সুকুমার সরকার, ঢাকা: দুমাস পেরিয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক পালাবদলের পর এখন বাংলাদেশে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। প্রশ্ন উঠছে, কবে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন? কয়েকদিন আগেই ৮ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন গড়েছে ইউনুস সরকার। কিন্তু নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু জানানো হয়নি। দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের রাষ্ট্র সংস্কারের উপর বেশি করে জোর দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস। কয়েকদিন আগেই তিনি বলেছিলেন, রাষ্ট্র সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য ও ভোটার তালিকা প্রস্তুত হয়ে গেলে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে। এবার অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানালেন, আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন হতে পারে।
ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন শেখ হাসিনা। আপাতত তিনি রয়েছেন ভারতে। ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ছাত্র-জনতার দাবি মেনে এই সরকারের প্রধান করা হয় ইউনুসকে। নির্বাচন নিয়ে একাধিকবার প্রশ্ন করা হয়েছে তাঁকে। প্রত্যেকবারই তিনি দেশের সংস্কারের উপর জোর দিয়েছেন। তবে কতদিনে সেই সংস্কার সম্পন্ন হবে তা নিয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট সময়সীমা জানাননি। যা নিয়ে বিএনপি জানায়, প্রয়োজনীয় সংস্কারে তারা সরকারকে সময় দিতে প্রস্তুত। কিন্তু সেটা অনির্দিষ্টকালের জন্য নয়। দ্রুত নির্বাচনের দাবি তুলছে একাধিক দল। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামি লিগও জানিয়েছে যে, দ্রুত নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সরকার গঠন হওয়া উচিত। বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও বলেছিলেন, আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু ভোট নিয়ে ক্রমশ চাপ বাড়ছে ইউনুস সরকারের উপরে।
এই পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মুখ খুললেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। বৃহস্পতিবার রাতে একটি বেসরকারি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন হতে পারে। গতকালই বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১৮ নভেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে ফিরে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাঁকে। এনিয়ে বন্দি বিনিময় চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, "এই চুক্তি অনুযায়ী ভারতের উচিত শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়া। এই চুক্তি সঠিকভাবে মানলে তারা হাসিনাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য।" এছাড়া ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিলের বিষয়টিও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যা বয়কট করে বিএনপি, জামাতের মতো সমমনা দলগুলো। কিন্তু বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিলেন শেখ হাসিনা। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়েছিল আওয়ামি লিগ। কিন্তু ৭ মাসের মধ্যেই ছন্দপতন ঘটে। ব্যাপক জনরোষের মুখে গদি হারান মুজিবকন্যা। এখন হাসিনার অবর্তমানে ক্ষমতায় ফেরার লড়াইয়ে শামিল বিএনপি। ময়দানে রয়েছে জামাত, হেফাজতে ইসলামির মতো মৌলবাদী দলও। কিন্তু এই মুহূর্তে নির্বাচনকে গুরুত্ব না দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার নিয়েই চিন্তিত ইউনুস সরকার। এমনই দাবি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর। ফলে আগামী এক বছরে কী হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ? এর উত্তর রয়েছে সময়ের গর্ভেই।