সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সম্প্রতি নাট্যকর্মী তথা অভিনেতা অমিত সাহাকে মারধরের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ দেখা গিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। গোটা ঘটনার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত বহু ব্যক্তিত্বরা। আর এবার এই ঘটনায় গর্জে উঠলেন টলিপাড়ার জনপ্রিয় অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য (Anirban Bhattacharya)।
গত বুধবার অর্থাৎ আঠাশ ডিসেম্বর অমিতের ওপরে অত্যাচারের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে অনির্বাণ উপস্থিত থাকতে না পারলেও, নিজের মতামত জানিয়ে এক খোলা চিঠি খেলেন।
অনির্বাণ চিঠিতে লেখেন, ”নমস্কার। আমার নাম অনির্বাণ। আমি বাংলা থিয়েটারে ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করি। ইদানীং পরিচালনার কাজও করেছি। আমি আজ বেলেঘাটাতেই শুটিং করছি, কিন্তু খুবই টাইট শিডিউল থাকায় সভাতে উপস্থিত থাকতে পারছি না। কিন্তু আমি এই সভায় উপস্থিত থাকতে চেয়েছিলাম, কারণ গায়ে হাত উঠেছে। নিশ্চয়ই আগেও উঠেছে, অভিনেতার গায়ে, নাট্যকর্মীর গায়ে। সুদূর বা অদূর ইতিহাসে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে আমার জানার মধ্যে এই প্রথম হাত উঠেছে। আমি প্রতিবাদ করছি, আরো অনেকের সঙ্গে, এটা জেনেই, যে এই প্রতিবাদ ব্যর্থ হবে। যার গায়ে হাত উঠেছে, তার গায়ে আবার হাত উঠতে পারে শীঘ্রই, এবং যিনি হাত তুলেছেন, তিনি তার সাহসে বলীয়ান হয়ে বাংলা মায়ের সুযোগ্য সন্তানের অনেকগুলো সার্টিফিকেট ঘরে বাঁধিয়ে রাখবেন। কে জানে হয়তো কালের অদ্ভুত নিয়মে একদিন বাংলার সংস্কৃতি মন্ত্রীও হয়ে যেতে পারেন, দল বদলালে হয়তো ভারতেরও। এটা বা এরকম কিছুই হয়তো হবে। আমি এই ঘটনাকে বুঝে নিতে চাইছি রাজনৈতিক বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে।”
কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের প্রসঙ্গ টেনে অনির্বাণ লেখেন, ”আজ থেকে ১২ দিন আগে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে অমিতাভ বচ্চন বাকস্বাধীনতার সপক্ষে বক্তৃতা করে গেছেন। শাহরুখ খান সোশ্যাল মিডিয়ার ঘৃণাবাহিনীকে এক হাত নিয়েছেন, সারা ভারতে মুক্তমনা মানুষ হাততালি দিয়ে উঠেছেন। সেদিন যারা মঞ্চে ছিলেন, তারাও দিয়েছেন।”
[আরও পড়ুন: অন্য তরুণীর প্রেমে মজেছিল সিজান! তুনিশার মৃত্যুতে জোরাল সম্পর্কের টানাপোড়েনের ইঙ্গিত]
অনির্বাণ আরও লেখেন, তার কিছুদিন পরেই অমিত সাহা ও অরূপ খাঁড়া মার খেয়ে গেলেন, নাট্য উৎসব আয়োজন করার জন্য। একই রাজ্যে! কেন? কারণ অমিত সাহা ও অরূপ খাঁড়া পশ্চিমবঙ্গের বোধ করি একটি ভোটকেও ডিস্টার্ব বা পেট্রনাইজ করতে পারেন না।
অমিতাভ বচ্চন বা শাহরুখ খান পারেন। তাই, চলুন, আমরা নাটক ছেড়ে একটা মার খাওয়ার উৎসবের দিকে এগিয়ে যাই। আমরা রাজনৈতিক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়াই। প্রতিটি অঞ্চলের পার্টি অফিসে আমরা আবেদন পত্র জমা দিই আমাদের নাটক অভিনয়ের দিন ও স্থান সমেত, আমাদের যেন এসে বেদম মার দেওয়া হয়, যেন বুঝিয়ে দেওয়া হয় হাড়ে হাড়ে যে ভোটকেন্দ্রিক গণতন্ত্রে অমিতাভ বচ্চন বা শাহরুখ খান না হলে বেশি লাফাতে নেই।
