সুকুমার সরকার, ঢাকা: আগুন নিভেছে, কিন্তু চুড়িহাট্টার গলির দগদগে ক্ষতের জ্বালা কিছুতেই কমছে না৷ মৃত্যুপুরী ঢাকার চকবাজারে এখনও চলছে হারিয়ে যাওয়া আত্মীয়দের খোঁজ৷ উদ্ধারকাজ যত এগোচ্ছে ততই প্রকাশ্যে আসছে একের পর এক হৃদয় বিদারক তথ্য৷ এবারে একটি দোকানের ভিতর মিলল চার বন্ধুর মাথার খুলি৷ লেলিহান শিখায় দেহ পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে দেহ৷
[পুলওয়ামা ইস্যুতে প্রবল চাপে পাকিস্তান, এবার মুখ ফেরাল ‘বন্ধু’ চিন]
পরিবার সূত্রে খবর, চকবাজারে ব্যবসা করতেন চার বন্ধু মঞ্জুর, হীরা, আনোয়ার ও নাসির। এর মধ্যে চকবাজারে ওষুধের ব্যবসা ছিল মঞ্জুর। পাশেই ইমিটেশন গয়নার ব্যবসা বন্ধু হীরার, ব্যাগের ব্যবসা ছিল আনোয়ারের। আর নাসিরের ছিল প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবসা। প্রতিদিন কাজ শেষে রাতে অবসরের সময় হায়দার মেডিকোতে এসে বসতেন তাঁরা। একসঙ্গে কিছু সময় গল্প-গুজব করে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যেতেন। কিন্তু বুধবার রাতে আর নিজ ঘরে ফেলা হল না নোয়াখালির চার বন্ধুর। মঞ্জুরের ভাই লিটন জানান, তাঁর ভাইয়ের ফার্মেসির সামনেই একটি গাড়ির সিলিন্ডারে বিস্ফোরণ ঘটে। ধামাকা থেকে বাঁচতে মঞ্জু ও তাঁর তিন বন্ধু দোকানের ভেতর ঢুকে শাটার লাগিয়ে দেন। এরপর যখন আগুনের ভয়াবহতা বেড়ে যায় তখন আর তাঁরা সেখান থেকে বের হতে পারেনি। রাত ৩টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে হায়দার মেডিকোর ভেতরে পাওয়া যায় পোড়া চারটি মাথার খুলি। যেহেতু তাঁরা প্রতি রাতে এখানে আড্ডা দিতেন, তাই চারটি খুলিই বলে দিচ্ছে প্রত্যেকেই মৃত।
এদিকে ওই দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেঁড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১৷ আশঙ্কাজনক অবস্থায় অনেকেই মৃত্যুর সঙ্গে হাসপাতালে পাঞ্জা লড়ছেন৷ ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে৷ উল্লেখ্য, ঢাকার চকবাজারের রাজ্জাক ভবনে আবাসন রয়েছে৷ এছাড়াও রয়েছে রাসায়নিকের গুদাম৷ বুধবার রাত ১০.১০ মিনিট নাগাদ আচমকাই ওই বহুতলের নিচতলায় রাসায়নিকের গুদাম থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখেন স্থানীয়রা৷ সেখানে মজুত করা দাহ্য পদার্থ এবং গ্যাস সিলিন্ডারে বিস্ফোরণের জেরে মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ভয়াবহ রূপ নেয়৷ ওই গুদামের পাশেই রয়েছে ট্রান্সফর্মার৷ তাই ওই ট্রান্সফর্মার থেকে শর্ট সার্কিটের জেরেই আগুন লেগেছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ৷ এর আগে ২০১০ সালের জুনে নিমতলীতে একটি রাসায়নিকের গুদামে আগুন লেগে যায়৷ প্রাণ হারান ১২৪ জন৷ ওই অগ্নিকাণ্ডের পর আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক গুদাম তৈরির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল৷ তা সত্ত্বেও কীভাবে আবারও ঘিঞ্জি এলাকায় রাসায়নিকের গুদাম তৈরি হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷
[শুরু ঠান্ডা লড়াই! আমেরিকাকে মিসাইল হামলার হুমকি রাশিয়ার]
The post মৃত্যুতেও একসঙ্গে, দগ্ধ দোকান থেকে উদ্ধার চার বন্ধুর মাথার খুলি appeared first on Sangbad Pratidin.