সুকুমার সরকার, ঢাকা: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে ভারতে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তাতে প্রতিবেশীদের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বাংলাদেশকে ভারতের এক নম্বর বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন একথা। সংসদের দুই কক্ষে নাগরিকত্ব সংশোধিত বিল পাশ হওয়ার পর ভারতের রাষ্ট্রপতি বিলে সিলমোহর দেন। আইনে পরিণত হয় বিল। তারপর অসম-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক জায়গায় শুরু হয় অশান্তি। ঘোরাল পরিস্থিতিতে ভারত সফর বাতিল করেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী।
রবিবার সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোমেন বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে বিক্ষোভের মাঝে আশা প্রকাশ করে বলেন, পরিস্থিতি শান্ত হবে এবং প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ এটার প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের জেরে ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর এমন তীব্র বিক্ষোভ এবং বিরোধিতার মুখে প্রথমবারের মতো পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নতুন আইনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পার্সি এবং জৈন ধর্মাবলম্বী ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন। তবে এ আইনে মুসলিম শরণার্থীদের ব্যাপারে একই ধরনের বিধান রাখা হয়নি।
সমালোচকরা বলেছেন, ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ভারতে বিভাজন তৈরি করতে এ নতুন নাগরিকত্ব আইন তৈরি করেছে, যা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে। বিতর্কিত এ আইনে মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্বের ব্যাপারে কিছু না বলায় ভারতজুড়ে তীব্র প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। তবে বিক্ষোভের দাবানল বেশি ছড়িয়ে পড়েছে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, নাগরিকত্বের সুযোগ থেকে মুসলিমদের বাদ দেওয়ায় এ আইন অসাংবিধানিক এবং বিভাজনমূলক। শনিবার পর্যন্ত ভারতের চলমান এ বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ২৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। শুধু উত্তরপ্রদেশেই ১৮ জনের প্রাণ গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: ভারতকে কড়া বার্তা বাংলাদেশের, নদী সংক্রান্ত বৈঠক বাতিল করল ঢাকা]
ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভের ব্যাপারে আবদুল মোমেন বলেন, ‘সিএএ এবং এনআরসি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভারত সরকার আমাদের আশ্বস্ত করেছে যে, এটা তাদের অভ্যন্তরীণ ইস্যু। তারা আইনি এবং অন্যান্য কারণে এটির বাস্তবায়ন করছে।’ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলার সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আশ্বস্ত করে বলেছেন, কোনও অবস্থাতেই এটি বাংলাদেশের ক্ষতি করবে না। ভারতের প্রতি বাংলাদেশের আস্থা আছে বলে জানিয়েছেন আবদুল মোমেন।
বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ভারতের ১ নম্বর বন্ধু। সুতরাং ভারতে যদি কোনও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, তাহলে প্রতিবেশীদের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছিল, তখন এটি অনেক দেশের ওপর প্রভাব ফেলেছে। কারণ আমরা গ্লোবাল ওয়ার্ল্ডে বসবাস করছি। যে কারণে আমরা আশঙ্কা করছি যে, ভারতে যদি কোনও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, তাহলে এটি প্রতিবেশীদের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এটা উদ্বেগজনক। আমরা আশা করছি, পরিস্থিতি শান্ত হবে এবং ভারত এটা থেকে মুক্ত হবে। এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা আমাদের কোনও বিষয় নয়। এটা তাদের ফয়সলা করা উচিত।’
একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, আবদুল মোমেন বলেন, ভারতে অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশিদের তালিকা দিতে নয়াদিল্লির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। যদি কোনও বাংলাদেশি অবৈধভাবে ভারতে বসবাস করে থাকে, তাহলে তাদের প্রত্যাবাসন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। গত ১২ ডিসেম্বর ভারত সফরে যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করেন বিদেশমন্ত্রী। শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং বিজয় দিবসের সঙ্গে ব্যস্ত সফরসূচি মিলে যাওয়ায় তা বাতিল করা হয়েছে। তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী আবদুল মোমেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারতের পার্লামেন্টে বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিল পাশের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লি সফর বাতিল করেছেন। বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নিপীড়নের শিকার হয়েছে বলে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর করা মন্তব্যকে ‘মিথ্যা’ অভিহিত করার পরদিন নয়াদিল্লি সফর বাতিল করেন আবদুল মোমেন। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক বলছে, সূচি ব্যস্ততার কারণে সফর বাতিলের কথা ভারতকে জানিয়েছেন আবদুল মোমেন।
The post অস্থিরতার জন্য পড়শি দেশের উপর প্রভাব পড়তে পারে, CAA ইস্যুতে মন্তব্য হাসিনার মন্ত্রীর appeared first on Sangbad Pratidin.