সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হাসিনা বিদায়ের পর বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। বার বার এই অভিযোগ উঠলেও অস্বীকার করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা। সেই টালামাটাল আবহাওয়ায় এবার বন্ধ হয়ে গেল বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী লালন মেলা। যা সংকীর্ণ জাতি-ধর্মের ঊর্ধ্বে মানুষের মিলন মেলা হিসাবে পরিচিত। ওপার বাংলার সংবাদমাধ্যম 'প্রথম আলো' জানিয়েছে, মূলত স্থানীয় মুসল্লি ও বিভিন্ন ইসলামি রাজনৈতিক দলের আপত্তির মুখে ‘মহতী সাধুসঙ্গ ও লালন মেলা’ বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।
প্রতিবারের মতোই সদর উপজেলার মধ্য নরসিংহপুর এলাকায় ‘মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমি’ প্রাঙ্গণে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল শুক্র ও শনিবার। এই উপলক্ষে কুষ্টিয়া-সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাধু-গুরু ও লালন-ভক্তরা নারায়ণগঞ্জে পৌঁছেও গিয়েছিলেন। যদিও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কার কথা বলে মেলার অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। আচমকা মেলা বাতিল হওয়ায় বিপাকে পড়েন গোটা দেশ থেকে আসা লালন-ভক্তরা। এমন ঘটনায় ক্ষোভে ফেলে পড়েন নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক কর্মীরাও।
যদিও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক জানান, লালন মেলা আয়োজন নিয়ে স্থানীয় মসজিদের ইমাম, মুসল্লি ও বিভিন্ন ইসলামি দলের তীব্র আপত্তি আছে। এই অবস্থায় মেলা হলেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এই আশঙ্কায় মেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
এদিকে জানা গিয়েছে, গত ১৫ নভেম্বর মেলা বন্ধের দাবিতে তৌহিদি জনতার ব্যানারে মধ্য নরসিংহপুর এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি করেন হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা। মেলাকে 'ইমানবিধ্বংসী' আখ্যা দেওয়া হয়। পালটা ২০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করেন মুক্তিধাম আশ্রমের লোকজন ও নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা। যদিও স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও ইসলামি দলের আপত্তির মুখে মেলা বন্ধের নির্দেশ দেয় প্রশাসন। উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে একের পর এক মাজার ভাঙা এবং বাউল-সুফিদের উপরে হামলার পরে এ বার নারায়ণগঞ্জে লালন মেলা বন্ধ করা হল।
মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ফকির শাহ জালাল জানান, প্রকাশ্যে তাঁকে এবং বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সাধু-গুরু-ভক্তদের হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, "আমরা তো এখানে মারামারি করার জন্য আসিনি। আমরা তো শান্তি চাই।"