সুকুমার সরকার, ঢাকা: আওয়ামি লিগকে ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন হল। আর এই নির্বাচনে বড় জয় পেলেন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাদিক কায়েম। ১৪ হাজার ৪২ টি ভোট পেয়ে ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার সকাল ৮ টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ভোট চলে বিকেল ৪টে পর্যন্ত। বুধবার সকালে সাড়ে ৮টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ডাকসু নির্বাচনের ফল ঘোষণা শুরু হয়। দেখা যায়, ছাত্র শিবিরের সাদিক কায়েম ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়ে ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
বেশ বড় ব্যবধানে তিনি পিছনে ফেলেছেন অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ছাত্র সংগঠন আবিদুল ইসলাম খানকে। আবিদুল ৫ হাজার ৭০৮টি ভোট পেয়েছেন। ভিপি পদে নির্দল প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্রনেতা উমামা ফাতেমা। তিনি ভোট পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৮৯ টি। আরেক নির্দল প্রার্থী শামীম হোসেন পেয়েছেন ৩ হাজার ৮৮৪ ভোট। অন্যদিকে এজিএস পদে ১১ হাজার ৭৭২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্র শিবিরের নেতা মুহা. মহিউদ্দীন খান। এই পদে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ছাত্রদলের এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ এবং বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের এজিএস প্রার্থী আশরেফা খাতুন। তাঁরা যথাক্রমে ভোট পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৪ টি এবং ৯০০ টি।
গত বছর বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছিল এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কেবল গত বছরের আন্দোলনই নয়, ভাষা আন্দোলন থেকে নানা রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের সাক্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাভাবিক ভাবেই ওয়াকিবহাল মহলের নজর ছিল সে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দিকে। বিশেষ করে হাসিনা সরকারের পতনের পর সেদেশে ছিল প্রথম এই নির্বাচন। স্বভাবতই পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নিচ্ছে সেদিকে বিশেষ নজর ছিল সবপক্ষের।
যদিও এই নির্বাচন চলাকালীন কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচন চলাকালীন তা বয়কটের ডাক দেন নির্দল শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী উমামা ফাতেমা। বুধবার গভীর রাতে সোশাল মিডিয়ায় নির্বাচন বয়কটের ডাক দেন। উমামা লেখেন, ‘বয়কট! বয়কট! ডাকসু বর্জন করলাম। সম্পূর্ণ নির্লজ্জ কারচুপির নির্বাচন। ৫ আগস্টের পরে জাতিকে লজ্জা উপহার দিল ঢাবি প্রশাসন। শিবির পালিত প্রশাসন।’এর আগে ডাকসু নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগেই তা প্রত্যাখ্যান করেন ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান। বুধবার গভীর রাতে নিজের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ কথা জানান তিনি।
ওই পোস্টে আবিদুল ইসলাম লেখেন, ‘পরিকল্পিত কারচুপির এই ফলাফল দুপুরের পরপরই অনুমান করেছি। নিজেদের মতো করে সংখ্যা বসিয়ে নিন। এই পরিকল্পিত প্রহসন প্রত্যাখ্যান করলাম।'' তবে এই কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফল সামনে আসতেই একাংশের মতে, যে বিশ্ববিদ্যালয় একটা সময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে, সেখানে এবার কট্টরপন্থীদের প্রভাব বাড়ল। হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশজুড়েই যে কট্টরপন্থী ইসলামি সংগঠনগুলির বাড় বাড়ন্ত চোখে পড়ছে, অভ্যুত্থানের পর প্রথম নির্বাচনেই সেটার প্রত্যক্ষ প্রভাব চোখে পড়ল। একটা সময় যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উদারপন্থী রাজনীতির পীঠস্থান ছিল, সেটাই এখন কট্টরপন্থীদের আঁতুড়ঘরে পরিণত হচ্ছে, ডাকসুর এই ফলাফল বাংলাদেশের সেই বদলেরও প্রমাণ।
