সেনবাবুর ভূমিকায় শংকর চক্রবর্তী। গিরিশচন্দ্রের চরিত্রে খরাজ। আরও এক বিশেষ চরিত্রে দেখা যাবে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে। প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাতা হীরালাল সেনের বায়োপিক সেলুলয়েডের আঙিনায়। লিখছেন সোমনাথ লাহা।
ভারতবর্ষের প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাতা হীরালাল সেন। তবে সে অর্থে স্বীকৃতি পাননি তিনি। এমনকী প্রথম বিজ্ঞাপন বিষয়ক চিত্রও তিনিই নির্মাণ করেছিলেন। ১৯০৫-র ২২ সেপ্টেম্বর বঙ্গভঙ্গ বিরোধী রাজনৈতিক চিত্রটিরও নির্মাতা ছিলেন হীরালাল। তবে ১৯১৭-র এক অগ্নিকাণ্ডে তাঁর নির্মিত সমস্ত চলচ্চিত্রই নষ্ট হয়ে যায়।
[এই জনপ্রিয় বাংলা ধারাবাহিকে এবার দেখা যাবে ঋ-কে]
আর তাই চলচ্চিত্রের ইতিহাসের এক উজ্জ্বলতম অধ্যায় হয়েও কোথাও গিয়ে যেন অবহেলার শিকার হীরালাল সেন। সাধারণ মানুষ তো বটেই, এমনকী বাঙালিও আক্ষরিকভাবে তাঁকে মনে রাখেনি। এহেন হীরালাল সেনের জীবনীই এবার সেলুলয়েডের আঙিনায়। হীরালালের জীবন-দর্শন, স্ট্রাগল, তাঁর সময় ও সেই সময়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের বিষয় ভাবনাকে নিয়েই পরিচালক অরুণ রায়ের ছবি ‘হীরালাল’। ইতিপূর্বে ‘এগারো’, ‘চোলাই’-এর মতো ছবি তৈরি করেছেন অরুণ। এসেল মুভিজের ব্যানারে নির্মিত ছবি ‘হীরালাল’ এবার জায়গা করে নিয়েছে ২৪তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের কম্পিটিশন সেকশন তথা প্রতিযোগিতা বিভাগে। ছবির প্রযোজনায় রয়েছেন ইন্দ্রজিৎ রায়। প্রসঙ্গত, এবারের কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে জায়গা পাওয়া ১৪টি ছবির মধ্যে রয়েছে চারটি বাংলা ছবি। আর এই চারটি বাংলা ছবির মধ্যে অন্যতম হল ‘হীরালাল’। বাকি তিনটি বাংলা ছবি হল অর্জুন দত্ত পরিচালিত ‘অব্যক্ত’, সংগীত পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত পরিচালিত ছবি ‘কেদারা’ এবং অরিজিৎ বিশ্বাস পরিচালিত ছবি ‘সূর্য পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে’।
[সাসপেন্সে ভরপুর পরমব্রত-রাইমার ‘রিইউনিয়ন’, দেখুন ট্রেলার]
তবে হীরালাল সেনের বায়োপিক নির্মাণ প্রক্রিয়াটির মধ্যে কোনও খামতি রাখেননি পরিচালক অরুণ রায়। প্রায় তিন বছর ধরে তিনি, শৌনাভ বসু ও রুদ্ররূপ মুখোপাধ্যায় মিলে রিসার্চ ওয়ার্ক তথা গবেষণার পরে এই ছবির কাজে হাত রেখেছেন পরিচালক। ছবিতে রয়েছে মোট ৭৬টির মতো চরিত্র। উঠে এসেছে তৎকালীন কলকাতার বেশ কিছু কিংবদন্তি চরিত্রও। তাঁর মধ্যে রয়েছেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, অমরেন্দ্রনাথ দত্ত-র মতো মানুষজনও। এর পাশাপাশি ছবিতে রয়েছে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্যও। ছবিতে নামভূমিকায় অর্থাৎ হীরালালের চরিত্রে কে অভিনয় করছেন সেটা এখনই খোলসা করতে চাইছেন না পরিচালক অরুণ রায়। পরিচালকের মতে, “ওটা সারপ্রাইজই থাক সকলের জন্য। তবে যিনি চরিত্রটায় অভিনয় করেছেন, আশা করছি তাঁর কাজ দর্শকদের পছন্দ হবে।”
