সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অপেক্ষা ছিল সকাল থেকেই। যদিও রাহুলের বুধবারের আক্রমণাত্মক বক্তৃতার পর মোদি (PM Modi) যে তাঁর ভাষণে বিরোধীদের কাঠগড়ায় তুলবেন তা প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু মণিপুর ইস্যু নিয়ে তিনি মুখ খুলবেন কিনা সেদিকেই নজর ছিল সকলের। অবশেষে বিকেল পাঁচটা বাজতে না বাজতেই বলতে উঠলেন তিনি। দিলেন প্রায় ঘণ্টা দুয়েকের দীর্ঘ ভাষণ। আর সেই ভাষণের একেবারে শেষে এল মণিপুর প্রসঙ্গ। সেই সঙ্গে বিরোধী ইন্ডিয়া জোট, বিশেষত কংগ্রেসকে তুলোধনা করলেন আগাগোড়াই। দিলেন দেশকে তৃতীয় অর্থনীতির দেশ করার আশ্বাস। সব মিলিয়ে মোদি রইলেন মোদিতেই। ‘পুরনো কাসুন্দি’ই ‘পুরনো মোড়কে’ পেশ করলেন।
মসনদে বসার পর থেকেই কংগ্রেসকে তুমুল আক্রমণ করে গিয়েছেন মোদি। দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সেই আক্রমণের ঝাঁজ বেড়েছে অনেকটাই। সেই মেজাজেই এদিন দেখা দিলেন মোদি। আলাদা করে খোঁচা দিলেন রাহুলকে। তাঁর ‘মহব্বত কি দুকানে’র জবাবে জানিয়ে দিলেন, কংগ্রেস ‘লুট কি দুকান, ঝুট কা বাজার’ খুলেছে। সেই দোকানে শিগগিরি তালাও পড়বে। রাহুলের তাঁকে করা ‘অহংকারী রাবণ’ কটাক্ষের মোকাবিলা করতে বললেন, ”লঙ্কাকে রাবণের অহঙ্কার ডুবিয়েছে এটা ঠিক কথা। যেমন কংগ্রেসকেও ডুবিয়েছে। রামরূপী জনতা ৪০০ থেকে ৪০-এ নামিয়ে এনেছে ওদের।” এর সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেসের ব্যর্থতাকেও রীতিমতো বিস্তৃত পরিসরে পেশ করে শতাব্দীপ্রাচীন দলটিকে কোণঠাসা করার বরাবরের অভ্যাসই বজায় রাখলেন। পাশাপাশি ইন্ডিয়া জোটকে খোঁচা মেরে বললেন, ”ইউপিএ ভাবছে নাম বদলালে ভাগ্য বদলাবে। এটা একটা পুরনো গাড়িকে রং করে সেটাকেই ইলেকট্রিক গাড়ি বলে চালানোর চেষ্টা।”
[আরও পড়ুন: ‘এনডিএ জোটের নামে অহংকারী ‘I’ জুড়েই I.N.D.I.A’, বিরোধীদের আক্রমণ মোদির]
এভাবেই আগাগোড়া আক্রমণ শানিয়ে গেলেন মোদি। সেই সঙ্গে তাঁর সরকারের প্রশস্তি ও এই আমলে দেশের উন্নতির খতিয়ানও মেলে ধরলেন নিক্তিতে মেপে। ২ ঘণ্টা ৭ মিনিটের ভাষণে মণিপুর প্রসঙ্গ এল একেবারে শেষে। এবং সেটাও আসলে বিতর্ক এড়াতেই। কেননা তিনি জানতেন, লাগাতার তাঁর বিবৃতি দাবি করার পরে অনাস্থা প্রস্তাব (No Confidence Motion) পেশ করা হয়েছে। এই অবস্থায় বিরোধীদের তীব্র সমালোচনার জবাব দিতে গেলে মণিপুরকে একেবারে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। প্রসঙ্গত, মোদির ভাষণের সময়ে একাধিকবার ‘মণিপুর, মণিপুর’ ধ্বনি শোনা গিয়েছে সংসদে। এরপর বিরোধী সাংসদরা ওয়াকআউট করতেই মণিপুর নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু মণিপুর নিয়ে মুখ খুললেও বিরাট কোনও বার্তা দেননি প্রধানমন্ত্রী। এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। মণিপুরে শান্তি ফেরানোর আশ্বাস কিংবা দোষীদের শাস্তি দেওয়ার সংকল্প করে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, ”মণিপুরের মা-বোনেদের আশ্বস্ত করে বলতে চাই, দেশ আপনাদের পাশেই রয়েছে।” এর বেশি বিস্তারিত ভাবে সেখানে কী পদক্ষেপ করা হতে বা তেমন কিছু তিনি বলেননি।
বরং ‘নিজের ঢাক’ পেটাতে বারবার উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে কী কী উন্নয়ন এনেছে মোদি সরকার, তা জানালেন। কিন্তু সেই উন্নয়নের সঙ্গে মণিপুরের সমস্যার সমাধানজনিত পদক্ষেপের কোনও যোগ নেই। সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এদিনের ভাষণ যে আসলে মণিপুর প্রসঙ্গ স্রেফ ছুঁয়ে রেখে বিরোধীদেরই কাঠগড়ায় তোলার বরাবরের কৌশলেরই পুনরাবৃত্তি- তেমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যা বুঝিয়ে দিচ্ছে, বিরোধীদের ‘কাঁধে বন্দুক’ রেখেই বরাবরের মতো নিজস্ব রণকৌশলই বৃহস্পতিবাসরীয় বিকেলেও বজায় রাখলেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি।