সুকুমার সরকার, ঢাকা: শিক্ষিত বেকার মানুষের যন্ত্রণা যে কী অসহনীয়, তা বারবারই নানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে প্রকাশ্যে এসেছে। কখনও চাকরি না পাওয়ার অবসাদে কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। কেউ বা ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যোগ্যতার চেয়ে অনেক ছোটখাটো কাজই করছেন মুখ বুজে। তবে বাংলাদেশের (Bangladesh) এক শিক্ষিত যুবক বেকারত্বের গ্লানি মুছতে, ধৈর্য সহকারের যে পথে হাঁটলেন, তা যতটা প্রশংসাযোগ্য, ঠিক ততটাই তির্যক এবং করুণার। পোস্টার ছাপিয়ে তাঁর আবেদন, ‘শুধুমাত্র দু’বেলা (সকাল ও দুপুর) ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই।’ এই পোস্টারে রয়েছে তাঁর যোগ্যতা এবং কোথায় তিনি পড়াতে চান, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। সাদা পাতায় কালো অক্ষরে আপাত সাদামাটা বিজ্ঞাপনী বার্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল (Viral)। অনেকেই বলছেন, চোখে আঙুল দিয়ে বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রের বেহাল দশা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট করে দিলেন যুবক।
দু’বেলা ভাতের বিনিময়ে যিনি পড়াতে চেয়ে আবেদন করেছেন, তাঁর নাম মহম্মদ আলমগীর কবীর। বগুড়ার বাসিন্দা আলমগীর সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর (MA)ডিগ্রি পেয়েছেন বছর দুই আগে। শিক্ষাগত যোগ্যতায় এতটা উপরে ওঠার পরও চাকরি দূর অস্ত, যোগ্যতা অনুযায়ী কোনও কাজই পাননি আলমগীর। এমনকী বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় বসার জন্য যেটুকু খরচ করতে হয়, সেটুকু করার মতো সামর্থ্যও এই মুহূর্তে নেই তাঁর। আর সেই কারণেই টিউশন খুঁজছেন আলমগীর। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অঙ্ক বাদ দিয়ে সমস্ত বিষয় পড়ানোর যোগ্যতা রাখেন এই যুবক। তিনি নিজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের (Political Science)ছাত্র ছিলেন।
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশে মেজর সিনহা হত্যায় দোষী পুলিশ আধিকারিককে মৃত্যুদণ্ড আদালতের]
তবে টিউশনের বিনিময়ে টাকা চান না আলমগীর। তাঁর আবেদন – দু’বেলা ভাত পেলেই তিনি পড়ানোয় রাজি। কারণ, এখন ভাত জোটানোই তাঁর পক্ষে দুরূহ হয়ে উঠেছে। কতটা বিপাকে পড়লে তবে একজন শিক্ষিত যুবক এহেন বিজ্ঞাপন দিতে পারেন, সংবেদনশীল মানুষমাত্রই টের পাচ্ছেন। আলমগীরের এই বিজ্ঞাপনী বার্তা এখন ভাইরাল। আলমগীর জানাচ্ছেন, ”ভাতের কষ্ট থেকেই এই বিজ্ঞাপন দিয়েছি। একটি বাড়িতে পড়াই। সেখানে সন্ধেবেলা জলখাবার দিত। আমি বলেছি, এবার থেকে রাতে ভাত খাওয়াতে।”
[আরও পড়ুন: যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত বাংলাদেশি কূটনীতিক, সেক্স চ্যাট-ভিডিও ফাঁস হতেই ঢাকায় তলব]
এই মুহূর্তে টিউশন পড়িয়ে আলমগীরের মাসিক আয় দেড় হাজার টাকা। এখন তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা হলে এই টাকা তাঁর সঞ্চয় হবে। তা দিয়ে তিনি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবেন। তা নিশ্চিত করতে সাদামাটা সহজ ভাষায় বিজ্ঞাপন ছাপিয়েছেন। নেটদুনিয়ায় তা ভাইরাল। কিন্তু তাতে কি আলমগীরের প্রচেষ্টা পূরণ হবে? এটাই এখন বড় প্রশ্ন।