ছবিতে গিরিশচন্দ্রের চরিত্রে রয়েছেন খরাজ মুখোপাধ্যায়। প্রযোজক জামশেদজি ফ্রেমজি ম্যাডান (যাঁর নামাঙ্কিত কলকাতার ম্যাডান স্ট্রিট)-এর চরিত্রে দেখা যাবে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে। সেনবাবুর ভূমিকায় রয়েছেন শঙ্কর চক্রবর্তী। তবে ছবিতে বেশিরভাগই থিয়েটারের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়েছেন পরিচালক। অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন অনুঙ্কা চক্রবর্তী, তন্নিষ্ঠা বিশ্বাস, পার্থ সিনহা, অর্ণ মুখোপাধ্যায়, বিদু্যৎ দাস, আশিস ভৌমিক ও অন্য শিল্পীরা। ছবির বিষয় ভাবনার পাশাপাশি চিত্রনাট্য লিখেছেন পরিচালক স্বয়ং। যাবতীয় গবেষণাধর্মী কাজটি সামলেছেন রুদ্ররূপ মুখোপাধ্যায়। সংলাপ রচয়িতা শৌনাভ বসু। সংগীত পরিচালনায় ময়ূখ-মৈনাক। সিনেমাটোগ্রাফার গোপী ভগত। সম্পাদনা সুজয় দত্তরায়। একদম রিয়েল লোকেশনে এই ছবির শুটিং করেছেন পরিচালক, শুটিং হয়েছে বেলগাছিয়া রাজবাড়ি, লাহাবাড়ি, টিটাগড় জুটমিল, ফলতা এবং মুর্শিদাবাদে।
[অন্তর্বাসে দীপাবলির শুভেচ্ছা, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কে দিশা]
ছবি প্রসঙ্গে পরিচালক অরুণ রায়ের মন্তব্য, “ভারতীয় সিনেমার একজন উজ্জ্বলতম নক্ষত্র হয়েও হীরালাল সেন অবহেলার শিকার। আমরা দাদাসাহেব ফালকের নাম মনে রাখলেও ক’জন মানুষ জানেন হীরালাল সেনের কথা? এমনকী ইন্টারনেটেও খুব কম তথ্য রয়েছে তাঁর সম্পর্কে। সেই জন্যই শৌনাভ বসু ও রুদ্ররূপ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিন বছর ধরে রিসার্চ ওয়ার্কের কাজ সামলে তারপর এই ছবি তৈরিতে হাত রেখেছি। ভারতের প্রথম বিজ্ঞাপনী চিত্র, এমনকী তথ্যচিত্ররও নির্মাতা ছিলেন হীরালাল সেন। এই ছবির মধ্যে দিয়ে শুধু হীরালাল সেনের জীবনীই নয়, তৎকালীন সময়ের অজানা ইতিহাসও উঠে আসবে দর্শকের তথা মানুষের কাছে। যেগুলি তাদের চমকে দেবে বলেই আমার বিশ্বাস।”
[পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে সেন্সর বোর্ডের বিরুদ্ধে মামলা পহেলাজ নিহালনির]
কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে ছবির জায়গা পাওয়া প্রসঙ্গে পরিচালকের মত, ‘‘আমি ভীষণই এক্সাইটেড ছবিটা কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে জায়গা পাওয়ায়। আমি চাই আরও বেশি করে মানুষের মধ্যে এই ছবির বিষয় ভাবনাটা ঘোরাফেরা করুক। আমরা খুবই ইতিহাস বিমুখ হয়ে পড়েছি। আমার মনে হয় এবার আমাদের সেই অতীত গৌরব উজ্জ্বল অধ্যায়ের দিকে ফিরে তাকানোর সময় এসেছে।”
The post সেলুলয়েডের আঙিনায় প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাতা হীরালাল সেনের বায়োপিক appeared first on Sangbad Pratidin.