শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৯১/৮ (কুশল মেন্ডিস – ৯২, নাইব – ৬০/৪)
আফগানিস্তান: ৩৭.৪ ওভারে ২৮৯ রান (মহম্মদ নবি -৬৫, শাহিদি- ৫৯, কাসুন রাজিথা – ৭৯/৪)
শ্রীলঙ্কা ২ রানে জয়ী
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে আফগানিস্তানকে ২ রানে হারিয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে চলে গেল শ্রীলঙ্কা। জলে গেল মহম্মদ নবি, রশিদ খানদের লড়াই। মাঠে থাকা ক্রিকেটার ও ড্রেসিংরুমের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের জন্য চলতি এশিয়া কাপ থেকেই ছিটকে গেল আফগানরা। সুপার ফোরে যাওয়ার জন্য ৩৭.১ ওভারে ২৯২ রান করতে হত আফগানদের। সেটা করতে পারলেই শ্রীলঙ্কাকে নেট রান রেটে টপকে সুপার ফোরে চলে যেতেন মহম্মদ নবি-রশিদ খানরা। তবে লড়াই করেও পারলেন না তাঁরা। ৩৭.১ ওভারের পর তাঁদের রান দাঁড়ায় ৯ উইকেটে ২৮৯ রান। মুজিব উর রহমান সেই সময় আউট হলেও, সুপার ফোরে যাওয়ার জন্য আফগানদের ৩৭.৪ ওভারে ২৯৫ রান করতে হত। কিন্তু সমন্বয়ের অভাবে রশিদ ও ১০ নম্বরে নামা ফজল হক এই অঙ্কটা জানতেন না। ফলে শেষ তিনটি বল ‘ডট’ খেলার সঙ্গে আউট হয়ে যান ফজল। ফলে ৭.৪ ওভারে ২৮৯ রানে আফগানদের ইনিংস শেষ হতেই প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে গেল আফগানিস্তান।
১০ বলে প্রয়োজন ছিল ১৬ রানের। হাতে ছিল তিন উইকেট। তবে পরপর উইকেট হারিয়ে শেষমেশ ৩৭.৪ ওভারে ২৮৯ রানেই অল আউট হয়ে গেল আফগানরা। দুই রানে জয় পেল শ্রীলঙ্কা। মহম্মদ নবি আফগানিস্তানের ওয়ান ডে ইতিহাসের দ্রুততম অর্ধশতরান (২৪ বলে) করেও দল জেতাতে পারলেন না।
লক্ষ্য কঠিন ছিল। সুপার ফোরে যাওয়ার জন্য প্রথম থেকেই আফগান ব্যাটারদের উপর চাপ বাড়িয়েছিল শ্রীলঙ্কা। কাসুন রাজিথা দাপুটে বোলিং করে বিপক্ষের দুই ওপেনারকে আউট করেন। তিন নম্বরে নামা গুলবাদিন নাইবকে আউট করেন মথিসা পাথিরানা। ৫০ রানে আফগানিস্থানের তিন উইকেট চলে যেতেই সবাই মনে করেছিল গতবারের এশিয়ার সেরা দলের নক আউটে শুধু সময়ের অপেক্ষা।
কিন্তু সহ হিসেব বদলে দিয়েছিলেন রহমত শাহ ও অধিনায়ক হাসমাতুল্লা শাহিদি। চোখের নিমেশে চতুর্থ উইকেটে উঠে যায় ৭১ রান। আফগান দুই ব্যাটার যখন জাঁকিয়ে বসেছেন, ঠিক তখন ফের শ্রীলঙ্কাকে সাফল্য এনে দেন সেই রাজিথা। ১২১ রানে ৪ উইকেট হারায় আফগানরা। ৬৬ বলে ৪৫ রানে আউট হন রহমত শাহ।
