সুকুমার সরকার, ঢাকা: চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে সরগরম বাংলাদেশ। এই আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের একটি অংশ সরকারের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা করেছিল। তা সত্ত্বেও রাজধানীর কয়েকটি সড়কে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের আন্দোলনের জেরে মঙ্গলবার রামপুরা থেকে বসুন্ধরা পর্যন্ত বীর উত্তম রফিকুল ইসলাম অ্যাভিনিউ এবং প্রগতি সরণিতে পাঁচ ঘণ্টা এবং ধানমণ্ডির সোবহানবাগ হয়ে মিরপুর রোডে তিন ঘণ্টা যান চলাচল একেবারে স্তব্ধ হয়ে যায়। এর ফলে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। বিকেলে ফিরে যাওয়ার সময় আন্দোলনকারীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে গিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীরা বুধবার আন্দোলন চালিয়ে গেলে তাঁরাও ফের রাস্তায় নামবেন।
[ আসাদকে নিয়ে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে আমেরিকা ]
সরকারি চাকরির কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’- এর ব্যানারে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। রবিবার শাহবাগ মোড় অবরোধ করলে পুলিশ তাঁদের রবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে সরিয়ে দেয়। এরপর রাতভর ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলিগের সংঘর্ষ চলে। সোমবার বিকালে সচিবালয়ে সরকারের সঙ্গে বৈঠকের পর আন্দোলনকারীদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে আন্দোলন ৭ মে পর্যন্ত স্থগিত রাখার ঘোষণা করা হয়।কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আন্দোলনকারীরা ওই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে সরকারকে ১৫ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পালটা ঘোষণা করে। পাশাপাশি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার দুপুর ১২টা নাগাদ তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসের সামনে রামপুরা ব্রিজে অবস্থান নিলে মালিবাগ থেকে বাড্ডাগামী সড়কে যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে যায়। একই সময়ে ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেসের (ইউআইটিএস) শিক্ষার্থীরা ভাটারা থানার সামনে থেকে শুরু করে বাড্ডা-রামপুরাগামী সড়কে অবস্থানে বসেন। ফলে রামপুরা থেকে নতুন বাজার হয়ে কুড়িলের দিকে যাওয়া-আসার পথও আটকে যায়। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টা থেকে বসুন্ধরায় নিজেদের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। বেলা ১২টা নাগাদ তাঁরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রধান গেটে এসে সড়ক অবরোধ করেন।পরে ইন্ডিপেন্ডেন্ট, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ও এআইইউবির শিক্ষার্থীরা তাঁদের সঙ্গে যোগ দিলে প্রগতি সরণির দুই দিকেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নর্থ সাউথের এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী তাজিন মাহমুদ আশিক বলেন, “কোটা সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে এবং সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।”
এদিকে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুপুরের পর সোবহানবাগে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন। শুরুতে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে গেলেও বেলা ২টো নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নিলে মিরপুর রোডের এক পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বলে মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার জানান। বিকাল পৌনে ৫টা নাগাদ ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিয়ে রাস্তা থেকে সরে যান। তারপর ওই সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিন আহমেদ জানিয়েছেন, “সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখেই আজকের মতো আমরা সরে যাচ্ছি। তবে এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতা থাকবে।” বুধবারও সড়ক অবরোধের কর্মসূচি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি, পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।”
[ মার্কিন বায়ুসেনার সাহায্যে এই প্রথম সূর্যের কাছে পৌঁছবে নাসার মহাকাশযান ]
ওই সময়ই রামপুরা ব্রিজ থেকে ইস্ট ওয়েস্ট, ভাটারা থেকে ইউআইটিএস এবং বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রধান গেটে অবস্থানে বসা চার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থামিয়ে ফিরে যান। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেড অব সিকিউরিটি মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) ইমরান বিকেল ৫টা নাগাদ শিক্ষার্থীদের সাধারণের দুর্ভোগ সৃষ্টি না করে উঠে যেতে বললে আন্দোলনকারীরা তা মেনে নিয়ে রাস্তা থেকে উঠে যান। এরপর বাকি তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ধীরে ধীরে সড়ক ছেড়ে গেলে যান চলাচল ক্রমে স্বাভাবিক হয়। এ এলাকায় আন্দোলনে অংশ নেওয়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলামিন হক অপু বলেন, “যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আগামীকাল আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমরাও আন্দোলন চালিয়ে যাব।” এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানের ছাত্র-ছাত্রীরাও কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে।
The post চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে ঢাকায় দিনভর বিক্ষোভ শিক্ষার্থীদের appeared first on Sangbad Pratidin.