সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মা নেই বছর ঘুরে আরও আট মাস। মাতৃবিয়োগের কষ্ট সঙ্গী করে নিজেই দাদার বিয়ের সমস্ত দায়িত্ব পালন করলেন অপরাজিতা আঢ্য (Aparajita Adhya)। বয়স যাই হোক কিন্তু নতুন শুরুর তো কোনও সময় নেই। শুক্রবার দাদার বিয়ে দিয়ে মাকে খোলা চিঠি লিখলেন কর্তব্যপরায়ণ অপরাজিতা।
অপরাজিতা আঢ্যর মা চেয়েছিলেন একজন ঠিকঠাক পাত্রীর সঙ্গে ছেলের বিয়ে দেবেন। নিজেই পাত্রী বেছে রেখেছিলেন। কিন্তু ছেলের বিয়ে দেওয়ার আগেই গত হন তিনি। তবে মায়ের অনুপস্থিতিতে নিজে হাতে দাদার বিয়ে দিলেন অভিনেত্রী। দিন কয়েক আগেই দাদা-বউদির জন্য আইবুড়োভাতে মহাভোজের আয়োজন করেছিলেন। নিজের শশব্যস্ত শিডিউলের মাঝেও রকমারি পদ থরে থরে সাজিয়ে দিয়েছিলেন হবু দম্পতির সামনে। আর শুক্রবার শুভ পরিণয়ের কাজের দায়িত্বও নিজেই নিলেন। বেনারসি পরে সেজেগুজে দেখা গেল অপরাজিতা আঢ্যকে। সোশাল মিডিয়া পোস্টে তাঁর এই অভিজ্ঞতাও তুলে ধরলেন অভিনেত্রী।
প্রয়াত মায়ের উদ্দেশে অপরাজিতা লিখেছেন, মা এটা তোমার গল্প। যতদিন বেঁচেছো কোনও দিন ভালো করে আরাম করে বাঁচতে পারোনি। সবসময়ে ভয় তাড়া করতো তোমাযকে। তোমার ছেলের কী হবে, তোমার ছেলে আর পাঁচ জন মানুষের মতো স্বাভাবিক নয়। অত্যন্ত সরল আর সব ছেলের থেকে কিছুটা হলেও আলাদা। কী হবে তোমার ছেলেটার? যদিও তোমার মেয়ে আছে। সে সব দায়িত্ব কর্তব্য করতে পারে, কিন্তু তবুও তোমার কোথায় একটা ভয়, কোথায় একটা শঙ্কা, একটা অবিশ্বাস কাজ করতো, তুমি না থাকলে ছেলে কী করে বাঁচবে, ছেলে কী করে থাকবে, তুমি কখনও একা থাকাতে বিশ্বাসী ছিলে না। তুমি অসম্ভব বিয়েতে বিশ্বাসী ছিলে। তুমি সব সময় মনে করতে একা বাঁচা যায় না। যদি আমরা সকলে পৃথিবীতে একাই আসি আর একাই যাই, তবু এই পৃথিবী লোকে বাঁচার জন্য বোধহয় একজন সঙ্গীর খুব দরকার। তুমি সারাক্ষণ সবাইকে বলতে আমার ছেলের কী করে বিয়ে হবে, আমার ছেলেকে কে বিয়ে করবে? আমার ছেলেকে কে বিয়ে দেবে? তোমার পছন্দ করা পাত্রী রানী দিদি। কিন্তু সেই সময় রানী দিদির সঙ্গে বিয়ে দেওয়াটা সম্ভব হয়নি। আসলে সময়ের আগে কিছুই হয় না। সেটা তুমিও জানতে কিন্তু মানতে না। মনে মনে কোথাও অসম্ভব চেয়েছিলে যে এই পাত্রীর সঙ্গে তোমার ছেলের বিয়ে হোক।
[আরও পড়ুন: রাজ্যের একাধিক নাট্যদলের অনুদান বন্ধ করল]
সেই পোস্টেই অপরাজিতার সংযোজন, "পৃথিবীতে লোকের এটাই মজা, কেউ যদি সত্যি মন থেকে কিছু চায়, তাহলে মৃত্যুর পরেও সেটা সত্যি হয়। আজকে তো তুমি শরীর নামক খাঁচায় বাঁধা নেই। সারা বিশ্বব্যাপী সারা অন্তরীক্ষ সর্বত্র তুমি বিরাজমান। তুমি পরমাত্মার সঙ্গে লীন হয়ে গিয়েছো এবং তুমি দেখছো দাঁড়িয়ে তোমার মৃত্যুর এক বছর ৮ মাস পর তোমার ছেলে আজ বিবাহিত। তুমি আজকে হয়তো আনন্দে আনন্দলোকে লীন হয়ে গিয়েছো, আজ বোধহয় তুমি সব থেকে বেশি শান্তি পেয়েছ যে, তোমার ছেলে বিবাহিত এবং তোমার পছন্দ করা পাত্রী তোমার পুত্রবধূ। আর আমার শান্তি আমি আমার সবটুকু দায়িত্ব যা যা তোমাকে বলেছিলাম, সবটা পালন করতে পারলাম। এখনও অনেক পথ বাকি, আমি আছি। আমি থাকব। ঈশ্বর আমার সঙ্গে আছেন। তুমি নিশ্চিন্তে তোমার গন্তব্যে তোমার আগামী জন্মের যাত্রী হতে পারো। প্রণাম নিও মা আজ তুমিও যতটা খুশি, তোমার ছেলেও ততটা খুশি আজকে। সত্যি সত্যি আনন্দ ধারা বহিছে ভুবনে। তুমি একটা কথা সবসময় বলতে, দেরিতে হোক কিন্তু ভালো হোক। আজ সেটাই প্রমাণ হল, আর এটাও প্রমাণ হল তুমি যতই চাও সময়ের আগে কিছু হয় না।" অভিনেত্রীর এমন আনন্দ পোস্টে অনুরাগীরাও উচ্ছ্বসিত। অপরাজিতা আঢ্যকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সকলে।