সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ছুটির দিনে রবিবার আদালত বন্ধ হয়ে যাবার পরেও আবেদনের ভিত্তিতে দরজা খুলে ধৃতদেরকে সিবিআই হেফাজতের রায় দিল আদালত। তপন কান্দু হত্যাকাণ্ডে (Tapan Kandu Murder Case) রবিবার এই নজিরবিহীন ছবি দেখল পুরুলিয়া (Purulia)। তিনদিনের টানাপোড়েনের পর অবশেষে সিটের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ধৃত চারজনের মধ্যে তিনজনকে নিজেদের হেফাজতে নিতে পারল সিবিআই।
এদিন বিকালে হেফাজতে নেওয়ার পর তাদের ঝালদা বেস ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। সন্ধ্যায় এক নম্বর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র তাঁদের ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়ে তিনজনকেই ম্যারাথন জেরা শুরু করেন তদন্ত আধিকারিকরা। রাত পর্যন্ত এই জেরা চলে। জেরা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাবে সিবিআই (CBI)। আরও একাধিক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত দল সূত্রে জানা গিয়েছে।
পুরুলিয়ার ঝালদা পুরসভার দু’নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু হত্যাকাণ্ডের তদন্তে গঠিত হওয়া সিট মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করে। সবার প্রথমে নিহতের ভাইপো দীপক কান্দু। তারপর ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলার জরিডি থানার গাইছাদ গ্রামের বাসিন্দা ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ কলেবর সিং। এরপরে নিহতের দাদা তথা ধৃত দীপকের বাবা, প্রাক্তন কাউন্সিলর বাবি কান্দুর স্বামী নরেন কান্দু ও তার সহযোগী ঝালদার কুটিডি গ্রামের বাসিন্দা আসিক খান। নরেন কান্দু ও আসিক খানকে সাত দিন ও কলেবর সিংকে পাঁচ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারকl সবার প্রথমে ধৃত দীপক কাদুর যেহেতু ১৪ দিন পুলিশ হেফাজত নেওয়া হয়ে গিয়েছে l তাই তাকে আর এই মামলায় নিজেদের হেফাজতে আপাতত নিতে পারবে না সিবিআই।
[আরও পড়ুন: আসানসোলে উপনির্বাচনের আগে অশান্তি, বিজেপি নেতাকে লক্ষ্য করে গুলি, অল্পের জন্য প্রাণরক্ষা]
সিবিআই ধৃতদেরকে নিজেদের হেফাজতে নেবে এই ধারণা থেকেই গত শুক্রবার সিট তাদেরকে পুরুলিয়া আদালতে তোলে। সিবিআই আদালতে আসতে দেরি করায় নিজেদের হেফাজতে নিতে আবেদন করতে পারেনি। ফলে মাঝ রাস্তা থেকেই তাদের চলে যেতে হয়। ধৃতদের ১৪ দিনের বিচারাধীন হেফাজত হয়। সিট গ্রেপ্তার করার পরেই এই ধৃত তিনজনকেই ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজত পেয়েছিল।
এর আগে শনিবারও সিবিআই দেরি করে পুরুলিয়া জেলা আদালতে আসে। আদালতে পা রেখে তদন্তকারী আধিকারিকরা দেখেন, দরজা বন্ধ। ফলে তারা ধৃতদেরকে নিজেদের হেফাজতে নিতে বিচারকের বাংলো পর্যন্ত চলে যান। কিন্তু হেফাজতের আবেদন মঞ্জুর হয়নি। তাই রবিবার আসার কথা বলা হয়। সেই মোতাবেক এদিন সকালেই আদালতের কাছে আবেদন জানানো হয়। প্রথমে ছুটির কারন দেখিয়ে সেই আবেদন গৃহীত হয়নি। ফলে ফিরে যান সিবিআই আধিকারিকরা। কয়েকঘন্টার মধ্যেই ফের সিবিআই আধিকারিক এবং তাঁদের আইনজীবী এসে হাজির হন আদালতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাজির হন বিচারক।
তড়িঘড়ি তিন অভিযুক্ত কলেবর সিং, নরেন কান্দু, আসিক খানকে সংশোধনাগার থেকে নিয়ে আসা হয়। এর পরেই চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশের ভিত্তিতে ধৃত তিনজনকে নিজেদের হেফাজতে পায় সিবিআই। প্রিজন ভ্যান থেকে অভিযুক্তরা দাবি করেন, তারা নির্দোষ। তাদেরকে মারধোর করে এই মামলায় ফাঁসানো হয়। যেহেতু ধৃতদের ঝালদায় সিবিআইয়ের বেস ক্যাম্পে রাখা হবে, তাই নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে অযোধ্যা পাহাড়ের সিআরপিএফ ক্যাম্প থেকে এদিন অতিরিক্ত বাহিনী নিয়ে আসা হয়। এরপরই ওই এলাকাকে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মুড়ে দেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী।