সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: “সম্পাদকের প্রতি…
লাইফজ্যাকেট কোনও ফ্যাশন স্টেটমেন্ট নয়।
লাইফ জ্যাকেট কোনওভাবেই যৌন আবেদন রাখে না।
ভূমধ্যসাগরে ডুবতে ডুবতে কোনওমতে বেঁচে যাওয়া একজন শরণার্থীর কাছে লাইফ জ্যাকেট মরণবাঁচনের বিষয়”
টুইটারে লিখলেন এক সাংবাদিক। নাম জেনান মুসা। তাঁর ক্ষোভের কারণ একটি পত্রিকার প্রচ্ছদ। পত্রিকার নাম গ্ল্যামোরিয়া। মানবাধিকার নজরদারি সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের নিজস্ব পত্রিকা। তাঁদেরই ডিসেম্বর সংখ্যার বিষয় ছিল পশ্চিম এশিয়ার শরণার্থী সমস্যা। অথচ পত্রিকার মলাটজুড়ে শোভা পাচ্ছে অর্ধনগ্ন এক মডেলের ছবি। তাঁর শরীরে উর্ধ্বাঙ্গ ঢাকা লাইফ জ্যাকেটে। নিম্নাঙ্গেও একটিমাত্র লাইফ জ্যাকেট। হাসিমুখে, আরামসে ওই মডেল শুয়ে আছেন লাইফ জ্যাকেটের বিছানায়।
লিবিয়া, সিরিয়ার মতো পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির হিংসা থেকে বাঁচতে প্রতিদিনই প্রাণ নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ইউরোপে পাড়ি দিচ্ছেন অজস্র শরণার্থী। আর পালানোর জন্য বাধ্য হয়েই তাঁদের বেছে নিতে হচ্ছে ভূমধ্যসাগরের বিপজ্জনক যাত্রা। ভয়ঙ্কর সমূদ্রের গ্রাসে যেখানে গত একবছরে মৃতু্য হয়েছে কম করে ১৬০০ শরণার্থীর। সেখানে লাইফ জ্যাকেটই একমাত্র ভরসা। সেকথা বোঝাতেই অমন প্রচ্ছদ। যার জবাবে এভাবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে আক্রমণ করেন ওই সাংবাদিক-সহ গোটা বিশ্ব। সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ছিছিকার পরে গিয়েছে অ্যামনেস্টির নামে। শরণার্থী সমস্যার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে যৌনতার মোড়কে মোড়ার জন্য অ্যামনেস্টির পত্রিকা গ্ল্যামোরিয়ার নিন্দা শুরু করেছেন সবাই। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে তাদের প্রচ্ছদের ছবি আর তার সঙ্গে নিন্দা। অবশেষে চাপে পড়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
[মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নিয়ে বিবাদ, বন্ধ মার্কিন কোষাগার]
পশ্চিম এশিয়ার শরণার্থী সমস্যার মূর্ত ছবি আয়লান কুর্দি। তুরস্কের উপকূলে সমূদ্রের ঢেউ ছোঁয়া একটা ছোট্ট শরীর। শরণার্থী সমস্যা যে কতখানি গভীর লাল জামা নীল প্যান্টের টুকটুকে ফরসা আয়লান কুর্দির দেহ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল তা। সাংবাদিক জেনান মুসা জানিয়েছেন, পত্রিকাটি চাইলে সেই ছবিই ব্যবহার করতে পারত। কিন্তু, তা না করে তারা অযথা যৌন আবেদনে মুড়েছে বিষয়টিকে। পত্রিকাটি অবশ্য তাদের সাফাইয়ে জানিয়েছে, বৃহত্তর পাঠকের কাছে পৌঁছনোর জন্যই ওই প্রচ্ছদ ব্যবহার করেছিল তারা। তারা ভেবেছিল, যেহেতু পত্রিকাটি গ্ল্যামার সংক্রান্ত বিষয়ে লিখে থাকে, তাই এমন একটি বিষয়কে তারা একই ঢঙে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, এখন তা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
যদিও এই ব্যাখ্যা পছন্দ হয়নি নেটিজেনদের। তারা জানিয়েছে, বাধ্য হয়েই প্রাণে বাঁচতে হাজার হাজার মানুষ ভূমধ্যসাগরের বিপজ্জনক পালানোর পথে পা বাড়ায় যে পথ পেরিয়ে ইউরোপের নিরাপদ আশ্রয়ে হয়তো পৌঁছনো যায় কিন্তু, সমানভাবে থাকে মৃত্যুর হাতছানিও। সেখানে লাইফ জ্যাকেট তাদের মরণ বাঁচন সমস্যা। সেখানে লাইফজ্যাকেটকে যৌন আবেদনে মোড়া কখনওই মানানসই নয়।
[হেনস্তা চলছেই, ইমরানের আমলে ইসলামাবাদে অসহায় ভারতীয় কূটনৈতিকরা]
সাংবাদিকের ওই প্রতিবাদের জবাবে এক শরণার্থীও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “বুঝতেই পারছি না, ওই মডেলটি কীভাবে অত আরামে লাইফ জ্যাকেটের বিছানায় শুয়ে আছে। আমি গোটা বিশ্বকে জানাতে চাই, শরণার্থীদের কাছে যে লাইফ জ্যাকেট থাকে, তা অধিকাংশ সময়েই কোনও কাজের নয়। ”