু অনলাইন নথি দেখে ওই ব্যবসায়ী বিশ্বাসও করে ফেলেন। সংস্থার আড়ালে অনলাইন জালিয়াতরা তাঁকে মার্কিন সংস্থায় লগ্নি করলে চড়া সুদে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। প্রথমে তিনি কম পরিমাণ টাকা লগ্নি করেন। তিনি কিছু টাকা ফেরৎ পান। তাঁকে মার্কিন স্টক এক্সচেঞ্জের (US Stock Exchange) মাধ্যমে টাকা ফেরৎ দেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়। তাই তিনি আরও টাকা লগ্নি করতে চান।
[আরও পড়ুন: স্বামী বা স্ত্রী বেসরকারি চাকরি করলেও বন্ধ করা যাবে না বাড়িভাড়া ভাতা, রাজ্যকে নির্দেশ হাই কোর্টের]
ক্রমে কয়েক দফায় তিনি ১ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা লগ্নি করেন। কিন্তু সংস্থার পক্ষ থেকে তাঁকে সুদের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছিল না। তিনি সেই টাকা ফেরৎ চান। তার পরই দেখেন, হঠাৎ মেল ও সোশাল মিডিয়ায় (Social Media) যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় ওই ভুয়া সংস্থাটি। শেষ পর্যন্ত তিনি লালবাজারের সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ ওই মেল ও লেনদেন হওয়া ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তদন্ত করতে থাকে। তাতেই জানা যায় যে, ওই পৌনে দু’কোটি টাকা জমা পড়েছে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মোট দশটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। এর মধ্যে ভোপালের একটি অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে সবথেকে বেশি, ৬৫ লক্ষ টাকা। আবার ভোপাল থেকেই যে মেলগুলি পাঠানো হয়েছিল, তাও জানা যায়।
[আরও পড়ুন: ঘাটালে লড়বেন বিজেপি ছেড়ে আসা পাপিয়া, উলুবেড়িয়ায় যুব সভাপতি, আরও ৩ আসনে প্রার্থী দিল কংগ্রেস]
ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরেই গোয়েন্দারা ভোপালে (Bhopal) গিয়ে অঙ্কিত পরাশরের সন্ধান পান। তাকে জেরা করে তারই সঙ্গী চক্রের অন্য মাথা ভোপালের বাসিন্দা অঙ্কিত জৈনের বাড়িতে লালবাজারের (Lalbazar) গোয়েন্দারা হানা দেন। অঙ্কিত জৈনকে গ্রেপ্তার করে যে মোবাইল থেকে মেল পাঠানো হয়েছিল, সেটি উদ্ধার করা হয়। তারা ওই নামী মার্কিন সংস্থার লোগো ও অন্যান্য নথি জাল করে যে অনলাইনে পাঠিয়েছিল, তার প্রমাণ মেলে। আটক হয় প্রচুর সিম কার্ড ও এটিএম কার্ড। হরিয়ানার পানিপথের একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জালিয়াতির ৫৫ লক্ষ টাকা পাঠানো হয় বলেও জানা যায়। তাদের কলকাতায় (Kolkata)নিয়ে এসে জেরা করা হচ্ছে। এর আগেও সাইবার জালিয়াতির অভিযোগে দিল্লি পুলিশের হাতে দুজন গ্রেপ্তার হয়েছে। দিল্লির রোহিনী আদালতে তাদের মামলার প্রক্রিয়াও চলছে। অন্য যে আটটি অ্যাকাউন্টে বাকি টাকা রয়েছে, সেগুলির মালিকদের সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।