সুকুমার সরকার, ঢাকা: পয়গম্বর বিতর্কে হিন্দু শিক্ষককে নিগ্রহের ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিল বাংলাদেশ হাই কোর্ট। কয়েকদিন আগে বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মাকে নিয়ে এক ছাত্রের করা পোস্টে উত্তাল হয়ে ওঠে নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজ। জুতোর মালা পরিয়ে চরম হেনস্তা করা হয় কলেজের অধ্যক্ষকে। সেই ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা দেশ।
জানা গিয়েছে, সোমবার শিক্ষককে হেনস্তার ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। নড়াইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে এই অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদিন বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দিয়েছেন। এই ঘটনায় ছয় সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট জমা করতে বলা হয়েছে। দ্রুত তদন্ত করে এহেন ঘটনার নেপথ্যে কে বা কারা রয়েছে তা খুঁজে প্রকৃত সত্য প্রকাশ্যে আনার নির্দেশ দিয়েছে দুই বিচারপতির বেঞ্চ। সূত্রের খবর, পুলিশি তদন্তে অনেকেই অনাস্থা প্রকাশ করায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
[আরও পড়ুন: ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ বাংলাদেশে হিন্দু নিপীড়নের ঘটনায় তদন্তের দাবি মানবাধিকার কমিশনের]
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুন ওই কলেজের একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিজের ফেসবুকে নূপুর শর্মাকে (Nupur Sharma) প্রণাম জানিয়ে ছবি-সহ একটি পোস্ট দেয়। এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হলে অধ্যক্ষ স্বপনকুমার বিশ্বাস কলেজের শিক্ষক, ওই শিক্ষার্থীর বাবা ও কলেজ পরিচালনা পরিষদের কয়েকজন সদস্যকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে শিক্ষার্থীকে তাঁদের সোপর্দ করা হয়। পুলিশ সদস্যরা ওই শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস থেকে নিয়ে যেতে চাইলে উত্তেজিত ছাত্র ও বহিরাগত কয়েকজন বাধা দেন। তখন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানানো হয়। কিন্তু কেউই কোনও ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ। পুলিশের সামনেই কলেজের অধ্যক্ষকে জুতোর মালা পরানো হয়। ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ায় তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
এদিকে, গত সপ্তাহেও নড়াইলে হিন্দুদের উপর আক্রমণ নেমে আসে। হজরত মহম্মদকে কটূক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট করার গুজব ছড়িয়ে শুক্রবার নড়াইলের সাহাপাড়ার বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। হামলায় বাদ যায়নি চারটি মন্দিরও। বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা কাণ্ডে পুলিশ রবিবার দুপুরে মামলা করেছে। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। হামলা-অগ্নিসংযোগ মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে দু’জন। তারা হচ্ছে দিঘলিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী রাসেল মৃধা (৪৫) ও চরমাউলি গ্রামের কবীর কাজী (২৮)।
এর আগে ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে গত শনিবার রাতে আকাশ সাহার বিরুদ্ধে মামলা করে দিঘলিয়া এলাকার বাসিন্দা সালাউদ্দিন কচি। শনিবার রাতেই খুলনা থেকে আকাশকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর আগে তার বাবাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। আকাশ সাহা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, কেউ তার ফেসবুক হ্যাক করে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। তবে আকাশের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন এলাকাবাসী। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিপেটা করে ও ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে।