সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশে (Bangladesh) এখন থেকে শুধুমাত্র আর বাবা নয়, মা-কেও অভিভাবক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ঐতিহাসিক রায় দিল বাংলাদেশের হাই কোর্ট। অর্থাৎ এখন মা-ও অভিভাবক হিসেবে আইনগত অধিকার লাভ করলেন। হাই কোর্টের (High Court) ওই রায়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফর্ম পূরণে সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মাকেও স্বীকৃতি দিয়ে রায় দিয়েছেন। এখন কারও বাবা না থাকলে, বিচ্ছেদ হলে কিংবা বাবার পরিচয় ব্যবহার করতে না চাইলে মা কিংবা আইনিভাবে অন্য কোনও অভিভাবকের নাম যুক্ত করা যাবে।
উল্লেখ্য, মা ও সন্তানকে কোনওরূপ স্বীকৃতি না দিয়ে বাবার চলে যাওয়ার পর ওই তরুণী তার মায়ের একার আদর, স্নেহে বড় হয়েছিলেন। এই ঘটনার যথাযথ অনুসন্ধানের উপর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এবং সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মায়ের স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠার দাবিতে ২০০৯ সালের ২ আগস্ট তিনটি মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন – বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এবং নারীপক্ষ যৌথভাবে জনস্বার্থে রিট পিটিশন দায়ের করে।
[আরও পড়ুন: বোনকে লাগাতার ধর্ষণ, রাখির দিনই অভিযুক্ত দাদাকে ২০ বছরের জেল, আক্ষেপ বিচারপতির]
বুধবার বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এর আগে হাই কোর্টের বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ের ১৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে বুধবার। এই রায়ের ফলে তিনজনের যে কোনও একজনের নাম দিয়ে ফর্ম পূরণ করা যাবে। সব ফর্ম সংশোধনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়-সহ সব শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে রায়ে। ফলে অভিভাবকের ঘরে বাবা অথবা মা (Mother)অথবা আইনগত অভিভাবক – এই তিন বিকল্পের যে কোনও একটি উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা ফর্ম পূরণ করতে পারবেন। মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার (এসএসসি) পর্যায়ে বাবার নাম না দিয়ে মায়ের নাম দিয়ে রেজিস্ট্রেশন ফর্ম পূরণের সুযোগ নিয়ে ১৪ বছর আগে করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা বলেন, এই রায়ের ফলে মাতা-পিতার পরিচয়হীন যে কোনও শিশুর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত হল।
‘বাবার পরিচয় নেই, বন্ধ হল মেয়ের লেখাপড়া’ – এই শিরোনামে ২০০৭ সালের ২৮ মার্চ ঢাকার (Dhaka) জাতীয় দৈনিকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে ব্লাস্ট, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও নারীপক্ষ ২০০৯ সালে ওই রিট করে। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৩ আগস্ট রুল-সহ আদেশ দেন হাই কোর্ট। আইনজীবী আয়শা আক্তার বলেন, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসির (মাধ্যমিক) ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ফর্ম পূরণে বাবার নাম দিতে না পারায় এক শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন হয়নি। তখন শিক্ষার্থীর অভিভাবক হিসেবে বাবা এবং মায়ের নাম লেখা বাধ্যতামূলক ছিল। বৈষম্যমূলক এই বিধান চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়েছিল। অভিভাবক হিসেবে এখনও শিক্ষাক্ষেত্রের প্রতিটি স্তরে বাবা এবং মায়ের নাম লিখতে হয়। রায়ে হাই কোর্ট বলেন, বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবকের নাম উল্লেখ করে রেজিস্ট্রেশন-সহ শিক্ষাক্ষেত্রে সব ফর্ম পূরণ করা যাবে।
[আরও পড়ুন: প্রথম মহিলা CEO এবং চেয়ারপার্সন পেল রেল বোর্ড, নজির জয়া ভার্মা সিনহার]
শিক্ষা মন্ত্রণালয়-সহ সব শিক্ষা বোর্ডের প্রতি এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবক (Gurdian)হিসেবে যে কোনও একটি পরিচয় উল্লেখ করে ফর্ম পূরণ করা যাবে। রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত বলেন, যখন রিটটি করা হয়, তখন শিক্ষাক্ষেত্রে অভিভাবকের ঘরে তথ্য হিসেবে বাবার নাম লেখা বাধ্যতামূলক ছিল। এরপর মায়ের নাম উল্লেখ করতে হতো। ফরমে অভিভাবক হিসেবে শুধু বাবার নাম উল্লেখ করা অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহৃত সব ফর্ম পূরণে অভিভাবকের ঘরে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবক শব্দ বাধ্যতামূলকভাবে যুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।আইনজীবীরা বলছেন, ঐতিহাসিক এই রায়ের ফলে এখন থেকে বাবার নামের পাশাপাশি আরও দুটি অপশন যুক্ত হলো। এতে করে কেউ চাইলে বাবার পরিচয় ব্যবহার না করেও ফরমপূরণের সময় মা কিংবা আইনিভাবে বৈধ অভিভাবকের নাম লিখতে পারবেন। পরে ২০২১ সালের ৬ জুন ব্লাস্ট আবেদনকারীদের পক্ষে একটি সম্পূরক হলফনামা আদালতে দাখিল করে।