রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এবং ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে ধর্মঘটের ডাক বিজেপির। বুধবার ১২ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক গেরুয়া শিবিরের। এদিকে, আগামিকাল বাংলাকে সচল রাখতে একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করেছে নবান্ন। তৃণমূলেরও হুঁশিয়ারি, "কাল কোনও ধর্মঘট হবে না।"
'পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজে'র ডাকে মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়। তা রুখতে একাধিক সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করে রাজ্য প্রশাসন। যদিও তা সত্ত্বেও মিছিল বের হয়। নবান্নে পৌঁছতে না পারায় দফায় দফায় ব্যারিকেড ভাঙেন আন্দোলনকারীরা। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, পাথর ছোড়া হয়। পালটা আন্দোলনকারীদের হঠাতে কোথাও কাঁদানে গ্যাস এবং জলকামানকে কাজে লাগানো হয়। তাতে বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী জখম হন। চোটাঘাত লাগে আন্দোলনকারীদেরও। পুলিশের ভূমিকার সমালোচনায় সরব বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বুধবার রাজ্যজুড়ে ১২ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দেন। বলেন, "শান্তিপূর্ণ মিছিলে কেন পুলিশ লাঠিচার্জ করল? কাঁদানে গ্যাস ছুড়ল? আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে কেমিক্যাল স্প্রে করা হয়। বাংলার ছাত্র সমাজকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী রক্তস্নান করাতে চাইছেন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আর পারবেন না আটকাতে। বাংলার মানুষের জবাব দেওয়ার সময় এসেছে।" আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে বঙ্গ বিজেপির পরবর্তী কর্মসূচিও ঘোষণা করেন সুকান্ত। বৃহস্পতিবার থেকে ধর্মতলায় লাগাতার ধরনা কর্মসূচির কথাও জানান। এছাড়া তিনি আরও বলেন, "নবান্ন অভিযানে আক্রান্তদের আইনি বা চিকিৎসা ক্ষেত্রে সহায়তা করা হবে। চালু করা হয়েছে হেল্পলাইনও। আগামী ৩০ আগস্ট রাজ্য মহিলা কমিশন ঘেরাও করা হবে। আগামী ২ সেপ্টেম্বর গোটা রাজ্যে জেলাশাসকের দপ্তর দিনভর ধরনা দেবেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। ৪ সেপ্টেম্বরের বদলে ৬ সেপ্টেম্বর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত দুঘণ্টার চাক্কা জ্যাম।"
[আরও পড়ুন: মোহনবাগান ম্যাচে থাকবে টিফো, অনুমতি দিল হাই কোর্ট]
যদিও ধর্মঘট যে কোনওভাবে মানা হবে না, তা সাফ জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, "ছাত্রদের প্রতি পূর্ণ সমবেদনা আছে। যে মর্মান্তিক অপরাধ হয়েছে তার সুবিচার সকলেই চাইছি। এখন তদন্তভার সিবিআইয়ের কাছে। সুবিচার চাওয়ার অধিকার সকলের আছে। আজ মহানগরী তথা বাংলাকে স্তব্ধ ও অচল করার যে প্রয়াস হচ্ছে, তা অসমর্থনযোগ্য। শারদোৎসবের বেচাকেনা শুরু হয়ে গিয়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য-সহ সকল জনক্ষেত্র বিপন্ন। আগামিকালের প্রস্তাবিত ধর্মঘটকে মেনে নেওয়া হবে না। তাই অংশ নেবেন না। সব কিছু চালু থাকবে। অফিস-কাছারিতে আসতে হবে সরকারি কর্মীদের। দোকানপাট খুলে রাখবেন। যানবাহন স্বাভাবিক রাখতে হবে। বেসরকারি বাস, মিনিবাস মালিকদের প্রতিও একই অনুজ্ঞা। বাংলাকে সর্বতভাবে সচল রাখতে হবে।"
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষও ধর্মঘটের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলেন, "আগামিকাল কোনও বন্ধ হবে না। মানুষ বাংলা বন্ধের ডাক ব্যর্থ করুন। চক্রান্ত ভেস্তে গিয়েছে বলে ধর্মঘটের ডাক। জনজীবন স্বাভাবিক রাখুন। এটা বাংলার বিরুদ্ধে চক্রান্ত।" নবান্ন অভিযানের চূড়ান্ত সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, "নবান্ন অভিযান নয়, সমাজবিরোধীদের অভিযান। এখন জাস্টিস নয়, চেয়ার চাই। বিজেপির মুখোশ খুলে গিয়েছে। বিজেপির কিছু গুন্ডা অরাজকতা করেছে। এর মধ্যে অনেক বাংলা বিরোধী অপশক্তি আছে। একটা বড় প্লট। পুলিশ সমস্ত আক্রমণের মুখে পড়ে, রক্তাক্ত হয়েও গোটা পুলিশবাহিনী সংযমের পরিচয় দিয়েছে। উত্তেজিত জনতাকে হঠাতে যা করার তাই করেছে।"