নন্দিতা রায়, ঢাকা: পদ্মা সেতু-পথেই বাংলাদেশের ভোট বৈতরণী পার হতে চান মুজিব-কন্যা শেখ হাসিনা। ১৫ বছর আগে ক্ষমতায় আসার আগে পর্যন্ত বর্ষায় দুরন্ত পদ্মার বুকে যে সেতু তৈরি করা যেতে পারে, উপরে গাড়ি নিচে রেল চলাচল করতে পারে তা শুধু বাংলাদেশের মানুষ কেন অনেকেই যে স্বপ্নেও ভাবেননি, সে কথা বললে অত্যুক্তি হবে না। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে হাসিনার দল আওয়ামি লিগের প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার এই পদ্মা সেতু। সঙ্গে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ করে তৃতীয় টার্মিনাল, ঢাকা শহরের সম্প্রসারণের মতো হাসিনার উন্নয়ন যজ্ঞের তাস আওয়ামি লিগের পকেটে রয়েছে। আবার সেই সঙ্গে স্বাভাবিক নিয়মেই রয়েছে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়াও। ১৫ বছর একটানা ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও হাসিনা সরকার কেন মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে পারছে না তা নিয়ে প্রশ্ন দেশের সব মহলেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামের ঠেলায় নাভিশ্বাস উঠছে নিম্ন মধ্যবিত্ত, গরিবদের।
ঢাকা শহরের ট্যাক্সি চালক পঁচিশ বছর বয়সি মেহেদি হাসানের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। বর্তমান সরকারের আমলে জিনিসপত্রের দামে আগুন লেগে গিয়েছে বলে হাহুতাশ করলেন লাগাতার। বললেন, দু’ বছর আগে সরষের তেলের যা দাম ছিল এখন তা দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গিয়েছে। সবজি থেকে মাছ, সব জিনিসের যা দাম ,হাত দেওয়া মুশকিল। সর্যের তেল তো বটেই এখন সয়াবিন তেলে হাত দিতে গেলেও ছ্যাঁকা লাগছে। এত কিছু বলার পর মেহেদির নিপাট উত্তর হাসিনা আপা ছাড়া আবার কে প্রধানমন্ত্রী হবে। আর কেউ আছে নাকি। উল্টে পাল্টা প্রশ্ন, আপনি বলুন আর কেউ আছে! আওয়ামি লিগ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া থাকলেও হাসিনার জনপ্রিয়তা যে অটুট তা বুঝতে অসুবিধা হল না।
[আরও পড়ুন: বায়ুদূষণের নিরিখে দিল্লিকে টপকাল ঢাকা, ভয় ধরাচ্ছে বাতাসের বিষ!]
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা চরমে পদ্মাপারে। প্রধান বিরোধী দল খালেদা জিয়ার বিএনপি (BNP) নির্বাচনে লড়বে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। বর্জনে অর্জন রাস্তায় হাঁটতে চাইছে তারা। একটানা দু’দিনের হরতাল তথা বন্ধ ডাকার পরে বুধবার থেকে দু’দিন অবরোধের ডাকও দিয়েছে। বাংলাদেশ জুড়েই রাজধানী ঢাকা-সহ বহু জায়গাতেই যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিত্যদিনই সামনে আসছে। চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই বিএনপির হরতালের প্রভাব অবশ্য ঢাকা শহর বা তার আশপাশে চোখে পড়েনি। তবে, অগ্নিসংযোগের ভয়ে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা ছিল তুলনামূলকভাবে কমই। আবার নির্বাচনে যাব না বলার পরে বিএনপিপি-র অন্দরেও মতবিভেদ তৈরি হয়েছে। দলের বহু নেতা, প্রাক্তন মন্ত্রী-সাংসদরা তৃণমূল বিএনপি নামে নির্বাচনের ময়দানে নামতে চান।
অন্যদিকে আওয়ামি লিগের প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যে সেখানে যেন হিড়িক পড়ে গিয়েছে। কোটি কোটি টাকার মনোনয়নপত্র ইতিমধ্যেই বিক্রিও হয়ে গিয়েছে। মনোনয়নপত্র প্রতি ৫০ হাজার টাকা খরচ করে একাধিক আসনের জন্যও মনোনয়নপত্র কিনছেন বহুজনই। বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক শাকিবই তিন জায়গার জন্য মনোনয়নপত্র কিনেছেন। মনোনয়নপত্র কিনেছেন আরেক ক্রিকেটার মাশরাফিও। সাংবাদিক থেকে শুরু করে নামকরা ব্যবসায়ীরাও মনোনয়নপত্র কিনেছেন ইতিমধ্যেই। নায়ক ফিরদৌস, আলমগির, নায়িকা অপু বিশ্বাসরা মনোনয়নপত্র কেনার ব্যাপারে আওয়ামি লিগের দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন বলেও
জানা গিয়েছে।