সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মৌলবাদীদের অন্ধ ক্রোধের আগুনে জ্বলেপুড়ে মাত্র ৩০ বছরেই জীবন শেষ হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের ময়মনসিংহের মোকামিয়াকান্দা গ্রামের বাসিন্দা, কারখানার শ্রমিক দীপুচন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ড সে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে এপার বাংলাতেও ছড়িয়ে দিয়েছে প্রতিবাদের আগুন। পদ্মাপাড়ে সংখ্যালঘু হিন্দু যুবকের খুন এখন আন্তর্জাতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বাড়ির রোজগেরে সদস্যকে এভাবে আচমকা হারিয়ে গ্রামের পরিবারের কী অবস্থা? সেই খোঁজ রেখেছে ক'জন? স্থানীয় প্রশাসন অবশ্য দীপুর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। স্ত্রী মেঘনাকে চাকরির আশ্বাস দিয়েছে। সেটাই কি এত বড় ক্ষততে প্রলেপ? দেড় বছরের মেয়েকে কোলে নিয়ে দীপুর ২১ বছরের বিধবা স্ত্রীর প্রশ্ন, ''এই ছোট্ট মেয়েকে রেখে চলে গিয়েছে দীপু, এখন আমাদের কী হবে? সরকার দেখুক।''
গত ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশে হাসিনা বিরোধী যুব নেতা, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মারা যান। সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই ধর্মীয় অশান্তির আগুন জ্বলে ওঠে গোটা দেশে। তারই বলি হতে হয় নিরীহ হিন্দু শ্রমিক দীপুচন্দ্র দাসকে। কারখানার বাইরে তাঁকে পিটিয়ে, পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। তার আগে-পরে এমন কোনও আবহাওয়া ছিল না বলেই জানাচ্ছে পরিবার। সব স্বাভাবিক ছিল। মঙ্গলবার মোকামিয়াকান্দা গ্রামে দীপুর শেষকৃত্যে দেড় বছরের মেয়েকে কোলে নিয়ে সেসব কথাই বলছিলেন স্ত্রী মেঘনারানি।
তাঁর বয়ান অনুযায়ী, ১৫ ডিসেম্বর রাত ২টো নাগাদ গ্রামের বাড়িতে ফিরেছিলেন দীপু। স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটিয়ে ১৭ ডিসেম্বর ভোরে আবার চলে যান তারকান্দায়, নিজের কাজের জায়গায়। ঘটনার দিন অর্থাৎ ১৮ ডিসেম্বর বিকেল ৫টার সময়ও দীপুর সঙ্গে কথা হয় মেঘনারানির। তিনি বলেন, ‘‘ও মেয়ের খবর নিছিল, আমরা কে কী করছি, সব খবর নেয়। তাঁর সঙ্গে কারখানায় কোনও ঝামেলা আছে, এমন কথা কখনও বলেনি। কিন্তু আমার স্বামী হত্যার শিকার হলো কোনও অপরাধ ছাড়াই।’’ দীপুর বাবা রবিচন্দ্র দাসও শ্রমিক। বড় ছেলেকে হারিয়ে তিনি আক্ষেপের সুরে বলছেন, ‘‘আমার ছেলে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষ পড়ার পর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর গার্মেন্টসে কাজ করত। সেই আমার সংসারের হাল ধরেছিল। কিন্তু আমার ছেলেটারে শেষ কইরা দিছে।’’
