কৃশানু মজুমদার: বাংলাদেশের কিংবদন্তি ফুটবলার তিনি। এই বঙ্গে লাল-হলুদ জার্সি পিঠে চাপিয়ে ঘাম-রক্ত ঝরিয়েছেন। তাঁর শ্বাস প্রশ্বাসে এখনও জড়িয়ে রয়েছে ইস্টবেঙ্গল। বাংলাদেশের জাতীয় দলের প্রাক্তন ফুটবলার শেখ মহম্মদ আসলাম অগ্নিগর্ভ দেশের অবস্থা দেখে ব্যথিত। চোখের সামনে কোটা আন্দোলন 'হাসিনা হঠাও' আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। মৃত্যু মিছিলের মধ্যে দেশ ছেড়েছেন হাসিনা। এই পরিস্থিতিতে গত তিনদিন ধরে গৃহবন্দি প্রাক্তন ফুটবলার। বাড়ি থেকে বেরোতে পারছেন না তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই তাঁর বাড়ি। চোখের সামনে দেখছেন ছাত্রদের আন্দোলন, কঠোর হাতে পুলিশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে আসলাম বলছিলেন, ''এই রক্তবর্ষণ, প্রাণঝরা দেখতে ভালো লাগে না কারওরই। অনেক শান্তিপূর্ণ উপায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতেই পারতেন হাসিনা। সে-ই করলেন, কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেল। হাসিনার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।''
[আরও পড়ুন: মোহনবাগানের পাঁচে সালাউদ্দিনের তিন, সবুজ-মেরুন ঝড়ে বেসামাল ইস্টার্ন রেল]
বাংলাদেশ অগ্নিগর্ভ। হাতুড়ির আঘাতে ভাঙল মুজিব মূর্তি। যে দৃশ্য দেখে শিহরিত গোটা বিশ্ব। কলকাতায় খেলে যাওয়া আসলাম মর্মাহত, ''অত্যন্ত দুঃখজনক দৃশ্য। যাঁর জন্য আজকের এই স্বাধীনতা, তাঁর মূর্তিই এভাবে আঘাতের পরে আঘাত করে ভেঙে ফেলা হল? হাজার হোক ফাদার অফ নেশন। যাঁকে যে সম্মান দেওয়ার দরকার, এই জাতি তাঁকে সেই সম্মান দেয়নি। অত্যন্ত বেদনাদায়ক দৃশ্য।''
একসময়ে রুমি, মুন্না এবং আসলাম ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলতে এসেছিলেন। লাল-হলুদের লনে থ্রি মাস্কেটিয়ার্সের ছবি এখনও ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের নস্ট্যালজিক করে তোলে। লাল-হলুদে খেলার সময়ে জর্জ টেলিগ্রাফের বিরুদ্ধে ম্যাচে মারাত্মক চোট পেয়েছিলেন আসলাম। সেই ম্যাচে ফ্লাইং হেডে গোল করেছিলেন তিনি। জর্জের গোলকিপার তাঁর থুতনিতে হাঁটু দিয়ে মেরে বসেন। সঙ্গে সঙ্গে সংজ্ঞা হারান তিনি। মাঠ থেকেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।
এহেন আসলাম বিলাপ করছেন, ''হাসিনা এক সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। আমরাও স্বপ্ন দেখছিলাম। সেই স্বপ্ন নিজেই ভেঙে দিয়ে চলে গেলেন। এরকম একটা দিন যে আসবে কোনও দিন ভাবিনি।''
অশান্ত দেশ। অথচ ক্রীড়াবিদরা চুপ। দেশের পরিস্থিতি নিয়ে মৌনব্রত নিয়েছেন শাকিব আল হাসান। সোশাল মিডিয়ায় বাংলাদেশের এক নম্বর অলরাউন্ডার ধিক্কৃত হচ্ছেন। আসলাম বলছেন, ''শাকিব তো পুরো চুপ। বাংলাদেশের মানুষ ওর উপর ক্ষুব্ধ। আমরা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি সালাউদ্দিনকে নিয়ে বহুবার অভিযোগ জানিয়েছিলাম হাসিনার কাছে। কিন্তু উনি নীরব থাকেন। এখন দেশ ছেড়েই চলে গেলেন। সব দিক থেকেই পরিস্থিতি অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস শেষ পর্যন্ত ডুবিয়ে দিল হাসিনাকে।''
যে স্বপ্নের জন্মভূমির সঙ্গে জড়িয়ে আসলামের অস্তিত্বের শিকড়, আজ সেই শিকড় ধরেই টান মারছে কারা? সরাসরি তাদের নাম করেননি তিনি। কিন্তু 'আমার সোনার বাংলা'-র এহেন পরিণতি, তার আগামী দিনের পথ ঘিরে প্রবল অনিশ্চয়তার মেঘ--সব মিলিয়ে হৃদয়ে রক্তক্ষরণের যন্ত্রণা অনুভব করছেন এককালের তারকা ফুটবলার।