সুকুমার সরকার, ঢাকা: কলকাতায় চিকিৎসা করাতে এসে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন বাংলাদেশের ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম। তাঁর হত্যার মাস্টারমাইন্ড মার্কিন প্রবাসী আক্তারুজ্জামান শাহিন। তিনি ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র শহিদুল ইসলাম সেলিমের ছোটভাই। ঘটনা জানাজানি হতেই শুক্রবার রানাঘাট সীমান্ত সংলগ্ন শাহিনের কোটচাঁদপুর পৌরসভার পাশে শাহিনের পৈতৃক বাড়ির সামনে ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভে শামিল হন এলাকাবাসী। কিন্তু শাহিনকে শাস্তি দেওয়া কি ততটাই সহজ? প্রবল প্রতাপশালী এই ব্যক্তির অন্ধকার জগতে বিচরণ একেবারে অবাধ। যাঁর হাত ধরে সেই জগতে পা রাখা, সেই আনোয়ারুলকেই শেষমেশ খুন করে পার পাবে কি শাহিন? এই প্রশ্ন উঠছে। তার অগাধ সম্পত্তি নিয়েও তৈরি হয়েছে রহস্য। একইসঙ্গে প্রশ্ন উঠছে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত শিলাস্তি রহমানকে নিয়েও। সুন্দরী শিলাস্তি মডেল হতে গিয়ে অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়েন। শাহিনের বান্ধবী হওয়াই তাঁর কাল হয়।
বাংলাদেশের এমপি হত্যায় গ্রেপ্তার মূল অভিযুক্ত শাহিনের বান্ধবী শিলাস্তি।
শাহিন ১৯৮৭ সালে চট্টগ্রামে মেরিন আকাডেমিতে পড়াশোনা করাকালীন আমেরিকা (USA) চলে যায়। ঢাকায় ফিরে বরিশালের এক মেয়েকে বিয়ে করে। শাহিনের একটি ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তারা এখন আমেরিকায় বসবাস করে। আমেরিকায় পাড়ি জমালেও নিয়মিত বাংলাদেশে (Bangladesh) আসত শাহিন। সেসময় বাল্যবন্ধু আনোয়ারুলের হাত ধরে চোরাচালানে যুক্ত হওয়া আর অবৈধ ব্যবসার সূত্রেই বাংলাদেশ ও ভারতে শাহিন গড়ে তোলেন বিশাল সাম্রাজ্য। কোটচাঁদপুরে শাহিনের গ্রামে ৩০ বিঘা জমির উপর বিশাল বাগানবাড়ি ও রিসর্ট। সুউচ্চ প্রাচীরঘেরা, সিসি ক্যামেরার বেষ্টনী। পাহারায় রয়েছে বিদেশি বেশ কয়েকটি কুকুর। বাড়িতে প্রায়ই অতিথি হয়ে আসতেন সরকারি উচ্চপদস্থ আধিকারিক, বড় বড় ব্যবসায়ী ও নায়িকারা। কোটচাঁদপুর থানায় যে পুলিশ আধিকারিকই (Police Officer) আসুক না কেন, শাহিন তাঁকে 'খুশি' করতে তৎপর। এসব কারণে শাহিন এলাকার 'ডন' হিসেবে পরিচিত হয়।
[আরও পড়ুন: চোখ রাঙাচ্ছে ‘রেমাল’, ‘জলভরা মেঘ পাশ কাটিয়ে এলাম’, বললেন মমতা]
এদিকে, এমপি আনোয়ারুল আজিমের হত্যায় গ্রেপ্তার হওয়া তরুণী শিলাস্তি রহমান চেয়েছিল মডেল হতে। শিলাস্তির গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুরে। তবে সে বড় হয়েছেন পুরাতন ঢাকায়। মডেল (Model)হওয়ার উচ্চাকাঙ্খা নিয়ে বিত্তশালীদের ডেরায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল তার। সেভাবেই আক্তারুজ্জামান শাহিনের খপ্পরে পড়ে এবং চলে যায় অন্ধকার জগতে। মার্কিন প্রবাসী শাহিন দেশে এলেই ঘুরে বেড়াত তার সঙ্গে। শাহিনের ফ্ল্যাটে বিভিন্ন পার্টিতে দেখা যেত শিলাস্তিকে। তার আরেক নাম সেলে নিস্কি।
[আরও পড়ুন: রাজভবনে শ্লীলতাহানি ইস্যু: আধিকারিকদের বিরুদ্ধে তদন্তে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ হাই কোর্টের]
কলকতায় (Kolkata)এমপি আনোয়ারুল খুন হওয়ার পর মাস্টারমাইন্ড শাহিনের বান্ধবী হিসেবে নাম আসে এই শিলাস্তি রহমানের। আনোয়ারুলকে খুনের পর সোজা ঢাকার (Dhaka)বিমান ধরে কলকাতা থেকে ফেরে সে। বিমানবন্দর থেকে চলে যায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়, শাহিনের অভিজাত ফ্ল্যাটে। এমপিকে খুন করে সফল হওয়ায় ওই রাতেই শাহিন সেখানে পার্টির আয়োজন করে। তবে এসব করেও পুলিশের নাগাল এড়াতে পারেনি তারা। ঘটনা জানাজানি হতেই দুই হত্যাকারীর সঙ্গে শিলাস্তিকেও গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার আদালতে সে কেঁদে ফেলে। ওকালতনামায় শিলাস্তি রহমানের সই নিতে গেলে সে আইনজীবীকে বলে, ‘‘আমি কেন সই করব? আমি কি আসামি নাকি? এসব বিষয়ে কিছু জানি না। আমি শুধু ফ্ল্যাটে ছিলাম। কিছু করিনি।’’