সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলার শেষ ‘ম্যাটিনি আইডল’কে হারিয়ে এখনও শোকাতুর বাঙালি। বাংলা তথা ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রে যার অবদান অনস্বীকার্য, বাঙালির সেই ‘কাল্ট হিরো’কে নিজেদের মতো করে শ্রদ্ধা জানাল আমূল। সমসাময়িক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, বিতর্ক, বা সাফল্য বছরের পর বছর ধরে জায়গা করে নিয়েছে এই সংস্থার বিজ্ঞাপনে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের (Soumitra Chatterjee) প্রয়াণের পরও তার ব্যতিক্রম হল না।
আমুলের অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলগুলিতে সোমবার একটি ছবি পোস্ট করা হয়েছে। যাতে সাদাকালো পটভূমিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত একাধিক চরিত্র। সঙ্গে ইংরেজিতে লেখা ‘Apaar Sansar’। সত্যজিত-সৌমিত্র জুটির ‘অপুর সংসার’ ছবির শীর্ষক থেকে অনুপ্রাণিত বিজ্ঞাপনটিতে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে চলচ্চিত্র জগতে সৌমিত্র’র ব্যপ্তি ‘অপার’ অর্থাৎ সীমাহীন। সঙ্গে ক্যাপশনে লেখা,”কিংবদন্তি মঞ্চ এবং চলচ্চিত্র অভিনেতাকে শ্রদ্ধার্ঘ্য।” আলাদা করে একটি বিজ্ঞাপন তৈরি করা হয়েছে ‘আমূল বাংলা’র তরফেও। তারা বলছে, সৌমিত্রর প্রয়াণে ‘মিত্রহীন’ হল বাংলা। সাদা-কালো পোস্টারে দেখা যাচ্ছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অবয়ব, সঙ্গে মোমবাতি হাতে আমূল গার্লের ছবি। ‘আমূল গার্ল’ নিজেও যেন শোকাহত।
[আরও পড়ুন: ‘এত বড় মাপের অভিনেতা হয়েও কী সাদাসিধেভাবে সেটে এসেছিলেন’, সৌমিত্রর স্মৃতিচারণায় বিদ্যা]
আর পাঁচটা আমুলের বিজ্ঞাপনের মতো এই দুটিও বেশ নজর কেড়েছে নেটদুনিয়ায়। কিন্তু, এর মধ্যেও ‘অযাচিতভাবে’ মাথাচাড়া দিয়েছে বিতর্ক। প্রথম বিজ্ঞাপনটিতে ঠিক কী বলা হয়েছে, তা বোধগম্য হয়নি ‘সচেতন’ বঙ্গসমাজের একাংশের। বাংলার ‘সংসার’কে যেভাবে ইংরেজির ‘Sansar’ বানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। সোশ্যাল মিডিয়ায় টুকটাক প্রতিবাদও করতে দেখা গিয়েছে অনেককে। ইন্দ্রায়ুধ মিত্র, যিনি কিনা দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞাপনের সঙ্গে যুক্ত, বলছিলেন, “ওঁরা হয়তো কিছু একটা ভেবে এই বিজ্ঞাপনটি প্রকাশ করেছে। কিন্তু ওদের ভাবনা আর তার প্রকাশের মধ্যে বিস্তর বিচ্যুতি দেখা যাচ্ছে।” এ প্রসঙ্গে ‘আমুল বাংলা’র বিজ্ঞাপনের দায়িত্বে থাকা সংস্থা ‘SOS Ideas’-এর অন্যতম কর্তা সৌভিক পয়রার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। সৌভিকবাবুর কথায়, “এসব নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। কারও কাছে এটা ঠিক লাগছে না। কারও কাছে এটা ঠিক লাগছে। আসলে আমুলের বিজ্ঞাপন নিয়ে সবার মধ্যেই একটা আলাদা উন্মাদনা থাকে। সুতরাং বিতর্ক চলতেই পারে।”
[আরও পড়ুন: আত্মত্যাগই প্রতিবাদের ভাষা, ‘অনাচার’ রুখতে হেলায় পদ্মশ্রী ছেড়েছিলেন সৌমিত্র]
প্রশ্ন উঠেছে ‘আমুল বাংলা’র পোস্ট করা ছবিটি নিয়েও। একজন স্বনামধন্য কার্টুনিস্ট বলছেন, ‘আমুলের বিজ্ঞাপনের যে ধরনের সঙ্গে আমরা পরিচিত, বাংলার এই বিজ্ঞাপনটি সেই ধরনের মান রাখতে পারেনি।’ তাঁর কথায় আমুলের একেকটি বিজ্ঞাপন আসলে ‘ট্রেডমার্ক’। কিন্তু সৌমিত্রবাবুকে জানানো ‘শ্রদ্ধার্ঘ্য’টি সেই এসেন্স ধরে রাখতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে অবশ্য ‘SOS Ideas’-এর কর্তা সৌভিকবাবুর সাফ জবাব, আর পাঁচটা শ্রদ্ধার্ঘ্যর মতোই, এই ছবিটিও তৈরি করা হয়েছে। সেটা কারও ভালো না লাগলে সেটা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন তোলাটা যুক্তিহীন।