সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা পুরুলিয়ায় আন্ত:রাজ্য সীমানায় অপরাধ দমনে প্রযুক্তিই হাতিয়ার পুলিশের। জেলার আন্ত:রাজ্য সীমানা-সহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অটোমেটিক এনপিআর (NPR) নামে যন্ত্র বসাচ্ছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। এনপিআর অর্থাৎ অটোমেটিক নাম্বার প্লেট রিডার। বেআইনি কার্যকলাপ রুখতেই পুরুলিয়া (Purulia) জেলা পুলিশের এই বড় পদক্ষেপ। এই কাজের মধ্য দিয়ে যেমন অপরাধ রোখা যাবে। তেমনই আইনশৃঙ্খলার কাজেও লাগবে এই নম্বর প্লেট রিডার। এমনকি ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ প্রকল্পেও সহায়তা করবে এই যন্ত্র ব্যবস্থা। অর্থাৎ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে সাহায্য করবে এই যন্ত্র। তাছাড়া এই যন্ত্র সিসিটিভির কাজও করবে।
অটোমেটিক নাম্বার প্লেট রিডার একটি সংশ্লিষ্ট এলাকা জুড়ে যাতায়াত করা যানবাহনের নম্বর যেমন নিজের কাছে রেকর্ড করে নেবে। তেমনই ছবিও ওই যন্ত্র নিজের কাছে সংগ্রহ করে রাখবে। পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সমগ্র জেলা জুড়ে এই জেলায় কম বেশি ১২৫টি নাকা (Naka) পয়েন্ট রয়েছে। তার মধ্যে জেলার ৩৮০ কিমি ঝাড়খণ্ড সীমানায় আন্ত:রাজ্য নাকা চেক পোস্ট রয়েছে ১৪ টি। এই ১৪টি পোস্টে ২৪ ঘন্টা নজরদারি চলে। এই কেন্দ্রগুলিতে ওই যন্ত্র বসানো ছাড়াও পাশাপাশি জেলার কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হবে বলে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। ১৪ টি আন্ত:রাজ্য নাকা চেকপোস্ট বাদ দিয়ে আরও ১১১ টি নাকা পয়েন্ট রয়েছে। তার মধ্যে জেলার ২৩ টি থানা এলাকায় দুটি করে মোট ৪৬ টি নাকা পয়েন্ট আছে। এখানে ফি দিন চার ঘন্টা ধরে সারপ্রাইজ নাকা চলে। এই নাকা চেকপোস্টগুলিও (Check point) যাতে ওই স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের আওতায় আনা যায় সেই চেষ্টা করছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ।
[আরও পড়ুন: বিধানসভায় ‘চপ’ চর্চা! বিজেপি বিধায়কের কাছে খাওয়ার আবদার মন্ত্রীদের]
পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার (SP) অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পুরুলিয়ার তিন দিক জুড়ে ঝাড়খণ্ড সীমানা। এই বিস্তীর্ণ এলাকায় অপরাধ দমনের জন্য আমরা প্রযুক্তিগত সাহায্য নিচ্ছি। আন্ত:রাজ্য সীমানা-সহ জেলার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এমন একটি যন্ত্র বসানোর কাজ শুরু হয়েছে যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে যানবাহনের নম্বর সংগ্রহ করতে পারে। একইভাবে সিসিটিভির কাজও করবে। এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা ট্রাফিক ব্যবস্থাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।” পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই অটোমেটেড নাম্বার প্লেট রিডার রাস্তার পাশে নিচু হয়ে লাগানো থাকছে। অর্থাৎ সিসিটিভি যেভাবে উঁচুতে থাকে তার চেয়ে অনেকটাই নিচে থাকছে এই যন্ত্র। যাতে গাড়ির নম্বর প্লেটটা সহজেই রেকর্ড করা যায়। এই যন্ত্রে থাকা দুটি ক্যামেরার দাম ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। পুরুলিয়া জেলা পুলিশ জেলা পরিষদের দেওয়া কিছু অর্থ এছাড়া বিভিন্ন শিল্প সংস্থার সামাজিক প্রকল্পের মাধ্যমে এই কাজ করছে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) অতীতে জঙ্গলমহলের একাধিক জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্যের সীমানাগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে মুড়ে ফেলার নির্দেশ দেন। সেই লক্ষ্যে জঙ্গলমহলের চার জেলা পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম ও মেদিনীপুরে একটি সুসংহত পরিকল্পনাও নেওয়া হয়। কিন্তু সেই কাজ সম্পূর্ণভাবে হয়নি। তাছাড়া এই কাজে পুরুলিয়া একেবারেই পিছিয়ে ছিল। এই জেলায় শহরাঞ্চল বা জেলার বিভিন্ন প্রবেশপথে সিসিটিভি (CCTV) ক্যামেরা না থাকায় শহর পুরুলিয়ায় সোনার দোকানের ডাকাতির ঘটনার কিনারা করতেও বেগ পেতে হয় পুলিশকে। ওই ঘটনার পর থেকে শিক্ষা নিয়েই পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সিসিটিভির চেয়েও আরও আধুনিক অটোমেটেড নাম্বার প্লেট রিডার যন্ত্রের ব্যবস্থা করল।
[আরও পড়ুন: ‘কিছুই বিনামূল্যে দেওয়া উচিত নয়’, এবার সরকারি ভর্তুকির বিরোধিতায় সরব নারায়ণ মূর্তি]
ইতিমধ্যেই পাড়া থানার দড়দা, পুরুলিয়া মফস্বলের ঘোঙ্গা, জয়পুরের কাঁঠালটাড়, ঝালদার তুলিন ও বলরামপুরের দাঁতিয়া এলাকায় বসানো হয়ে গিয়েছে। এই পাঁচটি পয়েন্ট আন্ত:রাজ্য সীমানার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এছাড়া বরাবাজারের সিন্দরি, বান্দোয়ানের দুয়ারসিনিতে কুঁচিয়া ক্যাম্পের কাছে এই যন্ত্র বসবে। এছাড়া পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার সীমানায় পায়রাচালি বিশপুরিয়া, সাঁতুড়ির মুরুলি এলাকাতেও যন্ত্র বসবে। এই পয়েন্ট গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে ধাপে ধাপে এই কাজ করবে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ।
কী এই এনপিআর?
- একেবারে ক্যামেরার মতই। আপনা-আপনি যানবাহনের নম্বর প্লেট রেকর্ড করে নেয়। সেই সঙ্গে সিসিটিভিরও কাজ করে।
- অপরাধ দমন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-র ক্ষেত্রেও কাজ করবে এই যন্ত্র।
- দুটি ক্যামেরা মিলিয়ে একটি যন্ত্রের দাম ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা।