বাবুল হক, মালদহ: রপ্তানিপণ্য খালাস করতে গিয়ে বাংলাদেশের সোনা মসজিদ এলাকায় পানামা বন্দরে আটকে পড়েছেন প্রায় ৭০০ জন ভারতীয় লরিচালক ও খালাসি। পানামা বন্দর থেকে বের হতে পারছে না মালদহ থেকে ওপারে যাওয়া প্রায় ৩৫০ ভারতীয় লরিও। অধিকাংশ লরিই ওপারে গিয়ে রপ্তানিপণ্য খালাস করতে পারেনি। ওপারে আটকে পড়া ভারতীয় পরিবহণ শ্রমিকরা মালদহ জেলার বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। এনিয়ে সোমবার বিকেল থেকে গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা তৈরি হয়েছে মালদহের মহদিপুর স্থলবন্দর এলাকায়। কীভাবে ওই লরিচালক ও খালাসিদের মহদিপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে ফিরিয়ে আনা হবে, তা নিয়ে চিন্তিত এপারের রপ্তানিকারকরা। তাঁরা বিএসএফ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ শুরু করেছেন। কিন্তু রাত পর্যন্ত সুরাহা হয়নি।
এদিন মালদহের মহদিপুর এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, "প্রায় সাড়ে তিনশো লরি ওপারে পণ্য খালাস করতে গিয়ে আটকে পড়েছে। প্রত্যেক লরিতে একজন করে খালাসি এবং চালক রয়েছেন। কিছু লরিতে তিনজন করে রয়েছেন। বাংলাদেশের উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যেও রপ্তানি ধীরগতিতে চলছিল। কিন্তু আজকে থেকে হঠাৎ পরিস্থিতি অন্যরকম হয়ে গিয়েছে। ওপারে সোনা মসজিদ সীমান্ত বাণিজ্যপথ সংলগ্ন পানামা বন্দরের সামনে তুমুল বিক্ষোভ চলছে। ভারতীয় লরি বন্দর থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। অনেক লরিতে কাঁচামাল রয়েছে। প্রায় ৭০০ জন চালক-খালাসির নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। তাঁরা কোথায় রান্না করবেন, কী খাবেন, কতদিন এভাবে চলবে বুঝতে পারছি না। ওঁদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করার জন্য আমরা বিএসএফের কাছে আর্জি জানিয়েছি।"
[আরও পড়ুন: হাসিনার বাসভবনে তালিবানি কায়দায় লুটতরাজ, মুজিবকন্যার বিছানা দখল, মুরগি-পায়রা, ফ্রিজের মাছ চুরি]
এদিন পানামা বন্দর থেকে কোনও রকমে মহদিপুরে ফিরেছেন মাত্র একজন লরিচালক। নাম রহমান শেখ। তিনি বলেন, "লরি ছেড়ে পালিয়ে এসেছি। পানামা বন্দরে আমাদের লরিগুলি আটকে রয়েছে। কেউ মাল খালাস করতে পারেনি।আমি পাথর নিয়ে গিয়েছিলাম। আজকে পানামা বন্দরের সামনে হঠাৎ ইট, পাথর ছুড়ছে। কাকে মারছে, কেন মারছে, বুঝতে পারিনি। কোনও রকমে পালিয়ে এসেছি।"
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর আন্তর্জাতিক সীমান্ত বাণিজ্য পথে ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশে সেনা শাসন শুরু হয়েছে। মহদিপুর এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, "দুই দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য কতদিন বন্ধ থাকবে, তা নিয়ে ব্যবসায়ীরা চিন্তিত। মহদিপুর স্থলবন্দর দিয়েই প্রত্যহ প্রায় ১৮-২০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। বেশ কয়েক কোটি টাকার কাঁচামাল নষ্ট হবে। তিনদিন রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু সেই সরকারের পতন ঘটার পর পরিস্থিতি কোন্ দিকে মোড় নেয় কে জানে। আমরা ব্যবসায় ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হব। কাঁচাপণ্য সব নষ্ট হয়ে যাবে।"