সারা ভারতবর্ষের সিনেমা ও থিয়েটার অভিনেতারা যেন জানতে পারেন, পশ্চিমবঙ্গে এক অভূতপূর্ব আনন্দযজ্ঞ শুরু হয়েছে, ভোট রাজনীতিতে কাজে আসে না, এমন শিল্পীদের মেরে ঠান্ডা করে দেওয়া হচ্ছে। এই শিক্ষা সারা দেশ আমাদের রাজ্য থেকেই পাক। চলুন, অভিনয় চর্চা, গানবাজনা ছেড়ে আমরা আগে আমাদের রাজনৈতিক অস্তিত্বটা বুঝে নিই আমাদের আজকের বাস্তবতায়। আবেদন পত্র জমা দেওয়া শুরু হোক। অখ্যাত, বিখ্যাত, নামী, অনামী সমস্ত অভিনেতারা চলুন এক যোগে মার খাওয়ার আবেদন জানাই। আমি অনির্বাণ। আমার এর পরের অভিনয় ১৫ই জানুয়ারি রবীন্দ্র সদন মঞ্চে। এসে মেরে যান। কারণ এই দিন এর অভিনয়ে ভোট রাজনীতির কোনো মুনাফা নেই, এমন ফালতু ঘটনা রাজ্যে প্লিজ একটাও ঘটতে দেবেন না, অনুরোধ। সবশেষে কেক উৎসবের সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করি।
অনির্বাণ।”
তা ঠিক কী ঘটেছিল?
জোর জুলুম করে বন্ধ করে দেওয়া হয় অভিনেতা অমিত সাহার ‘নাট্যদল বিদূষক নাট্যমণ্ডলীর’ মুক্তমঞ্চের নাট্য উৎসব। বেলেঘাটার একটি মাঠে এই উৎসব হওয়ার কথা ছিল। শুক্রবার এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। অভিনেতার অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা তাঁকে মারধর করেছে। এমনকী, অভিনেতাকে ঘাড়ধাক্কা দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও প্রকাশ করে গোটা ঘটনার কথা উল্লেখ করেন অমিত।
বাংলা সিনেমা ও সিরিজের জনপ্রিয় মুখ অমিত। ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’, ‘ভটভটি’র মতো সিনেমায় দেখা গিয়েছে তাঁকে। সদ্য মুক্তি পেয়েছে অভিনেতার ‘বিরহী ২’ সিরিজও। এই ঘটনায় অমিতের পাশে দাঁড়িয়েছেন পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায় ও প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের মতো ব্যক্তিত্বরা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় তথাগত লিখেছেন, ‘নাট্য উৎসব করতে গিয়ে অমিতের মতন শক্তিশালী, প্রতিভাবান অভিনেতাকে কিছু পলিটিকাল ক্যাডারের হাতে যে প্রহৃত হতে হয়েছে,তার চেয়ে ঘৃন্য,লজ্জাজনক ঘটনা এই মূহুর্তে আর কিছু হতে পারে না।শুধুমাত্র নাটক করার অপরাধে যদি গায়ে হাত তুলে শক্তি প্রদর্শন করতে হয় তাহলে বুঝতে হবে ক্ষমতার দম্ভ আর অশিক্ষা এমন জায়গাতে পৌঁছেছে যেখানে পতন আসন্ন।শিল্প এবং শিল্পের মুখ যদি এ রাজ্যেও বারবার লাঞ্চিত হয় শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্ররোচনা আর মতাদর্শের পার্থক্যের কারনে তবে রাজ্যে ক্ষমতার উদ্দেশ্য নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে।আসলে সবার মধ্যেই ফ্যাসিস্ট রাজনীতির সমর্থক রয়েছে,বেরিয়ে আসাটা শুধু সময় আর পরিস্থিতির অপেক্ষা।অমিত সাহাকে যে নাট্য উৎসব বন্ধ করে দিতে হল এ পরিস্থিতিতে সে লজ্জা শুধু রাজ্যের বা সরকারের নয়, সে লজ্জা আমাদের সবার।অমানবিক এই মানুষদের প্রতি,তাদের রাজনৈতিক নীতির প্রতি শুধুই ঘৃনা থাকল,জমা থাকল,মনে থাকল।’
অন্যদিকে প্রদীপ্ত লিখলেন, ‘‘অমিত সাহা এবং তাঁর দল বিদূষক নাট্যমন্ডলীর লোকজনকে মারধর করে তাঁদের নাট্যোৎসব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তীব্র প্রতিবাদ এবং ধিক্কার।’’