তবে তাই বলে আফগানদের লড়াই থামেনি। এবার প্রাক্তন অধিনায়ক মহম্মদ নবিকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে বুঝে নিলেন হাসমাতুল্লা। তিনি একটা দিক আগলে ছিলেন। অন্যদিকে গদ্দাফির বাইশ গজে যেন মিশাইল ছুড়তে লাগলেন নবি। চাপের মুখে চুপসে যাওয়ার বদলে একার হাতে বিপক্ষের বোলারদের মহড়া নিতে শুরু করলেন নবি। দুজনের লড়াইয়ের সৌজন্যে পঞ্চম উইকেটে উঠে যায় ৮০ রান। ঠিক সেই সময় মহিশ থিকসানা ফের শ্রীলঙ্কার মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলেন। পিচে ঝড় তুলে আফগানদের আশা বাঁচিয়ে রাখা নবি ৩২ বলে ৬৫ রান করে আউট হয়ে যায়। তাঁর মারকুটে ইনিংস ৬টি চার ও ৫টি ছক্কা দিয়ে সাজানো ছিল। স্ট্রাইক রেট ২০৩.১২। শেষ দিকে রশিদও লড়াই চালালেন। তবে লাভ হল না।
এদিন টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শানাকা। দলের দুই ওপেনার দিমুথ করুণারত্নে ও পাথুম নিসাঙ্কা দ্বীপরাষ্ট্রের হয়ে শুরুটা বেশ ভালই করেন। দুই ওপেনার ৮.২ ওভারেই শ্রীলঙ্কাকে ৫০ রানের গণ্ডি পার করান। আফগানিস্তানের হয়ে প্রথম সাফল্য এনে দেন গুলবদিন নাইব। তাঁর মন্থর গতির বল বুঝতে না পারে কভারে সহজ ক্যাচ দেন করুণারত্নে। ৩২ রানে আউট হন তিনি। নিসাঙ্কাও ব্যক্তিগত অর্ধশতরানের দোরগোড়ায় সাজঘরে ফেরেন। তাঁকেও ৪১ রানে আউট করেন নাইব।
গত ম্যাচে ভাল পারফরম্যান্স করা সাদিরা সামারাবিক্রমাও এদিন ব্যাট হাতে ব্যর্থ। তাঁকে তিন রানে ফিরে ম্যাচের তৃতীয় সাফল্য পান নাইব। পরপর তিন উইকেট হারিয়ে বেশ খানিকটা চাপেই পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা। তবে দলকে এই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করেন মেন্ডিস ও চরিথ আসালঙ্কা। দুইজনে মিলে শতরানের পার্টনারশিপ গড়েন। তবে নিজের বোলিংয়ে দুরন্ত ক্যাচ ধরে আসালঙ্কাকে ৩৬ রানে সাজঘরে ফেরান রশিদ খান। কুশল মেন্ডিস দুরন্তভাবে নিজের শতরানের দিকে এগোচ্ছিলেন। তবে দুর্ভাগ্যবশত শতরানের গণ্ডি পার করার আগেই ৯২ রানে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় মেন্ডিসকে।
শানাকা (৫) ও ধনঞ্জয় ডি সিলভা (১৪) বড় রান করতে পারেননি। ২২৭ রানে সাত উইকেট হারিয়ে ফেলে শ্রীলঙ্কা। আফগান বোলাররা লঙ্কান ইনিংসকে ২৫০ রানের নীচে সমাপ্ত করারই পরিকল্পনা করছিলেন। তবে সেই আশায় জল ঢেলে দেন ওয়ালালাগে ও থিকসানা। প্রথমে কিছুটা ধরে ও পরে সময় বুঝে বেশ কয়েকটি বড় শট মেরে দলকে ২৯১ রান তুলতে সাহায্য করেন এই দুই তরুণ ক্রিকেটার। ইনিংসের শেষ বলে নাইব ২৮ রানে থিকসানাকে আউট করলেও, ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন ওয়ালালাগে। নাইব আফগানদের হয়ে সর্বাধিক ৬০ রানে ৪ উইকেট নেন।
বাইশ গজে মহম্মদ নবি ঝড় তোলার পর, শেষ দিকে রশিদও লড়াই চালালেন। তবে লাভ হল না। মাঠে থাকা দুই ক্রিকেটার ও ড্রেসিংরুমে মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে এশিয়া কাপ থেকেই ছিটকে গেল আফগানরা।