সুব্রত বিশ্বাস: একা ট্রেনযাত্রী মহিলাদের সুরক্ষায় আরপিএফ (RPF) ‘মেরি সহেলি’ বাহিনী তৈরি করেছে। বাহিনীর তৎপরতা ডিঙিয়ে ট্রেনের মধ্যে থেকেই এক মহিলাকে পাচারের চেষ্টার অভিযোগ উঠল এবার। শেষ পর্যন্ত শৌচাগার যাওয়ার নাম করে বেলুড় রেল পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে রক্ষা পেলেন মহিলা।
গত সোমবার পাঞ্জাবের (Punjab) চণ্ডীগড় থেকে কালকা মেলে চাপেন ওই মহিলা। শ্বশুরবাড়ি থেকে হাওড়ার বেলুড়ে বাপের বাড়ি আসছিলেন তিনি। মঙ্গলবার থেকে তাঁর মোবাইলটি বন্ধ ছিল। ফলে মঙ্গল ও বুধবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি পরিবার।স্বভাবতই শ্বশুরবাড়ির লোকজন চিন্তায় পড়েন।
বৃহস্পতিবার মহিলার মা অনিমা মুখোপাধ্যায় বেলুড় জিআরপি-র (GRP) দ্বারস্থ হন। এরপরই সক্রিয় হয় বেলুড় রেল পুলিশ। মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় শুরুতে কিছু করতে পারেনি রেল পুলিশ। তবে রাত ৯টা নাগাদ মহিলা ফোন খোলেন। এরপরেই বেলুড় জিআরপির ওসি (OC) ভিডিও কলে মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন। দেখতে পান চলন্ত ট্রেনে অত্যন্ত কম আলোর মধ্যে ওই মহিলা হাঁটছেন ও কাঁদছেন। ওসির নির্দেশ মতো মহিলা ট্রেনের শৌচালয়ে ঢুকে পড়েন। এবং জানান, তিনি কালকা মেল নয়, অন্য একটি ট্রেনে রয়েছেন বর্তমানে। কোথায় বা কোনদিকে ট্রেন যাচ্ছে তা জানেন না।
[আরও পড়ুন: এনজেপি স্টেশন থেকে পুলিশের জালে দুই মহিলা পাচারকারী, প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য]
পুলিশের নির্দেশেই পরের স্টেশনে নেমে পড়েন মহিলা। লোকেশন ট্র্যাক করে জিআরপি জানতে পারে মহিলা নাসিক স্টেশনে রয়েছেন। এরপর হাওড়াগামী মুম্বই-দুরন্ত এক্সপ্রেস নাসিক স্টেশনে পৌঁছালে তিনি বেলুড় পুলিশের কথামতো সেই ট্রেনে উঠে পড়েন। এক মহিলা যাত্রীর ফোনের মাধ্যমে বেলুড় ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রিয়া নামের ওই মহিলাকে রেল পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়, ট্রেনে কেউ যদি ওই মহিলাকে কোনওভাবে সঙ্গে নিতে চায় তবে যেন অন্য যাত্রী ও রেলকর্মীদের তিনি বিষয়টি জানান। এরপর পুলিশের তরফে যোগাযোগ করা হয় হাওড়াগামী মুম্বই-দুরন্ত এক্সপ্রেসের টিটি শুভজিত কোড়ার সঙ্গে। রেল পুলিশ শুভজিৎবাবুকে অনুরোধ করে, ওই মহিলাকে সুরক্ষিত ভাবে হাওড়া ফিরিয়া আনার জন্য।
শুক্রবার রাতে শুভজিতের তত্বাবধানে হাওড়ায় এসে পৌঁছান ওই মহিলা। বেলুড় রেল পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মহিলাকে থানায় নিয়ে আসে। পরে পরিবারের লোক এসে মহিলাকে নিয়ে যান।
[আরও পড়ুন: চাকরির টোপ, আগ্রার তিন মহিলাকে প্রকাশ্যে নিলামে তুলে পাচার]
রেল পুলিশ জানিয়েছে, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকায় ভাল ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি মহিলাকে। তবে তিনি যে কোনও চক্রের পাল্লায় পড়েছিলেন, তা বোঝা গিয়েছে। ট্রেন বদল করে মহিলাকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলেই পুলিশের ধারনা। শৌচালয়ে যাওয়ার নাম করে লুকিয়ে নাসিকে না নামলে চরম বিপদের সম্মুখীন হতেন তিনি।