সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শরণার্থী (Migrant) সেজে ঢুকে সটান জঙ্গি বনে যাওয়া। ফ্রান্সের (France) নোতরদাম গির্জার সামনে বৃহস্পতিবার তিনজনের মুণ্ডচ্ছেদ করা আততায়ী পরিচয় প্রকাশ্যে আনল সে দেশের সন্ত্রাসদমন শাখার পুলিশ। সেপ্টেম্বরে তিউনিশিয়া (Tunisia) থেকে শরণার্থীদের ভিড়ে মিশে জাহাজে করে সে প্রথমে পৌঁছয় ইটালির ল্যাম্পেদুসা দ্বীপে। এরপর বছর একুশের ছেলেটি রেড ক্রসের নথিপত্র সংগ্রহ করে। আর তাকে হাতিয়ার করেই ঢুকে পড়ে ফ্রান্সে। তারপর বৃহস্পতিবারের ঘটনা।
ব্রাহিম আউসাওই (Brahim Aouissaoui)। বছর একুশের তিউনিশীয় যুবক জেহাদে উদ্বুদ্ধ ছিল। ইসলাম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বড়সড় পরিকল্পনা করছিল। ফ্রান্সের সন্ত্রাসদমন শাখার তদন্তকারীদের অনুমান, পরিকল্পনা ছকেই তিউনিশিয়া থেকে শরণার্থী সেজে ইউরোপে প্রবেশ করে সে। যাতে সন্দেহভাজনদের তালিকায় না পড়তে হয়, তার জন্য সুকৌশলে রেড ক্রসের নথিও সংগ্রহ করে।
[আরও পড়ুন: ফ্রান্সে ফের ‘আল্লাহু আকবর’ বলে নাশকতার চেষ্টা! আততায়ীকে গুলি করে মারল পুলিশ]
এরপরই শুরু হয় অপারেশন। বৃহস্পতিবার ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিয়ে ফ্রান্সের নিস শহরে নোতরদাম গির্জার সামনে তিনজনের মুণ্ডচ্ছেদ করে সে। হামলার ধরন দেখে তা যে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদীদের কাজ, বুঝতে এতটুকুও অসুবিধা হয়নি ফরাসি প্রশাসনের। এই হামলার পর পুলিশের গুলিতে জখম হয়ে সংকটজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন ব্রাহিম। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে কোরান, দুটি ছুরি এবং একটি ফোন। পুলিশ জানাচ্ছে, পালটা প্রতিরোধের মুখে পুড়েও তার মুখ থেকে একটাই ধ্বনি শোনা যাচ্ছিল – ‘আল্লাহু আকবর’।
[আরও পড়ুন: ফ্রান্সের মানুষকে খুন করার অধিকার রয়েছে মুসলিমদের, বিস্ফোরক মাহাথির মহম্মদ]
তাহলে কি শরণার্থীদের বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামিক দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের জন্য দুয়ার খুলে দিয়ে নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে এনেছে ফ্রান্স-সহ ইউরোপের একাধিক দেশ? অথচ শরণার্থী আশ্রয় তো মানবিক উদ্যোগ। মানবিকতা দেখাতে গিয়ে সন্ত্রাসদীর্ণ হতে হচ্ছে ফ্রান্সকে? দিন কয়েক আগেও তো এ দেশেই ব্যঙ্গচিত্রের জন্য এক শিক্ষককে ঠিক একই কায়দায় খুন হতে হয়েছে। তার নেপথ্যেও মুসলিম সন্ত্রাসবাদীদের ছায়া রয়েছে বলে অনুমান প্রশাসনের। নিসের হামলা তার চেয়ে অনেকাংশেই বড়। যদিও বৃহস্পতিবার নিস পরিদর্শনের পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরঁ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ”কোনওরকম সন্ত্রাসবাদী হুমকি, কার্যকলাপের সামনে আত্মসমর্পণ করব না।” জঙ্গি ব্রাহিম আউসাওইয়ের হামলার ধরনে চমকে গিয়েছেন অনেকেই। বিশেষত সদ্য যুবকের তার ইস্পাতকঠিন মানসিকতা থেকেই স্পষ্ট যে জেহাদের মন্ত্রে সে কতখানি উদ্বুদ্ধ। তাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিনও।
এদিকে, নোতরদাম গির্জার সামনে হামলার ঘটনার পর স্বভাবতই ফ্রান্সের জাতীয় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে সর্বোচ্চ স্তরে। স্কুল, চার্চ-সহ যেখানে জনসমাগমের সম্ভাবনা, সেখানে ৩ থেকে ৭ হাজার নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন করেছে ম্যাকরঁ প্রশাসন। হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৪৭ বছর বয়সি এক ব্যক্তিকে বৃহস্পতিবার রাতে আটক করা হয়েছে। জঙ্গি ব্রাহিমের শারীরিক অবস্থার দিকে নজর রাখা হচ্ছে।